চোরাগাপ্তা হামলায় তারা দিনদিন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে সরকার হটানো যায় না। তারা (বিএনপি) অবরোধের নাম করে বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়ে মানুষকে আহত করছে। পুলিশ ও সাংবাদিকের ওপর হামলা করছে। বিএনপির এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা যুগ যুগ ধরে দেখে আসছি। এসব পথ অনুসরণ করায় তারা সন্ত্রাসী দল হিসেবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
রবিবার (১২ নভেম্বর) বিকালে নরসিংদীর মুসলেহ উদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তারা (বিএনপি) পুলিশ হাসপাতালে আক্রমণ করে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়ে দিয়েছে। কেউ কি হাসপাতালে আক্রমণ করে? তারেক জিয়ার চা…রা এসব হামলা করছে। জনসভায় উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যদি বাসে আগুন দিতে যায় তাকে ধরে সেই আগুনে ফেলে দেবেন। সে বুঝুক আগুনের কত জ্বালা।
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক পিরজাদা মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় জনসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান প্রমুখ।
এর আগে নবনির্মিত ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা (জিপিইউএফএফ) উদ্বোধন পরবর্তী নাগরিক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত অগ্নিসন্ত্রাস বা মানবসৃষ্ট সকল দুর্যোগ অতিক্রম করেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। শুধু সাহসের সঙ্গে যেকোনো পরিস্থিতি দেশবাসীকে মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমি জানিনা তাদের (বিএনপি) চেতনা কবে ফিরবে বা কবে দেশের মানুষের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ আসবে?
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে কৃষকরা সারের জন্য আন্দোলন করেছিল। গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জ এবং টাঙ্গাইলের ঘাটাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় সার চাওয়ায় কৃষকদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। তখনই কথা দিয়েছিলাম কৃষকদের সারের জন্য ছুটতে হবে না। সার কৃষকের ঘরে পৌঁছে যাবে। এ জন্য ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর যত কষ্টই হোক সারের কোনো ঘাটতি আমরা হতে দেইনি।
এ সময় চাপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর গুলি চালিয়ে ২০ জনকে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর সেখানে বেসরকারি খাতে একটি এবং সরকারিভাবেও একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য ২০১৩ সালে বিএনপি আজকের মতন অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়। কর্মরত প্রকৌশলী সেই আগুনে পুড়ে মারা যায়। এভাবেই দেশের সম্পদ সে সময় একে একে তারা ধ্বংস করেছে। এখন আবারও তখনকার মত অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে। তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি চক্রান্তে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। তখন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল। আর আমি তা না করে বলেছিলাম- আমাদের কী পরিমাণ গ্যাসের রিজার্ভ আছে তার অ্যাসেসমেন্ট করে দিতে, তারপর সিদ্ধান্ত নেব। কেননা দেশের সম্পদ আগে দেশের মানুষের কাজে লাগাতে হবে।
সেদিন সেই চক্রান্তে সায় দিলে আজকে এই সার কারখানা করা যেতো না। তিনি বলেন, দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় যেতে হবে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে সেই দৈন্যতায় ভোগে না। ক্ষমতা তার জন্য বড় কিছু নয়, দেশের মানুষের কল্যাণই বড়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ তে আমরা যখন সরকারে এসে জাতীয় সংসদে দেশকে বিএনপি’র রেখে যাওয়া খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন দেশে পরিণত করার ঘোষণা দিই তখন খালেদা জিয়া ও তার সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো নয় তাহলে বিদেশি সাহায্য পাওয়া যাবেনা।
তিনি বলেন, আমাদের বন্ধু প্রতীম দেশ আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে। এটি অত্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর। যেখানে পরিবেশের কোনো দূষণ হবেনা। পরিবেশ দূষণকারী কার্বন ডাইঅক্সাইডকেও কাজে লাগিয়ে ১০ শতাংশ বেশি ইউরিয়া সার উৎপাদন করা হবে। এটি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি সার আমদানি হ্রাস করবে এবং কর্মসংস্থানও বাড়াবে।
প্রধানমন্ত্রী সার্বিক খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহবান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, দেশবাসীকে বলবো এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। খাদ্যের জন্য যেন কারো কাছে হাত পাততে না হয়।
এ সময় দেশের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যা কিছু করেছি তা জনগণের স্বার্থে এবং কল্যাণেই করেছি। আর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন একটা সুন্দর জীবন পায় সেই লক্ষ্য নিয়েই করেছি। আমাদের সরকার দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছে। আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট। যা আর কখনো পিছিয়ে যাবে না।
নবনির্মিত ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানাটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম এবং বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন সার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পরিবেশবান্ধব, জ্বালানি সাশ্রয়ী ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর। যা দেশের মোট ইউরিয়া চাহিদার ৩৫ শতাংশ। এর মাধ্যমে ইউরিয়া সার আমদানিতে বছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বাংলাদেশের।