বুড়িমারী স্থলবন্দরে সুতা ও তুলা পাটের বর্জ্য রপ্তানি বন্ধ

বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বর্জ্য তুলা ও সুতা এবং পাটের বর্জ্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে গত প্রায় ৫ মাস ধরে। আমদানিকৃত এসব পণ্য বিপজ্জনক উল্লেখ করে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারতের স্থল শুল্ক (কাস্টমস্‌) দপ্তর। এতে বন্ধ রয়েছে বর্জ্য তুলা ও সুতা রপ্তানি। এমনটাই জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।

১৯৮৮ সালে বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশন ও স্থলবন্দর চালু হয়। শুরু থেকে এ স্থলবন্দর হয়ে ভারতে বর্জ্য তুলা ও সুতা এবং পাটের বর্জ্য রপ্তানি করা হলেও এ বছরের ১১ই এপ্রিল প্রায় ৩০ ট্রাক বর্জ্য তুলা ও সুতা এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি করার পর থেকে বন্ধ রয়েছে রপ্তানি।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের তুলা ও সুতা রপ্তানিকারকরা জানান, গত ১২ই এপ্রিল ভারতের আমদানিকারকরা জানান- এ স্থলবন্দর দিয়ে আর এসব সামগ্রী আমদানির অনুমতি দিচ্ছেন না চ্যাংড়াবান্ধা স্থল শুল্ক (কাস্টমস্‌) দপ্তর। ভারতীয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে জানতে বুড়িমারী স্থল শুল্ক (কাস্টমস্‌) কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হয় এ স্থলবন্দরের বর্জ্য তুলা ও সুতা রপ্তানিকারকেরা। কর্তৃপক্ষ ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থল শুল্ক (কাস্টমস্‌) দপ্তরের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে মৌখিকভাবে জানতে পারে- ‘সে দেশের কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে আপাতত বর্জ্য তুলা ও সুতা এবং পাটের বর্জ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

১০ই মে ভারতের জলপাইগুড়ি ফুলবাড়ী ল্যান্ড কাস্টমস্‌ স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সে দেশের (ভারত) আমদানিকারকদেরকে চ্যাংড়াবান্ধা কাস্টমস্‌ কর্তৃপক্ষ দেয়। চিঠিতে ভারতীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র বা অনুমতিপত্র ছাড়া বাংলাদেশ হতে বর্জ্য তুলা ও সুতা এবং পাটের বর্জ্য আমদানি নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করা হয়। একই নিয়ম এ স্থলবন্দরে চালু করেন ভারতের ফুলবাড়ী ও চ্যাংড়াবান্ধার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি রুহুল আমীন বাবুল বলেন, ‘বুড়িমারী স্থলবন্দরের শুরু থেকে বর্জ্য তুলা ও সুতাসহ বিভিন্ন পণ্য ভারতে রপ্তানি করা হতো কিন্তু হঠাৎ করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সে দেশে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এ বন্দর দিয়ে না নিয়ে অন্য বন্দর দিয়ে নিচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে রংপুর কাস্টমস কমিশনারকে জানিয়েছি কিন্তু কাস্টমস এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা কাস্টমস্‌ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিকাশ কুমার সাহা বলেন, ‘আমাদের চ্যাংড়াবান্ধা কাস্টমস্‌ কর্তৃপক্ষ পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন বা সনদপত্র ছাড়া তুলা ও সুতা আমদানি করতে নিষেধ করেছে। শুরু থেকে এ সব পণ্য অনেক ছোট-বড় আমদানিকারক আমদানি করে আসছে বর্তমানে অন্য বন্দর দিয়ে এসব ঢুকছে আমাদের এদিক হতে বন্ধ রয়েছে।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের রপ্তানিকারক মেসার্স বন্ধু টেডার্সের স্বত্বাধিকারী শামীম হোসেন বলেন, ‘এখান থেকে বর্জ্য তুলা ও সুতা রপ্তানি প্রায় ৫ মাস ধরে বন্ধ আছে। এতে আমাদের দেশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দেখা জরুরি।

ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা শুল্ক স্টেশনের কাস্টমস্‌ সহকারী কমিশনার (এসি) নিমা শেরপা জানান, ‘বর্জ্য তুলা ও সুতা এবং পাটের বর্জ্য আমদানি বন্ধ করা হয়নি বরং পরিবেশ দূষণের বিষয়টি ঠিক রেখে ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে যথাযথ পদ্ধতিতে আমদানি চলছে।’

বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের উপ-কমিশনার আব্দুল আলীম বলেন, ‘বর্জ্য তুলা ও সুতা এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি বন্ধ আছে। আমরা সে দেশের কাস্টমস্‌ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা জানিয়েছে তাদের দেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া এ সামগ্রীগুলো আমদানি করতে দেবে না।

আরও পড়ুন