মোহামেডানের ফুটবলার বাল্লু স্বপ্ন দেখেন জাতীয় দলে খেলার

একটি গোল আর সেই গোলে দলের গৌরবময় বিজয় যেনো প্রিমিয়ার ফুটবল লীগের সেরা গোলের রেকর্ডের অন্যতম একটিতে স্থান করে নিলো। অবিশ্বাস্য সেই গোলের বদৌলতে লাখ ফুটবল পাগল আর ঢাকা মোহামেডানের সাপোর্টারদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। একটা গোলেই রাতারাতি খ্যাতি পাওয়া সেই ফুটবলার হলেন, ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মাঝ মাঠের খেলোয়াড় মোঃ মিনহাজুল আবেদীন রাকিব ওরফে বাল্লু।

ভারত বর্ষ তথা উপমহাদেশের ফুটবলের ঐতিহ্যে ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব একটি ইতিহাস। ঢাকার প্রিমিয়ার ফুটবল লীগে কর্পোরেট ক্লাবগুলোর অর্থের ছড়াছড়ি আর বিদেশী খেলোয়াড়দের দাপটের কাছে বারবার ছিটকে পড়ছিলো ঢাকার ফুটবলের জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলো। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক বাহক ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব আবারও তার ঐতিহ্য অনুযায়ী ঢাকার প্রিমিয়ার ফুটবল লীগের সেরা ও নিজ মাঠে অপরাজিত থাকার গৌরবের রেকর্ড থামিয়ে নিজ ঐতিহ্য ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রমান করলো বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়ে। মোহামেডানের তুলনা কেবল মোহামেডানই।

ঢাকার ফুটবলে নিজ মাঠে অপরাজিত কিং খ্যাত বসুন্ধরা কিংসের ৭১৫ দিন নিজ মাঠে অপরাজিত থাকার গৌরবকে মাটিতে মিশিয়ে দিলো ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। দেশী-বিদেশী দেশসেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে নিজ মাঠে এমন পরাজয়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে বসুন্ধরা কিংস এর খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা। বসুন্ধরা কিংসকে বিধ্বস্ত করা ঢাকা মোহামেডানের আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড় মোঃ মিনহসজুল আবেদীন রাকিব। তবে বন্ধু ও পাড়া-মহল্লায় বাল্লু নামেই পরিচিত।পুরান ঢাকার হাজারীবাগের ঐতিহ্যবাহী সরদার পরিবারের সন্তান বাল্লু।

মোহামেডানের এই সাফল্যের নায়ক বাল্লু বলেন, দলের কোচ আলফাজ, প্রতিটি খেলোয়াড় হতে শুরু করে কর্মকর্তা ও সমর্থক বিশেষ করে মহাপাগলরা প্রতিটি ম্যাচে মাঠে উপস্থিত থেকে আমাদের খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। সব মিলিয়ে একটি টিম ওয়ার্কই এই বিজয়ের চূড়ান্ত সফলতা এনে দিয়েছে। আমরা বসুন্ধরার নিজ মাঠে তাদের অপরাজিত থাকার রেকর্ড গুড়িয়ে দিয়েছি।

বাল্লুর প্রিয় খেলা ছিলো ক্রিকেট। স্বপ্ন দেখতেন বড়মাপের তারকা খেলোয়াড় হওয়ার। হাজারীবাগের বাড়ির উঠানে,কখনো হাজারীবাগ পার্কের মাঠে ব্যাট আর বল নিয়েই মত্ত থাকতেন বাল্লু। কিশোর বয়সেই বাল্লু চলে আসেন আরামবাগে নানি বাড়িতে।মতিঝিল ক্লাব পাড়া আর আরামবাগ যেনো ফুটবল পাড়া। মামা আর বন্ধুরা তাকে উৎসাহ দেন ক্রিকেট ছেড়ে ফুটবলার হওয়ার।আরামবাগ বালুর মাঠে সবার সঙ্গে নিয়মিত ফুটবল খেলতেন বাল্লু। মোহামেডান ক্লাবে চাকরি করেন আরামবাগের কালা ভাই।তিনি বাল্লুদের ফুটবল কোচিং করাতেন। কালা ভাই, মামা আর বন্ধুরা তাকে ফুটবলার হওয়ায় উৎসাহিত করতেন। এভাবেই বাল্লু ফুটবল নেশায় মেতে উঠেন। আরামবাগ ফুটবল একাডেমির হয়ে নিয়মিত অনুশীলন করতে থাকেন। মামা, বাবা-মা, ভাইরাও বাল্লুকে ফুটবলার হওয়ায় অনুপ্রাণিত ও সাহস যুগিয়েছেন। পরিবারের সকলের অনুপ্রেরণা বাল্লুর ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন পুরণ হওয়ার প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছে। এবার বাল্লুর টার্গেট জাতীয় দলে খেলা।

বাল্লু ইতোমধ্যে অনূর্ধ্ব ১৪ জাতীয় কিশোর দলের অধিনায়কত্ব করেছেন। তার অধিনাকত্বে ২০১৩ সালে অনূর্ধ্ব ১৪দল মিয়ানমার খেলতে যায়। এরপর ২০১৫ অনূর্ধ্ব ১৬ দলের হয়ে এএফসি কাপ ফুটবলে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলেছেন। বাল্লু ঢাকার তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লীগে পুরান ঢাকার পোস্তার মুসলিম ইনিস্টিউটের হয়ে ২০১৬-১৭ মৌসুম খেলেন। এরপর একবছর টিএন্ডটিতে খেলার পর ২০১৭-১৮ মৌসুম খেলেন ফরাশগঞ্জে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে খেলেন ব্রাদার্স ইউনিয়নে। এরপর ২০২০-২১মৌসুম মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রে।এ ক মৌসুম লীগ বন্ধ থাকায় ২০২২ সাল থেকেই বাল্লু তার প্রিয়দল মোহামেডানের সাদা-কালো শিবিরে যোগদেন।

বাল্লুর বাবা-মা, ভাই সবাই ঢাকা মোহামেডানের সমর্থক। মোহামেডানে আসার পেছনে গোলরক্ষক সুজনের অবদানের কথা উল্লেখ করেন বাল্লু। সুজনই ক্লাব কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছিলেন তাকে দলভুক্ত করার। এরপরই বাল্লু তার প্রিয় সাদা-কালো’র দল মোহামেডান শিবিরে সামিল হন। বসুন্ধরার বিরুদ্ধে গোল ছাড়াও স্বাধীনতা দিবস ফুটবলেও ফরাশগঞ্জের বিরুদ্ধে বাল্লু গোল করেছিলেন। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন পুরণে আরামবাগ বালুর মাঠে প্রথম উস্তাদ কালা ভাই ছাড়াও মিরাজ উস্তাদ, রানা ভাই, সেন্টু ভাইয়ের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। এ ছাড়া,বাবা জয়নাল আবেদীন, মা হামিদা বেগম, বড় ভাই,সজিব ও রাজিবের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা রয়েছে বলে জানালেন। বিদেশী ফুটবলারদের মধ্যে স্পেনের মাঝ মাঠের খেলোয়াড় ডেভিড সিলভার ও আমাদের দেশীয় ফুটবলারদের মধ্যে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মধ্য মাঠের খেলোয়াড় মামুনুল ইসলাম মামুনের খেলা অনুসরণ করেন। স্পেনের মিডফিল্ডার ডেভিড সিলভার তার প্রিয় খেলোয়াড়।

বাল্লু পুরান ঢাকার হাজারীবাগের নান্নু সরদারের নাতি। বাবা জয়নাল আবেদীন জয়নাল। তিন ভাইয়ের সবার ছোট বাল্লু। বাল্লু জানালেন, মা হামিদা’র কাছে তার খেলার দিনের শিডিউল সময়, কোন মাঠ, সবই জানিয়ে দেন। মা-বাবা দুজনই নিয়মিত তার খেলা দেখেন। বাল্লুর স্বপ্ন এখন জাতীয় দলে খেলা। নিজের চেষ্টা ও মহান আল্লাহ চাইলে হয়তো জাতীয় দলে খেলার শেষ স্বপ্ন বাস্তবে পরিনত হবে। সেই দিনটির অপেক্ষায় বাল্লু। ২৩ বছরের তরুণ ফুটবলার বাল্লু বাবা-মা ও নিজের পছন্দেই জীবনসঙ্গী ঠিক করে রেখেছেন।

আরও পড়ুন