চসিক কর্মকর্তাদের বর্বরোচিত হামলার শিকার ব্যবসায়ী বাপ্পি

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন আগ্রাবাদ সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেটে ঢুকে কর্পোরেশনের গুটি কয়েক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার ওই মার্কেটের তরুণ ব্যবসায়ী মনির হোসেন বাপ্পিকে নির্দয়ভাবে বেধম মারধর করেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ( চসিক ) প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজেমী ও স্টেট অফিসার রেজাউল করিমের নেতৃত্বে এ হামলা ও মারধরের ঘটনা সংঘটিত হয়। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২টার সময় মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে এ মারধরের ঘটনা ঘটে।

মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দোকান মালিক সমিতির অফিস কক্ষে আলাপ আলোচনা চলাকালে আচমকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ( চসিক ) প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজেমী ও স্টেট অফিসার রেজাউল করিম ব্যবসায়ী মনির হোসেন বাপ্পির ওপর চড়াও হন। প্রথমেই উত্তেজিত হয়ে চেয়ার থেকে ওঠে প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজেমী সন্ত্রাসী কায়দায় অন্যদের ডাকতে থাকেন। সাথে সাথে তার পাশে বসে থাকা সিটি কর্পোরেশনের স্টেট অফিসার রেজাউল করিম ওঠে এসে ওই ব্যবসায়ীকে চেয়ারে বসা থাকা অবস্থাতেই কলার ধরে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। পরক্ষণে প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজেমীও মারধরে যোগ দেন। সেই সাথে নিরাপত্তারক্ষীদেরকে ডেকে সবাই মিলে মারতে মারতে ওই ব্যবসায়ীক চেয়ার থেকে ওঠিয়ে লাঠি দিয়ে মারতে থাকেন। একপর্যায়ে মারতে মারতে অফিস কক্ষের বাইরে নিয়ে যান। এসময় বাপ্পিকে বাঁচাতে মার্কেটের অফিস সহকারী মাহমুদুল হক জামশেদ এগিয়ে আসলে তিনিও আহত হন।

এদিকে সমিতির অফিসে ঢুকে ব্যবসায়ীকে মারধরের ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়। ওইদিন রাতেই ব্যবসায়ীরা সিটি মেয়রের সাথে দেখা করে তাকে বিষয়টি অবগত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছে। মার্কেটের ব্যবসায়ীর ওপর হামলার বিষয় নিয়ে শনিবার ( ৬ এপ্রিল ) বিকেলে জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন দোকান মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মোঃ ইব্রাহিম ভুইঁয়া।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মার্কেটের ৩৭১ নম্বর দোকানটির মালিক সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রকৌশলী আবদুল মালেক। দোকানটি মনির ও জাকির হোসেন নামে দুই ভাই ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করতেন। মন্দার কারণে তারা দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। তাদের ১১ লাখ টাকা জামানত ছিল দোকান মালিকের কাছে। ভাড়াটিয়া ও মালিকের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে নিয়মানুযায়ী সমিতি তা মিটমাট করার কথা। কিন্তু এ দোকানের মালিক সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কর্মকর্তা হওয়ায় নিজের দাপটে ও ইচ্ছেমত বল প্রয়োগ করে জোর খাটাতে গিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলার আশ্রয় নিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজেমী ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, সিটি করপোরেশনের মাননীয় মেয়রের নির্দেশে একটা বন্ধ দোকান উচ্ছেদ করতে আমরা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ওই মার্কেটে যাই। এক পর্যায়ে দোকান মালিক সমিতির একজন আমাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করলে উচ্ছেদ দলে থাকা কর্মীরা তার উপর চড়াও হয়।

ভিডিও ফুটেজে মারধরের দৃশ্য দেখার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, আমি সমিতির ওই কর্মকর্তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। কয়েকদিন আগে উল্লিখিত দোকানের মালিক সিটি করপোরেশনের সাবেক কর্মকর্তা প্রকৌশলী আবদুল মালেকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা সেখানে উচ্ছেদ অভিযানে যাই। ভিডিওতে তাকে মারতে দেখা যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

ঘটনা বিষয়ে ভিকটিম মনির হোসেন বাপ্পী জানান, আমি সমিতির প্রচার সম্পাদক ও মার্কেটের ৩য় তলার দায়িত্বপ্রাপ্ত। ৩য় তলার ৩৭১ নম্বর দোকানটি নিয়ে দীর্ঘদিন ঝামেলা চলছিল। সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে আমি সমস্যা সমাধানের অংশ হিসেবে নিয়ম মাফিক আলাপ আলোচনা করছিলাম অফিসে। এসময় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা সমিতির কোন কথা না শুনে আমার ওপর হামলে পড়ে। এতে আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে তারা। এসময় সমিতির অফিস সহকারী মাহমুদুল হক জামশেদকেও তারা বেধড়ক মারধর করে। এ বিষয়ে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব।

এ ব্যাপারে দোকান মালিক সমিতির আরেক সহসভাপতি দস্তগীর আজাদ জানান, মনির হোসেন বাপ্পী আমাদের মার্কেটের ৩৩৩ জন ব্যবসায়ীর নির্বাচিত প্রতিনিধি। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা তাকে এভাবে বেধড়ক মারধর করতে পারেন না। এ নিয়ে আমরা মাননীয় মেয়রের কাছে লিখিত আবেদন করেছি।

জানা গেছে, বন্ধ যেই দোকানটিকে ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত সেই দোকানের মালিক কর্পোরেশনের সাবেক কর্মকর্তা আবুদল মালেক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ( চসিক ) প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজেমীর শ^শুড়। এ বিষয়ে লতিফুল হক কাজেমীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

আরও পড়ুন