বাঁশিতেই যার হাসি (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক :: পেশাদার বংশি বাদক নন, তবে বাঁশিতেই তার দিনযাপন। সংসার চালান বাঁশি বাজিয়ে। মা-বাবা-বউ-সন্তান সবার মুখে হাসি ফোঁটান এ বাঁশি বাজিয়ে কামানো টাকায়। তারও হাসির ঝিলিক এ বাঁশিকে ঘিরেই। পেশাদারিত্বের সংজ্ঞায় ফেলা না গেলেও পথে প্রান্তরে বাঁশি শুনিয়ে কেবল মানুষের খুশি মনে দেয়া টাকায় জীবন জীবিকা নির্বাহ করা এক বাঁশি পাগল যুবক মো.ইব্রাহিম।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামের আহমদ ছফা ও সোনিয়া বেগম একমাত্র সন্তান মো. ইব্রাহিম। বয়স ৩৩ বছর। এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক ইব্রাহিম নিরক্ষর একজন মানুষ। ছোটবেলা থেকেই বাঁশির প্রতি টান তার। শখের বশে ছোটবেলা থেকেই নিজে নিজে বাঁশি বাজানোর চেষ্টা থেকে একসময় নেশায় পরিণত হয় এ বাঁশি। ফলে অন্যকোন পেশায় সংযুক্ত হতে না পারার কারণও তার বাঁশি প্রেম।

নগর থেকে গ্রামে গঞ্জে যেখানেই মানুষের ঝটলা সেখানেই তিনি দাড়িয়ে বসে বাঁশি বাজান। নিজের সামনে একটি চিরকুট লিখে রাখেন, ভিক্ষা করিনা, বাঁশি বাজায়। বাঁশি শুনে ভাল লাগলে যার যা খুশি অর্থ সাহায্য দেয়ার অনুরোধ তাতে। মানুষও তার বাঁশির সুরে বিমোহিত হয়ে তাকে সাহায্য করেন।

নগরীর বিভিন্ন পার্ক, খেলার মাঠ, সী-বিচ, চিড়িয়াখানাসহ যত বিনোদন কেন্দ্র আছে সবখানেই তার অবাধ বিচরণ। সাথে বড় বড় শপিংমল, বিভিন্ন মেলা প্রাঙ্গন তার প্রিয় জায়গা। এসব স্থানে বাঁশি বাজিয়েই আয় রোজগার করেই তার দিন যাপন। সকালে বের হন না। একবেলা বাঁশি বাজিয়ে কখনও ৫শ, ৬শ কিংবা তার চেয়ে কম বেশি আয় হয় তার। তাতেই তার রাজ্যের সন্তুষ্টি। হাসির ঝিলিক উপচে পড়ে।

নগরীর আগ্রাবাদ জাম্বুরী পার্কে শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তার সাথে আলাপচারিতায় জানা গেলো জীবনের গল্প, বাশির গল্প। ১৫ বছর ধরে বাঁশি বাজান তিনি। কখনও অন্য পেশায় যাওয়ার চিন্তা মাথায় আসেনি। বাঁশি না বাজালে সে বাঁচবেনা এমনটাই দাবি। বাঁশি তার প্রাণ, বাঁশি তার ধ্যান জ্ঞান। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত বাঁশি বাজানো বন্ধ করবেন না এমনটাই দৃঢ় প্রত্যয়ী ইব্রাহিম।

নিজে পড়া লেখা না করলেও নিজের ছেলে মেয়েদের স্কুলে পড়াচ্ছেন। বাবা-মা কিংবা স্ত্রী কেউ তার এ পেশায় বাধা হয়ে দাড়ায়নি। বড় হওয়ার স্বপ্ন আছে কিনা জানতে চাইলে সহজ উত্তর, আমিতো লেখাপড়া জানিনা, কেউ আমারে বড় সুযোগ দেয়না। গজল, কাওয়ালি, লোকগীতি, পল্লীগীতি,আধুনিকসহ নানা রকমের ২হাজার সুর তার মুখস্থ। কোন বড় দল বা ব্যান্ড সুযোগ দিলে যেতে রাজি কিনা জানতে চাইলে বলেন, নিশ্চয় যাব। আমারতো বেশি চাহিদা না। কেবল পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা আর বাঁশি বাজানো।

বাঁশি বাজিয়ে টাকা নিতে তার শরম লাগে কিনা জানতে চাইলে ইব্রাহিম বলেন, আমি ভিক্ষা করিনা। পরিশ্রম করি। এটা খুবই পরিশ্রমের কাজ। প্রচুর শক্তি ক্ষয় হয়। দম লাগে অনেক। রিকশা চালানো কিংবা অন্যকোন কায়িক শ্রমের চেয়ে এটা কোন অংশেই কম নয়। তাই পরিশ্রম করে বাঁিশ শুনিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করতে পারলে তারা যা দেন সেটা আমার পারিশ্রমিক, ভিক্ষা নয়। তাই আমার খারাপ লাগেনা। তবে হ্যাঁ, কোন গানের দল যদি তাদের সাথে আমাকে সুযোগ দিয়ে রুটি রুজির ব্যবস্থা করে দেয়, তখন আমি আর এভাবে পথে পথে বাঁশি বাজিয়ে টাকা তুলবো না।

কোন অফিসে কাজ বা অন্যরোজগারের ব্যবস্থা করে দিলে কি করবে এমন প্রশ্নও ছিলো তার কাছে। সে কাজ শেষে অবসরে বাঁশি বাজাবে জানালো। সাথে যোগ করলো, বাঁশি আমাকে বাজাতেই হবে। এটা আমি ছাড়তে পারবো না। এটা আমার রক্তের সাথে মিশে গেছে। নেশা-পেশা সবকিছুই।

এর পরে আর প্রশ্ন করার কোন সুযোগই রইল না এ বাঁশি পাগল ইব্রাহিমের নিকট। একটি পেশার প্রতি নিখাদ প্রেম বা ভালোবাসা না থাকলে এমন দৃপ্তময় উচ্চারণ কখনওই সম্ভবনা। ইচ্ছে ছিল বাঁশি বাজানো শরিয়তে জায়েজ কিনা কিংবা পাপ এ সংক্রান্ত আরও নানা প্রশ্নের। কিন্তু বাঁশির প্রতি গভীর প্রেম আমাকে আর এগুতে দিলোনা। তাকে অজান্তেই স্যালুট জানিয়ে সরে পড়লাম নিজ গন্তব্যে।

আরও পড়ুন