চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। অন্যদিকে, ৬৪ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে দায়িত্ব করা হচ্ছে। সহকারী থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি কার্যক্রম জটিলতায় আটকে রয়েছে ৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শুধু তা-ই নয়, উপজেলায় সহকারী শিক্ষকের ১শত ১০টি পদও ফাঁকা। ১৩ জন প্রধান শিক্ষক পদমর্যাদা নিয়ে মামলা চলছে। সব মিলিয়ে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা খাতের হযবরল অবস্থা। দ্রুত এ সমস্যা নিরসন প্রয়োজন বলে মনে করছেন শিক্ষক-অভিভাবকসহ সবাই।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ২শত ২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে শিক্ষা অফিসার সহ সর্বমোট ৯টি পদ থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ৪ জন কর্মকর্তা। বাকি ৫টি পদ শূন্য রয়েছে।
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক-শূন্য বিদ্যালয়গুলোতে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সিনিয়র শিক্ষকরা। এতে একদিকে স্কুল পরিচালনা, অন্যদিকে প্রশাসনিক কার্যক্রম পালন শেষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। ফলে ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের পাঠকার্যক্রম। অভিভাবকরা বলছেন, একজন মানুষের পক্ষে এত কাজ সামলানো খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার।
অভিভাবকদের ভাষ্যমতে, শিক্ষার্থীদের ভিত শক্ত করার স্তর হলো প্রাথমিক। সেখানে যদি কোনো ত্রুটি থাকে তবে সেই শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক এবং ক্ষেত্রবিশেষে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ভোগান্তিতে পড়ে। অভিভাবকরা ফটিকছড়ির প্রাথমিক খাতে দ্রুত পর্যাপ্ত প্রধান ও সহকারী শিক্ষক পদায়নের অনুরোধ জানিয়েছেন। অভিভাবকরা আরও বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক-শূন্যতার কারণে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান ধরে রাখা সম্ভব হয় না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের পাঠদানের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ, শ্রেণিকক্ষ পর্যবেক্ষণসহ সভা-সেমিনারে অংশ নিতে হয়। ফলে পাঠদানে তারা পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না।’
শিক্ষকরা বলছেন, ‘সহকারী শিক্ষক না থাকলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককেও দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি অনেক ক্লাস নিতে হয় তাদের। আবার প্রধান শিক্ষক না থাকলে সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান শিক্ষকের দাপ্তরিক যে কাজগুলো রয়েছে তাতে এখন আমাদের অনেক বেশি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এতে দাপ্তরিক কাজ করতে গিয়ে ক্লাস করানো যায় না ঠিকমতো। যার ফল ভোগ করছে খুদে শিক্ষার্থীরা।’
কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ থাকায় সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের কাঁধে বাড়তি দায়িত্ব চেপেছে। অথচ দায়িত্ব পালনকালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা সরকারি তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না।
উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বেশ কয়েকজন শিক্ষক স
তির নেতা জানায়, ‘৭-৮ বছর ধরে সহকারী থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি না দেওয়ায় এমন সংকট দেখা দিয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফটিকছড়ি ( ভারপ্রাপ্ত) উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ হাসানুল কবির বলেন, ‘যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে সেগুলোর তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই সহকারী শিক্ষকের ঘাটতিও পূরণ হবে।’