কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে রাঙ্গুনিয়ায় দাখিল পরীক্ষা দিতে পারেনি ৩ শিক্ষার্থী

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ শিলক তৈয়বীয়া নুরিয়া ছত্তারিয়া দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে ৩ শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষা দিতে পারেনি বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার রফিকুল ইসলাম, অফিস সহকারী রেজাউল করিম ও শিক্ষিকা কামরুন নাহার সুমির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ওই ৩শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবর গত ২৬ জুন লিখিত অভিযোগ করেছেন। ২০২৩ সালে দাখিল পরীক্ষা দিতে না পারা ওই ৩ শিক্ষার্থীরা হলেন আয়শা ছিদ্দিকা, তারমিন আকতার ও নুপুর আকতার। নিয়মিত ক্লাস ও টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে দাখিল পরীক্ষার্থীদের বিশেষ কোচিং করেও পরীক্ষা দিতে না পারায় ওই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন থেকে ১বছর নষ্ট হয়ে গেল।

পরীক্ষা বঞ্চিত তিন শিক্ষার্থীর অভিভাবক কর্তৃক দায়েরকৃত অভিযোগসূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তিনজনই উপজেলার দক্ষিণ শিলক তৈয়বীয়া নুরিয়া ছত্তারিয়া দাখিল মাদ্রাসার ২০২৩ সালের দাখিল পরীক্ষার্থী ছিলেন। তাঁরা নিয়মিত মাদ্রাসায় উপস্থিতসহ টেস্ট পরীক্ষা ও বিশেষ কোচিং ক্লাশ করেও এবার দাখিল পরীক্ষা দিতে পারেনি। পরীক্ষা দিতে না পারার বিষয়ে বারবার মাদ্রাসায় যোগাযোগ করেও কোনো সদুত্তর পায়নি বলেও অভিভাবকরা অভিযোগ করেন।

অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অফিস সহকারী রেজাউল করিম (অভিযুক্ত) বলেন, “সার্ভারের সমস্যার কারণে সেসময় ওই ৩ শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন হয়নি। রেজিষ্ট্রেশনের জন্য শ্রেণি শিক্ষক তালিকা দেয় আর কম্পিউটারের শিক্ষক আরাফাত কাজ করে। এসব তাদের দায়িত্ব। সেসময় শ্রেণি শিক্ষিক ছিলেন কামরুন্নাহার সুমি। তবে এবার ওই ৩ শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা দিবে, মাঝখানে তাদের ১ বছর লস হলো। আর এটা আমার বিষয় নয়। মাদ্রাসার প্রধান (ভারপ্রাপ্ত সুপার) আছে না, আমি তো অর্ডারের মালিক। আমাকেতো কর্তৃপক্ষ অর্ডার দিছে, যেখানে পাঠায় সেখানে চলে যাই বলেও জানান তিনি।

আরেক অভিযুক্ত মাদ্রাসার শিক্ষিকা কামরুন্নাহার সুমি (অভিযুক্ত) বলেন, “এটা কর্তৃপক্ষের বিষয়। রেজিষ্ট্রেশন হয় নবম শ্রেণিতে। তখন শ্রেণি শিক্ষক ছিলেন ছাবের স্যার। রেজিষ্ট্রেশনের কাজ করেন অফিস সহকারী রেজাউল করিম ও কম্পিউটার অপারেটর আরাফাত। আমার মাতৃকালীন ছুটি শেষে পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষার শেষের দিকে ছাবের স্যার বললেন ওই ৩জনের রেজিষ্ট্রেশনে সমস্যা হয়েছে পরীক্ষা দিতে পারবেনা। পরে অফিস সহকারী রেজাউল করিম বলেন, সেটা অনলাইনের ভুল। তখন তাকে বললাম এটা আপনারা বুঝবেন। গার্ডিয়ানকে আপনারা বুঝান, আমাদের বুঝিয়ে লাভ নাই”।

ঘটে যাওয়া এমন গাফিলতি ও দায়িত্ব অবহেলা সম্পর্কে জানার জন্য মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার রফিকুল ইসলামের (অভিযুক্ত) মুঠোফোনে গত ১সপ্তাহ ধরে ফোন দিয়েও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসা সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ বলেন, “ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা আমাকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তলব করলে এটা ধামাচাপা দিতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে অফিস সহকারীসহ সংশ্লিষ্টরা। তবে অভিভাবকরা ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ করেছেন শুনেছি। এর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই। আশা করছি ইউএনও স্যার এর যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাউকেই না জানিয়ে ২০২৪ সালের দাখিল পরীক্ষার জন্য ওই ৩ শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে উপজেলার বেতাগী রহমানিয়া জামে উল উলুম দাখিল মাদ্রাসা নামক প্রতিষ্ঠান থেকে। আর এটি করেছেন অভিযুক্ত অফিস সহকারী রেজাউল করিম।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বেতাগী রহমানিয়া জামে উল উলুম দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী মো. সাইফুদ্দীন বলেন, “গত বছর দক্ষিণ শিলক তৈয়বীয়া নুরিয়া ছত্তারিয়া দাখিল মাদ্রাসায় যে ৩শিক্ষার্থীর রেজিষ্ট্রেশন হয়নি এবার তাদেরকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে রেজিষ্ট্রেশন করানো হয়েছে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের সাথে ডিল করেছেন ওই মাদ্রাসার অফিস সহকারী রেজাউল করিম”।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমি জানি না। ইউএনও সাহেব আজকে আমাকে ডেকেছেন। এটা তদন্ত করব। অভিযোগের ১০ দিন পরেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরে ভাই ১০দিন যাই হোক অফিসের একটা প্রসেস আছে না, বন্ধ গেছে না। আপনার এগুলো বুঝতে হবে।

এদিকে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে এ বিষয়ে এখনও কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী।

ভুক্তভোগী আয়শা ছিদ্দিকা বলেন, “গত বছর অক্টোবরে টেস্ট পরীক্ষা শেষে ডিসেম্বর থেকে কোচিং করি। কিন্তু জানুয়ারিতে ফরম পূরণের টাকা দিতে গেলে জমা নেননি অফিস সহকারী রেজাউল করিম। নিয়মিত হয়ে আমরা পরীক্ষা দিতে পারিনি কিন্তু ক্লাস না করে ও টেস্ট পরীক্ষা না দিয়েও কফিল ও দৌলত নামের দু’জন পরীক্ষা দিয়েছে। আমি চাই এর সাথে জড়িতদের শাস্তি হোক”।

আয়শা ছিদ্দিকার মা মুন্নি আকতার বলেন, “মাদ্রাসার শিক্ষকদের অনেক বলেছি তবুও হয়নি। আমার মেয়ের ১বছর নষ্ট করেছে তাঁরা। তাই ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ করেছি। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই”।

আরও পড়ুন