জিয়াউল কবির সুমন :: দুটি টিভি চ্যনেলের সাময়িক সম্প্রচার নিষেধাজ্ঞার ১১ বছর পূর্ণ হলো আজ। দিগন্ত ও ইসলামী টিভির ওপর ২০১৩ সালের ৬ মে ভোর ৪ টা থেকে ৪.২৬ মিনিটে সম্প্রচার নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। বিটিআরসির সাবেক কর্মকর্তা কর্ণেল সাজ্জাদ এসে জানান, সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে সাময়িক সম্প্রচার নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো। ব্যস, হাতে লেখা একটি কাগজে এ কথাটুকুর গুরুত্ব তখন অনুধাবন করা না গেলেও ১১ বছর পর বোঝা যায়, সাময়িক শব্দের অর্থ। যেমনভাবে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের পর তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে খুনীদের গ্রেফতার করা হবে, কত শত ৪৮ ঘন্টা পেরিয়ে গেলো, সাগর-রুনির হত্যাকরীরাও গ্রেফতার হয়নি, আর এ দুটি চ্যানেলের সাময়িক নিষেধাজ্ঞার মেয়াদও ফুরোয়নি।
এর আগে এপ্রিল মাসে জনপ্রিয় দৈনিক আমার দেশ বন্ধ হয়। তারও আগে ২০১০ সালের ২৭ এপ্রিল আরেক জনপ্রিয় টিভি- চ্যানেল ওয়ান বন্ধ হয়। ২০১৩ সালে এ দুটি চ্যানেল বন্ধের সময়কালীন তথ্যমন্ত্রী টিভিতে সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে,বলে লাগাতার মিথ্যাচার করেছেন। মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছেন, হাজার খানেক গণমাধ্যমকর্মী রাতারাতি কর্মহীন হয়ে পড়েন। পরবর্তী কয়েকমাসের মধ্যে অন্তত চারজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
সেই থেকে বাকী গণমাধ্যমগুলো তার চরিত্র পুরোপুরি পাল্টে ফেলে। গণমাধ্যমে স্ব-নিয়ন্ত্রণ চালু হয়। রিপোর্টার একবার, আবার সম্পাদনায় আরেকবার সেলফ সেন্সরশিপ হয় বলে কর্মীদের কাছ থেকে জেনেছি। গণমাধ্যম কর্মীদের অনেকে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অধিক পরিমাণে অংশগ্রহণ, অসংখ্য বিট, আঞ্চলিক সংগঠন চালু, কর্পোরেট সাংবাদিকতা, বিদেশ ট্যুর, লাভজনক সাংবাদিকতা, এসবের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন, ফলে অনেকেই গত এক দশকে প্লট, ফ্ল্যাট, গাড়ী, বাড়ীর মালিক হয়ে সাংবাদিকতাকে উপভোগ করছেন। কিন্তু এ সময়টিতে গণমাধ্যম হারিয়েছে তার আত্মমর্যাদা, বিশ্ব গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের অবস্থান গত বছরের চেয়ে আরো দুই ধাপ নেমে ১৬৫ তে অবস্থান করছে।
গণমাধ্যম কর্মীদেরকে-অনেকে তাচ্ছিল্য করে সাংঘাতিক নামেও ডাকতে ইতস্ততাবোধ করেননা। অথচ সাংবাদিকতা হওয়ার কথা ছিল প্রো-পিপল, হয়ে গেছে প্রচার মাধ্যম। হারিয়েছে পাঠক/দর্শকের আস্থা-বিশ্বাস। গত এক দশকে প্রত্যেকটি সংবাদপত্রের সার্কুলেশন কমেছে। এর আরেকটি কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপকতা, ইউটিউবারদের মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি, দলীয় পরিচয়ের ব্যক্তিদের অনলাইনের অনুমোদন দেয়া ইত্যাদি।
সময় এসেছে, ভাববার! গণমাধ্যমের মর্যাদা ও গণমাধ্যম কর্মীর আত্মসম্মান বোধ নিয়ে কাজ করার। একতরফা গণমাধ্যম ও একদলীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে শক্তিশালী গণমাধ্যম ও শক্ত বিরোধীদল গঠনে পেশাজীবীদের পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। এতে গণতন্ত্র যেমন সুসংগঠিত হবে, তেমনি গণমানুষের কন্ঠস্বর ও হয়ে উঠবে গণমাধ্যম।।
লেখক :: জিয়াউল কবির সুমন, সাবেক সহ-সভাপতি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।