বাংলাদেশের রিজার্ভ এবং বিদ্যুৎ পরিস্থিতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাকে বেশি কথা বলা হলে তিনি সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকবেন। শুক্রবার বিকেলে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তাকে প্রশ্ন করা হলে, রিজার্ভ ও বিদ্যুৎ বিষয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাকে বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকবো। ইলেকশনের পরে যদি আসতে পারি আবার করবো।”
“যদি বলেন যে রিজার্ভ রক্ষা করতে হবে, তাহলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেই, পানি বন্ধ করে দেই, সার বন্ধ করে দেই, রিজার্ভ ভাল থাকবে।”
তিনি বলেন, রিজার্ভ নিয়ে যদি এতো বেশি কথা হয় তাহলে, সরকার গঠন করার সময় রিজার্ভ যত ছিল, সেখানে নিয়ে গিয়ে আবার নির্বাচন করবেন। পরে ক্ষমতায় এসে আবার বাড়াবেন। বিদ্যুৎ শতভাগ থেকে নামিয়ে ২৮ ভাগে নিয়ে আসার কথা বলেন তিনি। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রীকে মাঝে মাঝে লোডশেডিং দিয়ে মানুষকে আগের অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে দেয়ার কথাও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এমন এক সময় একথা বললেন, যখন রিজার্ভ পরিস্থিতি নিম্নগামী এবং রিজার্ভ সংকট নিয়ে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভ এখন ২১ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। তবে একজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারের কম আছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রিজার্ভ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন আমদানি ও রপ্তানি, যাতায়াত ও যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই রিজার্ভ বেড়ে গিয়েছিল। তবে করোনার পর অর্থনৈতিক সব কর্মকাণ্ড শুরু হওয়ার পর আমদানি বেড়ে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই রিজার্ভ আবার কমে গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা দাবি করেন, ২০০৯ সালে তারা যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন তখন রিজার্ভের পরিমাণ ০.৭৭ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার সময় আড়াই মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল। রিজার্ভ যেটুকু বেড়েছে তা আওয়ামী লীগ করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “সবাই একটু টের পাক যে কী ছিল। আমরা তো ভুলে যাই। পয়সা দিয়ে তেল কিনে যখন জেনারেটর চালাতে হবে, তখন আক্কেলটা একটু ঠিক হবে যে হ্যাঁ এই অবস্থা তো ছিল। সব গোছায় গাছায় দেয়ার পরে ইলেকশনের কথা, ভোটের কথা, অর্থনীতির কথা, পাকা পাকা কথা শুনতে হয়। আমি এটা শুনতে রাজি না।”
প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সাথে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সাথে বাংলাদেশের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমাকে ভোটের অধিকার শিখাতে হবে না। এটা আমরাই করেছি। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর জন্যই জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। এর জন্য একটানা নির্বাচনে থাকার কারণে দেশের উন্নতি হয়েছে। এরপরও কেন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বার বার কথা বলছে সেটি নিয়ে সন্দেহ আছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষেরও দোষ আছে, কারণ তারা এটি নিয়ে বেশি কথা বলে।
“(বিএনপি)নির্বাচনকে বয়কট করেছে অথবা নির্বাচনকে কলুষিত করেছে অথবা ভোট চুরি করেছে, ভোট ডাকাতি করেছে, এখন তাদের কাছ থেকেই শুনতে হয় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা, বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হলো সেটাই।”
২০০৮ সালে বিএনপি ২০ দলীয় জোটের মাধ্যমে ৩০টি আসনে জয় লাভ, ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে অগ্নি-সন্ত্রাস, ২০১৮ সালের নির্বাচন থেক সরে যাওয়ার মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
“তাহলে কি একটা দেশ এতো দ্রুত উন্নতি করে ফেলছে, সেটাই সবার মাথাব্যথা হয়ে গেলো কিনা, যে এটাকে এখন কিভাবে নষ্ট করা যায়, সেই প্রচেষ্টা কিনা, সেই সন্দেহ আমারও আছে।”
তিনি বলেন, “দেশটা যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন হঠাৎ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সবার এতো মাতামাতি কেন? সন্দেহ হয় রে..এটাই বলতে হয়, সন্দেহ হয় রে…., আসল কথা হচ্ছে নির্বাচনটাকে বানচাল করে দেওয়া।”
প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৫৮ জন পুলিশ মোতায়েন করা আছে। আর রাষ্ট্রদূতের জন্য সিভিল ড্রেসে গানম্যান দেয়া আছে। এখানে তার নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নাই।
বাংলাদেশে ২০২১ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব এবং এর কয়েকজন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এছাড়া সম্প্রতি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য রয়েছে বলেও জানানো হয়।
এই বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একদিকে আমার আইনশৃঙ্খলা-রক্ষাকারী বাহিনীর উপর স্যাংশন দিবে, আবার তাদের কাছ থেকেই নিরাপত্তা চাইবে, এটা আবার কেমন কথা? আমি সেই প্রশ্নটাও করেছি।”
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন অর্জনের বিষয় তুলে ধরেন। বিশেষ করে দারিদ্র বিমোচনে সফলতা, হত দরিদ্রের হার ৫শতাংশে নামিয়ে আনা এবং সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানোর বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ২০২৩ সাল পর্যন্ত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ১০ কোটি ৬১ লাখের বেশি মানুষ উপকৃত হচ্ছে। এমনকি একই ব্যক্তি দুই-তিন ধরণের সহযোগিতাও পাচ্ছে। ভিজিএফ কর্মসূচির মাধ্যমে দুই কোটি ৫০ লাখ মানুষ, জিআর কর্মসূচির মাধ্যমে ৩৩ লাখ মানুষ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য বা কাজের বিনিময়ে টাকা কর্মসূচির মাধ্যমে ২৮ লাখ মানুষ সহায়তা পাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের বিষয়ে তার লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। সেখানে তিনি জানান, জাতিসংঘে বাংলাদেশের যোগদান সফল হয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রুখতে সবুজ জলবায়ু তহবিল গঠনের আহ্বানের পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
সূত্র :বিবিসি