দেশের প্রথম ভ্রাম্যমাণ ‘রেল জাদুঘর’ দেখতে উপচেপড়া ভিড়

চলছে শোকের মাস আগস্ট। আগস্টের ১ তারিখে উদ্বোধন হয় দেশের প্রথম ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর। উদ্বোধনের পর থেকে ব্যাপক সাড়া মিলেছে জাদুঘরটিকে ঘিরে। সর্বস্তরের মানুষের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠা ট্রেনটির মিটার গেজ শুরু হয় চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে। সেখানে ১ আগস্ট থেকে ৫ আগস্ট অবস্থান করে ৬ আগস্ট ভাটিয়ারি রেল স্টেশনে চলে যায় সেখানে দুই দিন, সীতাকুন্ডে ৯ আগস্ট পর্যন্ত দুই দিন এরপর মিরসরাই উপজেলার চিনকি আস্তানা রেল স্টেশনে ১১ আগস্ট পর্যন্ত দুই দিন অবস্থান করে। এসময় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা যায়। জাদুঘরটি বঙ্গবন্ধুকে ছবি ও ভিড়িওর মাধ্যমে জানার সুযোগ করে দিয়েছে।

জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, অধিকার আদায়ে আন্দোলন, সংগ্রাম এবং তার অসামান্য কর্মজীবন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এক ব্যতিক্রমধর্মী ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যা বাংলাদেশে এই ধরনের উদ্যোগের মধ্যে এটিই প্রথম। জাদুঘরটি স্টেশনে থামতেই একরকম জনারণ্যে পরিণত হয়।

বেশিরভাগ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিদর্শনে আসছেন। পাশাপাশি নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও জাদুঘর ঘুরে দেখছেন। এই জাদুঘরে ১৯২০ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১২ টি গ্যালারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। কোচের এক প্রান্তে রাখা একটি বড় এলইডিতে রাখা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ও ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। অর্থাৎ প্রতিটি গ্যালারিতে ডিসপ্লের পাশাপাশি শ্রবণযন্ত্রের মাধ্যমে তৎকালীন প্রেক্ষাপটের ধারা বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে। ভিডিওচিত্রের সঙ্গে ধারা বর্ণনা শুনে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস জানার সুযোগ পাচ্ছে।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটিতে আরও রাখা হয়েছে জয়বাংলা শ্লোগানের আদলে তৈরি করা একটি বুক শেলফ। বইগুলোর মধ্যে শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধুর রচিত বিভিন্ন শিশুতোষ বই। ‘যাদু মনি’ সম্বোধন করে মেয়ে হাসুকে নিয়ে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠিসহ ৬ টি চিঠি রাখা হয়েছে। দর্শকদের নজর কাড়ার জন্য ভেতরেই তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম ফুলের বাগান। আরও রয়েছে জাতির পিতার ব্যবহৃত পোশাক ও জিনিসপত্রের প্রতিকৃতি। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল, স্মৃতিসৌধ, তার হাতে লেখা চিঠি। জাদুঘরটি রয়েছে একটি ডিসপ্লে, যেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা সময়ের ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। এর পেছনে বেজে চলে ‘তুমি ইতিহাস জুড়ে সর্বশ্রেষ্ঠ মহানায়ক এই বাংলার তুমি শোষকের জম শোষিতের দম ¯্রষ্টা স্বাধীনতার’ রেলওয়ে কর্মকর্তা মঞ্জুর উল আলম চৌধুরীর লেখা গানটি জাদুঘরে থিম সং হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আর কোচের বাইরের অংশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ধারাবাহিক সংগ্রামের ওপর শিল্পীর আঁকা রঙিন ম্যুরাল চিত্র।

বুধবার জাদুঘর পরিদর্শনে আসে চিনকি আস্তানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী। তাদেরই একজন ৫ম শ্রেণির ছাত্র ইশতিয়াক আলম রবিন জানায়, আমাদের বাড়ির পাশে এভাবে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর দেখতে পাবো কল্পনাও করিনি। জাদুঘরে ঘুরে ঘুরে আনেক কিছু দেখেছি। অনেক অজানা তথ্য জেনেছি। আমার খুব ভালো লেগেছে।

মহাজনহাট ফজলুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ নোমান বলেন, ‘আমাদের কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছুটে আসি জাদুঘরটি দেখার জন্য। শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনাবলী জানার যে আগ্রহ রয়েছে তা এই জাদুঘরে এসে পূর্ণ হয়েছে। চমতকার আলোকসজ্জা ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই জাদুঘর যে কাউকে মুগ্ধ করবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ।’

জাদুঘরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রুবেল শেখ জানান, ‘এটি উদ্বোধনের পর থেকে আমি নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছি। যত স্টেশন অতিবাহিত করছে ততই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে জাদুঘরটি। সর্বস্তরের জনগণের মাঝে ব্যাপকভাবে সাড়া মিলেছে জাদুঘরকে ঘিরে। সবাই দেখার পর আনন্দ পাচ্ছে এবং এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছে।’

বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র ও বারইয়ারহাট পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম খোকন গত ১০ আগস্ট চিনকি আস্তানা রেল স্টেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত সবদিক ছবি ও ভিড়িওর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার অসাধারণ মাধ্যম এই জাদুঘর। জাদুঘরটিকে ঘিরে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে উৎসাহ দেখা গেছে। আমি এমন উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

চিনকি আস্তানা রেল স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, চিনকি আস্তানা রেল স্টেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে পৌঁছে। পরদিন বুধবার সকাল ১০ টা থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে ৫ টায় নাসিরাবাদ ট্রেনের সাথে সংযুক্ত করে এটি ফেনী জংশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, জাদুঘরটি আমি নিজেও দেখেছি। ১৯২০ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনে ঘটে যাওয়া সব বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে জাদুঘরে। এটি বাংলাদেশ রেলওয়ে অনন্য উদ্যোগ। আমি রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা হিসেবে এমন উদ্যোগের জন্য নিজেও গর্ববোধ করছি।

আরও পড়ুন