মিরসরাইয়ে বেপরোয়া গতির লরির ধাক্কায় ৩ শ্রমিক নিহত হয়েছে। শরিবার (২৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওয়ার্লেস বিসিক এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন পাবনা জেলার সুজানগর থানার সৌখেতু পাড়ার আবুল কালামের ছেলে আলমগীর হোসেন (৪৫), একই থানার রায়পুর এলাকার মালেক বেপারির ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪২) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার আন্দিদিল এলাকার হুমায়ুন কবিরের ছেলে মাসুদ মিয়া (৩৫)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম লেনের পূর্বপাশ হয়ে স্থাপন হচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পাইপ লাইন। এখানে কাজ করছে দীপন গ্যাস নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঘটনার সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ৪ শ্রমিক মহাসড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে কাজে যাচ্ছিলেন। এসময় একটি লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মহাসড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়। পরে লরির চালক দ্রæতগতিতে মহাসড়কে ওঠার সময় ওই ৪ শ্রমিকের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলে ৩ জন নিহত হন এবং একজন গুরুতর আহত হন। আহত ব্যক্তিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতদের সহকর্মী ও কোম্পানির পাইপ ওয়েল্ডার লাভলু বলেন, ‘আমাদের লোকজন সকালে কাজের প্রস্তুতি নিয়ে বাসা থেকে মহাসড়কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ধাক্কা দেয় লরিটি। তাদের শরীরের অংশ ও রক্ত রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। চালক চোখে ঘুম গাড়ি চালানোর কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা রাতে একসঙ্গে একই রুমে ছিলাম। সকালে তাদের এমন মৃত্যু দেখব কল্পনাও করতে পারিনি। একজনকে প্রায় ১ কিলোমিটার থেঁতলে নিয়ে গেলে বাদামতলী নামক স্থানে স্থানীয়রা গাড়িটি আটকায়। এখন সে মেডিকেলে রয়েছে।’
মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের দারোগাবাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে কোম্পানির শ্রমিকরা থাকেন। রুমের বাবুর্চি নজরুল আলী শেখ বলেন, ‘সকালে তাঁরা যখন কাজের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বাসা থেকে বের হন, তখনো তাঁদের সঙ্গে কথা হয়। আমি তাঁদের জন্য রান্না করি। মহাসড়কের পাশে গিয়ে তাঁদের গাড়ি এভাবে মারল। এটি দুর্ঘটনা হতে পারে না। এটি হত্যাকান্ড। আমরা উপযুক্ত বিচার চাই।’
মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি সকাল সাড়ে ৭ টায় দুর্ঘটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। ৩ জন ঘটনাস্থলে নিহত হন। আমি জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানায় ফোন করে জানাই। পুলিশ এসে গাড়ি আটক করে এবং নিহতদের লাশ নিয়ে যায়।’
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ইনচার্জ সোহেল সরকার বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে ওয়ার্লেস এলাকায় চট্টগ্রামমুখী দ্রুতগামী লরির ধাক্কায় ৩ জন নিহত হয়েছে। ধারণা করছি লরি চালক চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল। না হয় মহাসড়কের পাশে গিয়ে মানুষের শরীরের উপর গাড়ি তুলে দেওয়ার কথা না। নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। লরিটি আটক করে থানায় নিয়ে আসা হলেও চালক পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় নিহত একজনের ভাই বাদি হয়ে লরি চালককে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।