রাউজানে হৃদয় খুনের জের : গণপিটুনিতে মারমা যুবক নিহত

অবশেষে চট্টগ্রামের রাউজান থেকে অপহরণ হওয়া স্কুল শিক্ষার্থী শিবলী সাদিক হৃদয়ের (২০) খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অপহরণের ১৩ দিন পর পুলিশ তার খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে। অপহরণে খুন হওয়া স্কুল শিক্ষার্থী হৃদয় উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের মো. শফিক ড্রাইভারের ছেলে। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোর হতে পুলিশের অভিযান রাউজানের কদলপুর-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তবর্তী দলুছড়ি পাহাড়ি এলাকার বিভিন্নস্থান থেকে তার খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এদিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হৃদয়ের মরদেহ উদ্ধারের পর অভিযুক্ত উমংচিং মারমাকে নিয়ে ফেরার পথে উত্তেজিত জনতার রোষানলে পড়ে। তারা ওই যুবককে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি।

জানা যায়, শিবলী সাদিক হৃদয় পড়াশোনার পাশাপাশি কদলপুরে একটি মুরগির খামারে চাকরি করতো। সে কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ২৮ আগস্ট রাতে ওই মুরগির খামার থেকে দিবাগত রাতে তাকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের দুই দিন পর অপহরণকারীরা তার পরিবারে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

পরিবার অপহরণকারীদের সাথে কথা বলে ২ লাখ টাকায় রাজি হয়। কয়েকদিন পর অপহৃত হৃদয়ের বাবা শফি বান্দরবান এলাকায় ডুলাপাড়া নামক স্থানে গিয়ে দুইজন লোকের হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দেন। কিন্তু তারা হৃদয়কে মুক্তি দেয়নি। অপহরণকারীরা ছেলেকে মুক্তি না দেওয়ায় তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে আসামিদের নাম উল্লেখ করা মামলা দায়ের করা হয় রাউজান থানায়।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, হৃদয় যে মুরগির খামারে চাকরি করতো সেখানে সবাই ছিলেন চাকমা যুবক। মুরগির ফার্মে চাকরি করা চাকমা যুবকদের দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল হৃদয়ের। গত দুই মাস আগে খামারে চাকমা যুবকদের সাথে হৃদয়ের ঝগড়া হয়। পরে মুরগির খামারের মালিকরা বিষয়টি মিমাংসা করে দেন।

হৃদয়ের মা নাহিদা আকতার বলেন, ‘অপহরণের পর তার স্বামীর মোবাইলে একটি ফোন আসে। ফোনটি ছিল তার ছেলে হৃদয়ের। ফোনে হৃদয় বলে, ‘মা আমাকে রাত ১২টার দিকে কিছু মানুষ আটক করে নিয়ে আসে। আমি প্রায় ১২ ঘণ্টার মতো গাড়িতে ছিলাম। আপনারা ফোন দিয়েন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফোন দিলে আমাকে মেরে ফেলবে বলছে ওরা। এরপর আবার আমার মোবাইলে কল দিয়ে বলে ছেলেকে পেতে হলে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে। না হলে তোর ছেলেকে জীবিত আর পাবি না। পরে তাদের বুঝিয়ে আমরা ২ লাখ টাকায় রাজি করাই। তাদের কথা মতো টাকা দিলেও তারা আমার সন্তানকে ফেরত দেয়নি। আমার স্বামী টাকা দিয়ে তাদের পায়ে পর্যন্ত পড়েন।’

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘অপহরণের ঘটনায় গত কয়েকদিন আগে আমরা দুই জনকে আটক করে আদালতে পাঠালে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গতকাল রবিবার এ ঘটনায় আমরা উমংচিং মারমা নামে আরও এক জনকে আটক করি। আজ (সোমবার) ভোরে তার দেয়া তথ্যমতে রাউজানের কদলপুর-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তবর্তী দলুছড়ি পাহাড়ি এলাকায় অভিযানে যাই।’

আব্দুল্লাহ আল হারুন আরও বলেন, ‘অভিযানে তার দেখানো বিভিন্ন জায়গা থেকে অপহৃত যুবক হৃদয়ের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করি। লাশ উদ্ধার করে ফেরার পথে পঞ্চপাড়া গ্রামে পাঁচ শতাধিক নারীসহ স্থানীয়রা আমাদের পথরোধ করেন। উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি থেকে আসামি উমংচিং মারমাকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আরও পড়ুন