বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউপির বাসিন্দা বীর বাঙ্গালী ছৈয়দ আহমেদের পরিবার ভূমি দস্যুদের নগ্ন দখলদারিত্বের শিকার হয়ছে। আইন আদালত, ভূমি ব্যবহার নীতিমালা, কোনোটারই তোয়াক্কা করছে না প্রতিপক্ষ জোর দখলকারীরা।
সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে ছৈয়দ আহামদ এর পরিবারের ক্রয়কৃত ৬০ শতাংশ ধানী জমিতে জোর করে পাকা পিলার স্থাপন করে জবর দখলের পাঁয়তারা করছে নুরুল আজিম চৌধুরী গং। এছাড়া ছৈয়দ আহামদের ছেলে ও তার ভাই মৃত আঃ ছমদ এর দাগমূলে আরো ২ একর সম্পত্তি বসতঘর বাগবাগিচাসহ দখল করার ষড়যন্ত্রে নানাভাবে হয়রানী করে চলছে। ছৈয়দ আহামদের পরিবার আইনের আশ্রয় নিয়েও রেহায় পাচ্ছে না, নুরুল আজিম গংদের কবল থেকে।
সরেজমিন অনুসন্ধানকালে দেখা গেছে, কয়েক বছর আগে জমির সীমানা অতিক্রম করার কাজে বাধা দিলে, নুরুল আজিম গং ছৈয়দ আহামদকে দা দিয়ে কুপিয়ে প্রাণ নাশের চেষ্টা করেছিল। তারা পরস্পর আত্মীয় হওয়ায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় মামলায় না গিয়ে ছৈয়দ আহামদের পরিবার প্রতিনিধিদের পরিচিহ্নিত করে দেয়া সীমানা মেনে দখল-চাষাবাদ করতে থাকে। এর পরও কয়েক দফা সীমানা নিয়ে বিরোধ করতে থাকে নুরুল আজিম গং। এই বিরোধ মীমাংসাকল্পে সরকারি আমিন কানুনগো সরেজমিন গিয়ে দাগে সীটে জমি পরিমাপ পরিচিহ্নত সীমানা নির্ধারণ করে দিয়ে আসে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে নুরুল আজিম গং সরকারি সার্ভেয়ার কর্তৃক পরিমাপ সীমানা খুটি তুলে ফেলে দেয়। এই বিষয়টি নিয়ে বান্দরবান জজ কোর্ট ও লামা সিনিয়র জুডিশিয়াল কোর্টে মামলা হয়ে তা চলমান রয়েছে।
এদিকে, ইতিপূর্বে সার্ভেয়ার, কানুনগোর পরিচিহ্নত রিপোর্ট তোয়াক্কা না করে ও বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদে সীমানা নির্ধারণের আবেদন করেন নুরুল আজিম গং। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ বিগত ২৮ জুলাই/২২ তারিখে ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম গঠন করে বিরোধ মিমাংসার জন্য অনুরোধ জানান। কমিটির প্রধান করা হয়, ১,২,৩ নং সংরক্ষিত সদস্য জোসনা আক্তার লিলিকে। কমিটির ২ নং ক্রমিকে ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ হেলাল উদ্দিনকে রাখা হয়। ঘটনাস্থল বা তর্কিত ভূমি ও পক্ষদ্বয় ৩ নং ওয়ার্ডে স্থিত। সঙ্গত কারণে ৩নং ওয়ার্ড সদস্যকে মিমাংসা কাজে রাখার প্রয়োজন দাবি করেন স্থানীয়রা। কিন্তু সেই দাবি রাখা হয়নি।
টিমের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, দিদারুল হক চৌধুরী, গোলাম কাদের মেম্বার, ছাবের আহমদ, আক্তার কামাল, মমজাতুর হক ও ডাঃ শাহাজান। এদিকে সাধারণ ও সংরক্ষিত দুই ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের টিম সরেজমিন গিয়ে, ছৈয়দ আহামদ ও আমেনা বেগমের কাগজ যাচাই বা সরকারি সার্ভেয়ার কানুনগোর রিপোর্ট ও এতদ বিষয়ে আদালতে মামলা জেনেও, তর্কিত ভূমিতে একতরফা সিমেন্ট বালু দিয়ে ঢালাই করে পাকা পিলার স্থাপন করে দেন(!)।
এই ব্যপারে ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, আমারা পরিষদ চেয়ারম্যানের নির্দেশ মতে সীমানা পিলার দিয়েছি।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্য মামুন বলেন, “আমি সেই ওয়ার্ডের প্রতিনিধি হিসেবে যা জানি তা হচ্ছে, দীর্ঘ বছর ধরে দু’পক্ষের এওয়াজ বদল সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। এনিয়ে আদালতে দু’টি মামলাও রয়েছে। এই অবস্থায় ইউপির গঠিত বোর্ড কোন ক্ষমতা বলে তর্কিত ভূমিতে পাকা পিলার স্থাপন করেছেন! সেটা আমার বোধগম্য নয়”।
সে আরো জানান, ছৈয়দ আহামদ এর পরিবারের সাথে নুরুল আজিম গং যে রকম জোর প্রয়োগ ও বে আইনি কাজ করছে; ২জন মেম্বারসহ ৮ জনের গণ্যমান্য টিমও একই রকম অন্যায়ে মদদ দিয়েছে।
এ ব্যপারে ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিষদে ৬৬/২২ অভিযোগের প্রেক্ষিতে মিমাংসা পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য একটি ৮ সদস্যের টিম করে দিয়েছি। “আবেদনকারী ও প্রতিবাদীগণকে অবহিত করে সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে উভয়ের দলিলপত্র ও স্বাক্ষী প্রমানসহ যাচাই বাছাই করে নিরপেক্ষতার সহিত সীমানা পিলার স্থাপন করে মিমাংসা পূর্বক মতামত প্রতিবেদন দাখিল দেয়ার জন্য অনুরোধক্রমে দায়িত্ব দেয়া হয়”।
অপরদিকে ছৈয়দ আহামদ বলেন, “গঠিত মিমাংসা বোর্ড আমাদেরকে কোন নোটিশ না দিয়ে এক তরফাভাবে আমাদের ক্রয়কৃত ৬০ শতাংশ ধানী জমি নুরুল আজিম গংদের অনুকুলে রেখে পাকা সীমানা পিলার পুঁতে সিমেন্ট বালু ঢালাই করে দেন(!)। তবে চেয়ারম্যান ও ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার হেলাল উদ্দিন দাবি করেন যে, পরিষদ দু’পক্ষকে নোটিশ দিয়েছেন। কিন্তু ছৈয়দের পক্ষ হাজির হননি।
ছৈয়দ আহামদ আরো বলেন, “নুরুল আজিম চৌধুরী গং আমাদের বসতবাড়ি বাগবাগিচাসহ ৮৯ নং হোঃ এ দাগ নং ২৮৫২ ও ২৭৩৩ এর অংশ ২ একর জমি জবর দখলের জন্য একটি জালজালিয়াত কাগজ দেখিয়ে পেশি শক্তি প্রয়োগের অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। বর্তমানে আমাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের দ্বারা প্রাণ নাশসহ নানান আশঙ্কায় ভুগছি”। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজরে আনার জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।