ফটিকছড়ির দক্ষিণ পাইন্দংয়ে কালভার্ট আছে, সড়ক নাই

ফটিকছড়ি উপজেলার দক্ষিণ পাইন্দং অবহেলিত গ্রাম। একটি রাস্তার কারণে শত-শত মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবুল ভৌমিক বাড়ির সংযোগ রাস্তাটি দেখে মনে হয় জমিনের ছোট আইল। এ মাটির রাস্তায় একটি কালভার্ট হলেও হয়নি ব্রিক সলিং নতুন রাস্তা। ভুক্তভোগী মানুষ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন।
সরকারের কাছে তারা দ্রুত নতুন ব্রিক সলিং রাস্তা নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

গত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সেতু কালভার্ট প্রকল্পে মুক্তিযোদ্ধা বাবুল ভৌমিক বাড়ির সংযোগ রাস্তায় পাইন্দং খালের উপর ১টি কালভার্ট নির্মিত হয়েছে। ওই কালভার্টের উত্তর ও দক্ষিণ উভয় দিকতে দিকে গ্রামের ভেতরে চলে গেছে এ রাস্তা। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১ কিলোমিটার। কালভার্টি নির্মিত হওয়ার পরে প্রায় ৯ বছর অতিবাহিত হলেও উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি মুক্তিযোদ্ধা বাবুল ভৌমিক বাড়ির সংযোগ রাস্তায়। রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ চলাচল করে।

উপজেলা দক্ষিণ পাইন্দং গ্রামের দুলা বাপের বাড়ি, ননাই বাপের বাড়ি, জহুর মেম্বর এর বাড়ি, আলী হোসেনের বাড়ি ও ধর পাড়া এলাকায় অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়তই যাতায়াত করেন ওই রাস্তা দিয়ে। এ গ্রামে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, মাদরাসা, বাজার, বড় মসজিদ, ঈদগাঁ মাঠ ও কবরস্থান।

সরেজমিনে দেখা যায়, দক্ষিণ পাইন্দং গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা বাবুল ভৌমিক বাড়ির সংযোগ গ্রামীণ রাস্তাটির যানবাহন চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে গেছে। রাস্তার প্রস্থ অত্যন্ত ছোট জমিনের আইলের মত। এই রাস্তা দিয়ে ৩ জন লোক একসাথে হেঁটে যেতে পারে না। কালভার্টের উত্তর-দক্ষিণ উভয় পাশে রাস্তাটি অনেক সরু হয়েছে। এ রাস্তা দিয়ে ভ্যান, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, সিএনজি ও মোটরসাইকেলে যাতায়াত করা যায় না। দক্ষিণ পাইন্দং গ্রামের বাসিন্দারা ব্যক্তিগত ভ্যান, মোটরসাইকেল ও সিএনজি গাড়ি অন্যত্র রেখে প্রায় ১ কিলোমিটার মাটির রাস্তা পায়ে হেঁটে বাড়ি যান। বৃষ্টি হলে এ রাস্তা ব্যবহারকারী জনসাধারণ পাইয়ের জুতা হাতে নিয়ে চলাফেরা করতে হয় । তখন পায়ে হেঁটেও চলা কষ্টকর। যাতায়াতের অসুবিধার কারণে বর্তমান ডিজিটাল যুগে ও অজপাড়া গায়ে পরিণত হয়েছে । চট্টগ্রাম শহর, উপজেলা সদর, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বড়-ছোট হাটবাজার, মাদ্রাসা, উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাইমারি স্কুলে যেতে হলে প্রায় ১ কিলোমিটার মাটির রাস্তা পায়ে হাঁটে পেলাগাজি- কাজিরহাট- হেঁয়াকো সড়কে আসতে হয়। প্রায় এক ঘন্টা হাঁটার পর কার্পেটিং সড়কে গাড়ির দেখা মিলে।

এ গ্রামের মুহাম্মদ সম্রাট বলেন, লজ্জার কথা কি বলব? আমি বিদেশ থেকে আসার কিছু পরে আত্মীয়-স্বজন আসেন আমার বাড়িতে। ওনারা বলেন, কাপেটিং সড়ক থেকে হেঁটা অনেক কষ্টকর, হেঁটে হেঁটে পা ব্যথা করতেছে। মাটির রাস্তার ধুলা-বালি কাপড় চোপড় নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ।

নারী পথচারী বলেন, সিএনজি গাড়ি চলে না। হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি। গর্ভবতী নারীদের যাতায়াতে যে কি কষ্ট হয়, সেটা বইলা বোঝানো যাবো না।

স্থানীয় বাসিন্দা করিম বলেন, আমরা গ্রামবাসী চরম ভোগান্তিতে আছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের যুগে এ ধরনের রাস্তা কোথাও আছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। আমাদের কষ্ট চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। শুধু দক্ষিণ পাইন্দং গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা বাবুল ভৌমিক বাড়ির সংযোগ রাস্তাটির কাজ হয় না। একই ইউনিয়নের অন্যান্য এলাকায় প্রচুর উন্নয়নমূলক রাস্তা-সড়কের কাজ হচ্ছে।

পাইন্দং ইউনিয়ন (৩নং ওয়ার্ড) পরিষদর সদস্য মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটি নিয়ে আমি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলবো। এই রাস্তা নিয়ে যা যা করার প্রয়োজন আমি করব।

পাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম ছওয়ার হোসেন বলেন, ইটভাটার কারণে মাটির দাম বেড়ে গেছে। তাই আমাদের কাজ করতে দেরি হচ্ছে। নতুন প্রকল্প করে এ রাস্তার কাজ সম্পন্ন করব। যানবাহন চলাচলের আর কোন সমস্যা হবে না।

ফটিকছড়ি উপজেলা প্রকল্প বিষয়ক কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, রাস্তাটি আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখবো। কালভার্ট হলে তো খুব দ্রুত রাস্তা ও হওয়ার কথা। যানবাহন চলাচলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আরও পড়ুন