নিয়ন মতিয়ুল :: পরিবেশগত সংকট আর বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয়টি গত শতক থেকেই বেশি আলোচনায়। স্কুলবেলায় বিজ্ঞানের বইয়ে হিমালয় আর দুই মেরুর বরফ গলে যাওয়াসহ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বিপদ সম্পর্কে পড়েছি। ২০৩০-৩৫ সালের মধ্যেই যে দেশের উপকূলীয় বড় অংশ সাগরে তলিয়ে যাবে বিজ্ঞানীদের সে সতর্কবার্তাও জেনেছি।
তবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যে চিত্র চোখে পড়েছে তাতে হতবাক হয়ে গেছি। অধিকার, সাম্যবাদ, রাজনৈতিক বিরোধ আর সংঘাতে ক্যাম্পাসগুলো এতটাই রক্তাক্ত ছিল যে পরিবেশভাবনা পালিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। আজকের রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, তারকা সাংবাদিকদের বেশিরভাগই তখন ছিলেন আন্দোলনের অগ্রভাগে। অস্ত্রের ঝনঝনানি আর জ্বালাও পোড়াওয়ে মত্ত থাকায় পরিবেশ, বৈশ্বিক উষ্ণতার ভাবনা মাথায় আসার কথা নয়।
প্রায় দুই দশক আগে কোনো এক দুর্ভাগ্যের জেরে পেশায় আসার পর থেকে দেখেছি সাংবাদিকতায় শুধুই ‘জ্বালাও পোড়াও’ এর মাহাত্ম অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ। কয়েক বছর আগে শুধু পরিবেশ আর জলবায়ু বিষয়ে রিপোর্টিং করতেই ‘আনকোড়া’ উপাধি মেনে এক হাউজে ঢুকেছিলাম। সেখানে ‘খড়কুটো’ অ্যাসাইমেন্টের ঝড়ে ‘জলবায়ু’, ‘পরিবেশ’ টিকতেই পারে না! দিনব্যাপী অ্যাসাইনমেন্ট করে এসে সিঙ্গেল কলামে কয়েক লাইনের নিউজ ট্রিটমেন্ট!
গত ৪ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে দেশের প্রথিতযশা সম্পাদকদের সংগঠন ‘সম্পাদক পরিষদ’ আয়োজিত আলোচনা সভার শিরোনাম ‘গ্রহের জন্য গণমাধ্যম: পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় সাংবাদিকতা’ দেখে আনন্দে হতবাক হয়েছি। আহা! সত্যিই যদি গ্রহের জন্য সাংবাদিকতা হতো! জলবায়ু, পরিবেশমূর্খতা, রাজনৈতিক মতাদর্শের সংকীর্ণতা, প্রতিহিংসা, বিভাজন দূর হতো।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম আজও গণমাধ্যম হয়ে ওঠেনি। মননে, মগজে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এখন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ, কর্মকাণ্ডের প্রচারমাধ্যম। গণমাধ্যম হয়ে ওঠার যে দৃষ্টিভঙ্গি বা সৃজনশীলতা দরকার সেটাও হয়নি। এখনও রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনৈতিক দলের পার্থক্য করতে পারছি না। নেতা আর আমলার কর্তব্যবোধ নিরূপণ করতে পারি না। এমন প্রেক্ষাপটে ‘গ্রহের জন্য গণমাধ্যম’ ভাবনা সত্যিই দারুণ আশাবাদী করে তুলবে নতুন প্রজন্মকে।
লেখক : নিয়ন মতিয়ুল, গণমাধ্যমকর্মী।
আরও পড়ুন ::
অ-রাজনীতিকে ‘মহিমান্বিত’ করছে গণমাধ্যম
গণমাধ্যমের পুঁজি ‘দুর্নিবার কৌতুহল’
মূলধারায় ‘মাল্টিমিডিয়া’ উন্মাদনা
উদ্বোধনী লিড : কেন কৌতুহল বাড়ায়
সাংবাদিকদের কেন একইসঙ্গে ‘বস্তিজীবন’ আর ‘রাজসিক জীবন?