বাপের বাড়িতে শায়িত হলেন রাউজানের গৃহবধূ তাইরিন, এলাকায় শোকের ছায়া

রাউজানের সেই গৃহবধূ জাহেদা আফরিন প্রকাশ তাইরিনকে বাপের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায় শায়িত করা হয়েছে। শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ময়নাতদন্ত শেষে উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের সাপলেজা পাড়া জহির আহমেদ চৌধুরী বাড়িতে নামাজে জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হয়।

তাইরিন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের সাপলেজা পাড়ার প্রবাসী মো. ইউসুফের মেয়ে। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সে তৃতীয়। পোমরা জামেউল উলুম মাদ্রাসা থেকে ফাযিল (ডিগ্রি) শেষে রাঙ্গুনিয়া আলমশাহ পাড়া কামিল মাদ্রাসায় কামিল (এম.এ) হাদিস বিভাগে ভর্তি হয়।

শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের কমলার দিঘী এলাকার গণীর বাড়ি থেকে গৃহবধূ জাহেদা আফরিন তাইরিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গৃহবধূ তাইরিন ওই এলাকার মো. ইসমাইলের স্ত্রী। বিয়ের মাত্র ১৯ দিনের মাথায় জাহেদা আফরিন তাইরিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গৃহবধূ তাইরিনের শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাইরিন ‘আত্মহত্যা’ করেছে বললেও তাইরিনের পরিবারের লোকজন বলছেন এটি ‘পরিকল্পিত হত্যা’।

তাইরিনের ছোট ভাই মো. ইব্রাহিম বোনের স্বামী ইসমাঈলকে অভিযুক্ত করে বলেন, ‘সে আমার বোনকে মেরে ফেলেছে। বাসর রাতে আমার বোনকে অত্যাচার করা হয়েছে। জোরজবরদস্তি করা হয়েছে। ওই রাতেই সে শারিরীকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরদিন সকালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার শরীরে তিনটি সেলাই করতে হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় আমার বোন কতটা কষ্টে ছিলো’।

তাইরিনের বড় বোন রাশেদা আফরিন বলেন, ‘আমার বোনকে আমাদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে দেয়নি। এমনকি আমাদের বাড়িতেও আসতে দেয়নি। আসার কথা বললে নানা অযুহাত দেখাতো। আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের আইসিইউ’তে ভর্তি থাকলেও তাইরিনের স্বামী ইসমাইল একটিবারও যোগাযোগ করেনি। কেমন মানুষের সাথে বোনকে বিয়ে দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বাড়ি থেকে কেউ তাইরিনকে দেখলে গেলে বোনের সাথে ওদের ঘরের কেউ একজন সঙ্গে সঙ্গে থাকতো। একা একটু কথা বলবে সে সুযোগ দিতো না। বোনের স্বামী নেশাগ্রস্থ, মাতাল ছিল’।

এদিকে তাইরিনের স্বামী মো. ইসমাঈল বলেন,’আমার যা বলার রাউজান থানা পুলিশকে বলেছি। ঘটনার দিনও বলেছি, আর কয়বার বলবো। তাইরিন ফ্যানের সাথে রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কেন আত্মহত্যা করেছে সেটি জানি না। আমাদের সাথে কোন কিছু হয়নি।

অন্যদিকে তাইরিনকে তার বাপের বাড়ি পোমরা ইউনিয়নের সাপলেজা পাড়া জহির আহমেদ চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে আসলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তাইরিনকে একজন দেখতে ছুটে আসেন পাড়াপ্রতিবেশি ও আত্মীয়স্বজন। কান্নায় ভারী হয়ে উঠে ওই এলাকার আকাশ-বাতাশ।

তাইরিনের ফুফাতো ভাই মো. ফয়সাল বলেন, তাইরিনের বাবা প্রবাস থেকে সন্ধার দিকে দেশে আসলে তাকে দাফন করা হয়।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে গৃহবধূ তাইরিনকে বাপের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।’

বিয়ের ১৯ দিনের মাথায় রাউজানে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু – CTG SANGBAD24

আরও পড়ুন