কবর খোদক ফুটবলার রজব’র অজানা গল্প

ঢাকার জনপ্রিয় প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে তিনি খেলেছেন আবাহনী ক্রীড়া চক্র, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, রহমতগঞ্জ, অগ্রণী ব্যাংক ও ফরাশগঞ্জে। ফুটবল লিগের এ খেলোয়াড় খেলার পাশাপাশি ধর্মীয় সেবামূলক কবর খোদার কাজটিও করে যাচ্ছেন প্রায় পাঁচ দশক ধরে। সেই সঙ্গে মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠকগুলোর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন আজ-অব্দি। ষাট বছর বয়সেও কোনো লাশ দাফনের খবর আসলেই কোদাল হাতে ছুটে আসেন কবরস্থানে। নিজ হাতে কবর খুঁড়ে লাশ নামিয়ে দেন কবরে। কোনো পারিশ্রমিক নয়, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা মনে করেই এ কাজ করছেন প্রাক্তন ফুটবলার মোঃ রজব হোসেন। দেশের ব্যতিক্রমী এ ফুটবলার অন্তরঙ্গ আলাপে তাঁর ফুটবল জীবনের নানান বিষয় স্মৃতিচারণ করেন।

ঢাকার ফুটবল লীগে দেড় যুগেরও বেশি সময় খেলেছেন তিনি। ঝাঁকড়া চুলের অধিকারী ফুটবলার মোঃ রজব হোসেন। যিনি রজব নামেই ঢাকার ফুটবলপাগল সাপোর্টারদের কাছে পরিচিত। ঢাকার কেরানীগঞ্জ জিঞ্জিরার নজরগঞ্জের সন্তান রজব শৈশব থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বড় মাপের ফুটবলার হওয়ার। কেরানীগঞ্জসহ ঢাকা ও বিভিন্ন জেলায় কিশোর বয়সেই যখন টুর্নামেন্টে খেলতে শুরু করেছিলেন, তখন থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল ঢাকার লিগে বড় দল তথা আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্সের মতো ক্লাবগুলোতে খেলার। সেই স্বপ্ন লালন করেই ১৯৭৮ সালে পাড়ার জিঞ্জিরা স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লীগে তাঁর পথচলা শুরু। জিঞ্জিরা স্পোর্টিংয়ে এক বছর খেলার পরই ঢাকার জনপ্রিয় দল আবাহনী ক্রীড়া চক্রে খেলার সুযোগ আসে রজবের। ফুটবলের সেই উত্তাল ও উন্মাদনার সময়ে আবাহনী ক্রীড়া চক্রের জনপ্রিয়তাও আকাশ সমান উচ্চতায়।

সময়টা ১৯৭৯ সাল। দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লীগ শেষ হয়েছে। রজবের বয়স মাত্র ১৬/১৭। খবর পাওয়া গেল আবাহনী ক্রীড়া চক্রে এসেছেন ইংল্যান্ডের কোচ উইলিয়াম বিল হার্ট। তিনি নিজে বাছাই করে কিছু ফুটবলার নিবেন। সারা দেশ থেকে হাজার হাজার ফুটবলার জমায়েত হয়েছে আবাহনী মাঠে। এদের মধ্যে মোঃ রজবও একজন। বিল হার্ট খেলা দেখে ২৩ জন খেলোয়াড় চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই করলেন। এরমধ্যে রজবও সিলেক্টেড হলেন। ইংল্যান্ডের একজন কোচের বাছাইয়ে রজব দারুণ অনুপ্রাণিত হলেন। ফুটবল মাঠে রজবের খেলার পজিশন রাইট উইং স্টপার। বিল হার্টের বাছাই করা ফুটবলারদের মধ্যে আরও যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে গোলরক্ষক কানন ও আতিক। এছাড়া সাইক, দিপু, নেয়ামত, নিপু ও জাকির উল্লেখযোগ্য। তাঁদের সবাই পরবর্তীতে বাংলাদেশের জাতীয় যুব ও কেউ কেউ জাতীয় দলের হয়েও খেলেছেন। তরুণ ফুটবলার রজবের প্রথম কোচই হলেন বিল হার্ট। তিনি রজবকে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড়দের কিভাবে প্রতিহত করবেন তার নানান কলাকৌশল ও ট্যাকনিকসহ কিভাবে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের তার রক্ষণ সীমানায় প্রতিরোধ গড়তে হবে তার কৌশলগুলো তালিম দিয়েছিলেন। কোন স্ট্রাইকারের কি দুর্বলতা তা চিহ্নিত করে খেলার আগে আমাকে কীভাবে তাঁদের প্রতিরোধ করতে হবে সেই কৌশল ও গাইডলাইন দিয়ে দিতেন।

রজব বলেন, জিঞ্জিরায় দ্বিতীয় বিভাগে খেলার পরই ১৯৭৯ সালে যখন আবাহনীর খেলোয়াড় বাছাইয়ে টিকে যাই, ওই বছরই ঢাকায় আসে ইরাকের একটি বিশ্ববিদ্যালয় দল প্রদর্শনী ফুটবল খেলতে। তখন আবাহনী ক্রীড়া চক্র এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন একাদশের সঙ্গে দুটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলা হয়। আমি প্রথম ওই ম্যাচে আবাহনীর হয়ে অংশগ্রহণ করি। তখন আবাহনীর লাইন আপ ছিলো গোলরক্ষক মঈন, ডিফেন্সে আশরাফ, নান্নু, টুটুল, রকিব, মাঝমাঠে অমলেশ, খোরশেদ বাবুল, হেলাল, চুন্নু, আনোয়ার ও স্ট্রাইকারে কাজী সালাউদ্দিন ভাই। বাংলাদেশের সেরা ফুটবল একাদশের সঙ্গেই আমার খেলার ভাগ্য হয়েছিল বলে তিনি জানান। আর সে ম্যাচটিই ছিল আবাহনীর হয়ে ঢাকা স্টেডিয়ামে আমার জীবনের প্রথম খেলা। দেশসেরা আবাহনীর ডিফেন্ডার থাকায় আমার বয়স ও অভিজ্ঞতা কম হওয়ায় দলের প্রথম একাদশে স্থান করে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এভাবে একবছর পার করার পর আবাহনীতে শ্রীলঙ্কান ডিফেন্ডার পাকির আলীকে বিদেশি কোটায় দলভুক্ত করা হয় ‘৮১ সালে। তাই দলবদল করে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবে যোগদান করি।

রজব বলেন, ডিফেন্ডার হিসেবে আমার উচ্চতা দীর্ঘ না হওয়ায় আমি নিয়মিত স্কিপিং করতাম। আমার উচ্চতার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে আমি সব সময় প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকারদের লাফিয়ে উঠার আগেই উঁচু বল হেডের সাহায্যে আমি ক্লিয়ার করে দিতাম। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে আবাহনীতে পাকির আলীর ঝাঁকড়া চুল, খেলার স্টাইল আমার সঙ্গে মিল থাকায় ফুটবলপাগল দর্শকরা আমাকেও পাকির আলী বলে ডাকতেন। রজব ১৯৮২ থেকে ‘৮৩ পুরান ঢাকার দল রহমতগঞ্জ এমএফসি, ৮৪ থেকে ৮৫ ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং, ‘৮৬ থেকে ৮৭ ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং, ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে অগ্রণী ব্যাংক ও ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে আবার আবাহনী ক্রীড়া চক্রে ফিরে আসেন। এরমধ্যে ফরাশগঞ্জ ও রহমতগঞ্জ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

রজব হোসেন বলেন, রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকারদের মধ্যে সালাউদ্দিন ভাই, আসলাম ভাই ও সাব্বিরকে ভাইকে নিয়ে বেশি তটস্থ থাকতাম। কারণ তাঁদের কারো পায়ে অথবা মাথায় বল থাকলে দ্রুত প্রতিরোধ করতে না পারলে বিশেষ করে সালাউদ্দিন ভাই ছিলেন উইথ বল দ্রুতগতির স্ট্রাইকার, বল সামনে ঠেলে দিয়েই দ্রুতগতিতে চলন্ত বলে শট নিয়ে যেকোনো দূরত্ব থেকেই প্রতিপক্ষের গোলে বল পাঠাতে পারদর্শী ছিলেন। এরপর সাব্বিরও একই ক্যাটাগরির ছিলেন। আর আসলাম তাই আমাদের রক্ষণ সীমায় উঁচু বলে মাথা লাগানোর আগেই ক্লিয়ার করতে না পারলেই বিপদ ঘটাতেন। তাই তাঁরা আমার চেয়ে উচ্চতায় বেশি হলেও জাম্প করেই তা রিকভার করতাম। আমি ছোটবেলা থেকেই স্কিপিংয়ের প্রতি বেশি জোর দিয়েছি।

আবাহনীর হয়ে ভারতের নাগজি ট্রফিতে দাড়ানো দ্বিতীয় সারিতে ছবির সর্ব ডানে রজব

রজব বলেন, ঢাকায় ফুটবলের সবচেয়ে উর্বর সময়ে প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগের জনপ্রিয় ক্লাবগুলোতে আমার খেলার সৌভাগ্য হয়েছে। রজব বলেন, জিঞ্জিরার বাসিন্দা হওয়ায় আমাকে নিয়মিত পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ, সোয়ারী ঘাট হয়েই যাতায়াত করতে হতো। তাই পুরান ঢাকায় আমার বহু বন্ধু থাকায় পুরান ঢাকার সঙ্গে আমার হৃদয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিশেষ করে রহমতগঞ্জে খেলাকালীন সময়ে। তাই প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগের জনপ্রিয় ক্লাবগুলোতে খেলার পর শেষ বয়সে ১৯৯৪ সালে ইউসুফ ভাইসহ অনেকেই বলেন, আসো আমরা পোস্তার মুসলিম ইনিস্টিউটকে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে উঠানোর দায়িত্বটা নেই। তখন আমি মুসলিমে দ্বিতীয় বিভাগে খেলে চ্যাম্পিয়ন করে আমরা প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে উন্নীত করতে সক্ষম হই।

এরপর ফুটবল থেকে অবসর নিলেও মাঠ ছাড়তে পারিনি। ‘৯২ সালে এএফসির কোচেস ট্রেনিং ও ঢাকায় বার্সিলোনা একাডেমির একটি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করি এবং ফিফার সি ক্যাটাগরির কোচ হিসেবে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে ফিফার অনুমোদিত কোচ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হই।

ঢাকার লীগে স্মরণীয় খেলার স্মৃতিচারণে রজব বলেন, ১৯৮৮ সালে আমি তখন অগ্রণী ব্যাংকে খেলি। মোহামেডানের সঙ্গে খেলার দিন বিশাল দেহের অধিকারী দুর্ধর্ষ স্ট্রাইকার এমেকাকে আটকে রাখার দায়িত্বটা আমার ওপরই ছিল। সেই ম্যাচে দীর্ঘসময় আমি এমেকাকে ডি বক্সে বল নিয়ে ঢোকার আগেই বাধাগ্রস্থ করে সফল হই। তবুও হয়নি, আমরা হেরে গিয়েছিলাম। সেই ম্যাচটি এখনো আমার কাছে স্মরণীয়। এছাড়া মোঃ রজব আবাহনী ক্রীড়া চক্রের হয়ে নাগজি ট্রফিতে খেলতে গিয়েছিলেন ভারতে।

ঢাকার ফুটবল লীগে খেলাকালীন সময় হতে এখনো তাঁকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সদস্য ডামফার যুগ্ম সম্পাদক পুরান ঢাকা ক্রীড়া ও সমাজসেবক আজফার উজ-জামান সোহরাবের নাম জানিয়েছেন রজব। বর্তমানে কেরানীগঞ্জে ফুটবল ও ক্রিকেট একাডেমির মাধ্যমে শিশু-কিশোর-তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন রজব। আর কেরানীগঞ্জে খেলাধুলার উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েই পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ। তিনি কালিন্দী ক্রিকেট একাডেমির সভাপতি। মহিলা ফুটবল ও ক্রিকেট দলের প্রশিক্ষণ কালিন্দী ক্রীড়া চক্র মাঠেই নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে তিনি জানালেন।

মোঃ রজব ফুটবলের পাশাপাশি সেই ছোটবেলা থেকে কবরস্থানে কবর খোদার কাজটি করে আসছেন ধর্মীয় সেবার মনোভাব থেকেই। কবর খোদা একটি নেশায় পরিণত হয়েছে বলে তিনি জানান। ষাট বছর বয়সের রজব এখনো লাশ দাফনের খবর পেলেই কোদাল হাতে কবরস্থানে ছুটে আসেন। কেরানীগঞ্জ নজরগঞ্জের বাসিন্দা রজবদের পৈতৃক ব্যবসা প্রেসের প্রিন্টিং কাজ। এখন তিনিও এ ব্যবসার পাশাপাশি কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা, সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠনসহ বহু প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত,যার মধ্যে ঢাকার ওরিয়েন্ট ক্রীড়া চক্র অন্যতম। ১৯৯৪ সালে ইসরাত জাহান লিপির সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তাদের একমাত্র মেয়ে রুকসার জাহান তিনা বিবিএ পড়ছেন। মেয়ে বিয়ে দিয়ে এখন নিজেকে খেলাধুলা, সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং ধর্মীয় সেবামূলক কাজে নিয়োজিত রেখেছেন মোঃ রজব হোসেন। আমৃত্যু জনকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে সবার দোয়া ও মহান আল্লাহর সহযোগিতা চেয়েছেন এই প্রাক্তন ফুটবলার।

ফুটবলারদের শাস্তিঃ তদন্ত কর্মকর্তা আলোচিত ওসি কুদ্দুস যা বললেন

সামরিক আদালতে ফুটবলার আনোয়ারের বিচারের অজানা কথা

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাওয়া ফুটবলার বাবুল গুমের মর্মস্পর্শী কাহিনী

মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সাংবাদিক খন্দকার তারেকঃ ক্রীড়াঙ্গনের জীবন্ত দলিল

ক্রীড়াঙ্গনে আজিমপুর কলোনীঃ জুডো কন্যা সুমির সাফল্যের গল্প

৫১ বছর পর পরিচয় উদঘাটন: বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার প্রতিরোধে পুলিশ নয়, প্রথম শহীদ ফুটবলার খোকন

ষাটের দশকে ফুটবলে খ্যাপের ওস্তাদ ফায়ারসার্ভিসের বিমল দাদা এখন ইতিহাসের সাক্ষী

শোকাবহ আগস্ট : আবাহনীর খেলোয়াড়দের রাতের অন্ধকারে অনুশীলন করতে হতো

পঞ্চাশ দশকঃ কায়দে আজম ট্রফিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেটার মিন্টুর গল্প

ফুটবলার ইকবালের স্বপ্ন ভেঙেছে একটি রাফ টেকলিং

গ্যালারি মাতানো পাগলা মুজিবর আবাহনী সমর্থক হওয়ার পেছনের গল্প – CTG SANGBAD24

বাংলাদেশের ফুটবলে ভুলে যাওয়া নাম সত্তুর দশকের শার্প শ্যুটার সুলতান – CTG SANGBAD24

ঢাকার ফুটবল উন্মাদনাঃ কসাইদের মোহামেডান আর রহমতগঞ্জের ডাইলপট্টির কথা – CTG SANGBAD24

বাংলাদেশের প্রথম ফুটবল লীগে আবাহনীর খেলোয়াড় টিপু’র দূর্বিষহ স্মৃতি – CTG SANGBAD24

পঞ্চাশের দশকে ঢাকার ফুটবলে রক্ষণ ভাগের দুই প্রহরীর গল্প – CTG SANGBAD24

ফুটবলার তৈরীর পাঠশালা গ্রামীণ জনপদ, এখানে নজর দিতে হবে : আসকর খান বাবু – CTG SANGBAD24

আরও পড়ুন