৯ মে, ২০১৯খ্রীঃ তারিখে সিটিজি সংবাদ ডট কমে প্রকাশিত সাক্ষাৎকার:
দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসক সংকটের কারণই লাশের ময়নাতদন্তের প্রধান অন্তরায় বলেছেন বাংলাদেশ ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাঃ সোহেল মাহমুদ।
সিটিজি সংবাদ.কম’কে দেয়া বিশেষ সাক্ষাতকারে তিনি ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসক সংকটের বিস্তারিত উল্লেখ্য করে বলেন, দেশের ৩৬টি সরকারি হাসপাতালে যেখানে ১৮০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা সেখানে আছেন মাত্র ১৫ হতে ২০ জন।
তিনি বলেন, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের কোন ছুটি নেই। রাষ্ট্রীয় কাজে তারা সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা ছাড়াও মৃত্যুর নানা জটিল কারণ নির্ণয় করে এই বিভাগের চিকিৎসকদের নানা ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন আদালতে নিজ খরচে উপস্থিত হয়ে মামলার সাক্ষী দিতে যান। নানা ভোগান্তির কারণে এই ডিপার্টমেন্টে চিকিৎসকরা আসতে চান না। যার ফলে এখন দেশে ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসক সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
তিনি আরো বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল মামলাগুলো আদালতে গড়ালে সাক্ষী দিতে গিয়ে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না হলে নানা জেরার মুখে পড়তে হয় চিকিৎসকদের। তাই গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর ময়নাতদন্ত হাতেগোনা কয়েকজন চিকিৎসককেই করতে হয়।
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ডাঃ সোহেল মাহমুদ বলেন, উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে ফরেনসিকের অনেক বিশেষজ্ঞ এখন দেশের বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে রয়েছেন, এরা সরকারের ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামোর কারণে এখন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
অবিলম্বে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেশের ৩৬টি সরকারি হাসপাতালের এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়োগের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে ডাঃসোহেল মাহমুদ বলেন, চিকিৎসক সংকট সমস্যার সমাধান না করলে ফরেনসিক বিভাগে লাশের ময়নাতদন্তে বিপর্যয় নেমে আসবে।
তিনি বলেন, এই বিভাগের চিকিৎসকরা যুগযুগ ধরে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করে আসছে, তাই রাষ্ট্রেরও তাদের প্রতি করণীয় আছে বলে তিনি মনে করেন।
ফরেনসিক বিভাগের এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অংক এবং ইংরেজির শিক্ষক সংকটের কারণে যেমন তাদের অবসরের বয়স বৃদ্ধি করা হয়েছে, তেমনি ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদেরও অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি জানান।
তিনি বলেন, বিভিন্ন জেলা সরকারি হাসপাতালেরগুলোতে ডাক্তাররা ময়নাতদন্ত এর কারণে অন্য জেলায় বদলি হলে তাকে নিজ খরচে আদালতে স্বাক্ষী দিতে হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বছরের পর বছর মামলা চলায় স্বাক্ষী না হলে আবারো ফেরত আসতে হয়। এভাবেই চিকিৎসকদের হয়রানি করা হয়।
তিনি অবিলম্বে সরকারী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান।