সাংবাদিক সাগর-রুনী হত্যার একযুগেও অধরা খুনীরা, রহস্য কী?

আদালতে এখন আর তদন্ত কর্মকর্তা সময় চেয়ে আবেদন করতে উপস্থিত হন না। কারণ মামলার ভাগ্য হয়তো তিনিও জানেন।তাই পেশকার সময় চেয়ে আবেদন উপস্থাপন করেন আদালতে। এভাবেই তারিখ আর তারিখেই দেশের আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যা মামলার ভাগ্য গণনা চলছে। রুনীর মা এরই মধ্যে প্রয়াত হয়ে গেছেন। সাগরের মা এখনো বেঁচে আছেন ছেলে ও বউ হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে। একযুগ ধরে টিভির সামনে একটি ব্রেকিং নিউজের অপেক্ষা করছেন, এই বুঝি খুনীদের আটকের সংবাদ আসলো। কিন্তু তার এই আশা-আকাঙ্খা তছনছ করে দিয়েছেন, আইনমন্ত্রীর একটা মন্তব্যে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, প্রকৃত খুনীদের আটকে ৫০ বছর সময় লাগলেও দেয়া হবে।সাংবাদিক দম্পতি হত্যা মামলাটি যখন ১২ বছর ধরে শুধু তারিখ আর তারিখেই ঘুরপা খাচ্ছিলো, তখনই আইনমন্ত্রীর এমন এক মন্তব্যে ভিক্টিম দুই পরিবারই বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষ ২০১২ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ঘন্টার মধ্যে খুনীদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর একযুগ পার হলেও ঘোষিত সেই ৪৮ ঘন্টা এখনো শেষ হয়নি। সম্প্রতি আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, প্রকৃত খুনীদের আটক করতে যদি ৫০বছরও সময় লাগে লাগুক, আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীই যেনো আইনের আওতায় বিচারের সম্মুখীন হয়।

আইনমন্ত্রী’র এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নিহত সাগরের মা সালেহা মুনির বলেছেন, আইনমন্ত্রী’র এমন বক্তব্যে আশাহত হয়েছি।সন্তান হারা মায়ের হৃদয় ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছেন তিনি। একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি হয়ে তিনি কিভাবে বললেন ৫০ বছর সময় লাগলেও দেয়া হবে? এমন কথা তিনি কেমনে বলতে পারলেন?

সাংবাদিক সাগরের মা সালেহা মুনিরের সাথে প্রতিবেদক ইকবাল কবির

আক্ষেপের সঙ্গেই তিনি বললেন,আমাদের আর বুঝতে বাকি নাই এদের সময় আর আমরা সন্তান খুনের বিচার পাবো না।আইনমন্ত্রী প্রকারন্তরে এই বার্তাটিই তদন্তকারীদের দিয়ে দিলেন, যে ৫০ বছর বেঁচে থাকো আর না থাকো সময় নাও ঘুমাও।

সাগরের মা সালেহা মুনির হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের আর বুঝতে বাকি নাই এই হত্যাকান্ডে এমন কোন প্রভাবশালী সিন্ডিকেট জড়িত আছে, যাদের হাত আইনের চেয়ে বড় এবং সরকারের চেয়েও ক্ষমতাবান। তাই নানান তালবাহানায় তারিখ আর তারিখ করে ১২বছরে ১০৬ বার সময় নেয়া হয়েছে।

নিহত সাগরের মা ও রুনীর শ্বাশুড়ী সালেহা মুনির ক্ষোভের সঙ্গেই বললেন, এখন আল্লাহর কাছেই বিচার চাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নাই। রুনীর মা তো আর বেঁচে নেই, আমাকে মহান আল্লাহ এখনো বাঁচিয়ে রেখেছেন, আমি বিশ্বাস করি একদিন না একদিন আমার সন্তাদের হত্যার বিচার হবেই হবে।

তিনি বলেন, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও র‍্যাব সদস্যরা পারেন না এমন কিছু নাই। তাদের মেধা ও দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানের। কোথাও কোন প্রতিবন্ধকতার কারণেই অথবা কোন ক্ষমতাবান ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন হয়তো খুনের সঙ্গে জড়িত, তাই তাদের আড়াল করতেই নানান বাহানায় মামলার সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে। তাই হয়তো আইনমন্ত্রী ৫০ বছর সময় প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করেছেন। কারণ আমরা ও আইনমন্ত্রী আরো ৫০ বছর বাঁচবেন কিনা জানি না। আইনমন্ত্রী হয়তো আরো ৫০বছর বাঁচার নিশ্চয়তা পেয়েছেন। আইনমন্ত্রীর এমন কথায় এই সরকারের আমলে আর বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না।

তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, বিচার আমরা একদিন না একদিন অবশ্যই পাবো। মহান আল্লার কাছেই বিচার দিয়ে রাখলাম।

সন্তানহারা মা সালেহা মুনির বলেন, বাবা-মা, ভাইসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও স্বজন হারিয়েছেন, তিনি স্বজন হারানোর কষ্ট বুঝেন।আমার দৃঢ়বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আরো আন্তরিক হলে সাগর-রুনী হত্যার প্রকৃত খুনীরা আইনের আওতায় আসবে।

তিনি বলেন, আগে তদন্তকারী র‍্যাবের কর্মকর্তারা যোগাযোগ রাখতেন, খোঁজখবর নিতেন। এখন আদালতে তারিখের পর তারিখ দেয়ায় কেউ আর খোঁজ নেন না। আইনমন্ত্রী’র ৫০ বছর সময় দেয়ার বক্তব্যের পর আর কি বলবো? দেশের জনগণেরও বুঝতে বাকী নেই, এই হত্যাকান্ডের পেছনে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট জড়িত। তাই খুনীরা আটক হচ্ছে না।