কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর থেকে ঢাকার আইসিডিতে পণ্য পরিবহনের জন্য সড়কপথ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নির্মাণাধীন দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর থেকে পণ্য আমদানি-রফতানি সুবিধা পেতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের চকরিয়া ফাসিয়াখালী থেকে বদরখালি ব্রিজ পর্যন্ত সড়ক নির্মিত হবে। মাতারবাড়ি বন্দরকে জাতীয় সড়ক নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে নির্মিতব্য সড়কের জন্য ইতোমধ্যে ২৪৩ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে।
এর অংশ হিসেবে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৭ এর আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী গত ২৯ আগস্ট থেকে ভূমি মালিকদের নোটিশ জারী করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা রাবেয়া আসফার সায়মা স্বাক্ষরিত নোটিশে সরকার কর্তৃক ভূমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানিয়ে নোটিশ দেয়া হয়েছে।
শনিবার ( ৩ সেপ্টেম্বর) অধিগ্রহণের প্রস্তাবিত এলাকা চিরিংগা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে এবিষয়ে ভূমি মালিকদের জন্য এক সচেতনতা সভার আয়োজন করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
চকরিয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেপি দেওয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: আমিন আল পারভেজ, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা রাবেয়া আসফার সায়মা, চকরিয়ার সহকারী কমিশনার ( ভূমি) রাহাত উজ জামান, চিরিংগা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জামাল চৌধুরী, ফাঁসিয়াখালি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন সহ ভূমি মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ভূমি অধিগ্রহণের নানা ধাপ, কোন ধাপে ভূমি মালিকদের করণীয় কী তার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির জন্য ভূমি মালিকদের কোন দালালের শরণাপন্ন না হতে এবং কারও অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। এরপর তিনি ভূমি মালিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
ভূমি মালিকরা তাদের জমির উপযুক্ত ক্ষতপূরণ নির্ধারণ, নির্মিতব্য সড়ক যেন কৃষি কাজে ব্যবহৃত পানি প্রবাহে বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখার দাবী জানান। এসময় খাস জমিতে যেসব দরিদ্র মানুষ ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন তারা যেন ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত না হন তা নিশ্চিত করার দাবী তুলে উপস্থিত জনতা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তাদের বক্তব্য শোনেন এবং উত্থাপিত বিষয়ে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন। একই সাথে তিনি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম-দুর্নীতি এবং জনহয়রানি বন্ধে জেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টা সফল করতে সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, কক্সবাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের কারণে কক্সবাজারের সঙ্গে জাতীয় মহাসড়কের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। তাই মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর জাতীয় সড়ক নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হলে মাতারবাড়ি বন্দর থেকে বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন করা দ্রুত হবে।
উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ১৬ নবেম্বর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী ২০২৫ সালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।