বাঁশখালীতে ট্রাকের ধাক্কায় ঈগলের ঝাপটায় দোলছে নৌকা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। গত দুইবারের এ সাংসদকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল্লাহ কবির লিটন। ফলে নির্বাচনের মাঠে জোরালো প্রতিদ্বন্ধিতার মুখোমুখি রয়েছেন এ তিন প্রার্থী। তারা তিনজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। বাঁশখালীর আওয়ামী রাজনীতিতে তাদের তিনজনেরই নিজস্ব বলয় রয়েছে। এবারের নির্বাচনে তাদের তিনজনের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস দেখা যাচ্ছে। প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় এখন পর্যন্ত বাঁশখালীতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

টানা দুইবারের সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী আলোচনা-সমালোচনায় দেশজুড়ে পরিচিত নাম। তার দশ বছরের সাংসদ থাকাকালীন সময়ে বাঁশখালী আওয়ামী লীগের মধ্যে ঐক্যের চেয়ে বেশী ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাদের। যার দরুণ বাঁশখালীতে নৌকা ছেড়ে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা ঈগল এবং ট্রাক প্রতীকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন প্রকাশ্যে। তাদের সুস্পষ্ট অবস্থান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও বার্তা এবং স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছেন। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তাছাড়া নানান ঘটনার জন্ম দিয়ে বর্তমানে কিছুটা অস্বস্থিতেও পড়েছেন নৌকা প্রার্থী মোস্তাফিজ। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি (ঈগল প্রতীক) এবং দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল্লাহ কবির লিটন (ট্রাক প্রতীক) নিজ নিজ অবস্থানকে শক্ত মনে করছেন। অনেকে বলে বেড়াচ্ছেন বাঁশখালীর অভিভাবক হিসেবে নৌকা ছাড়া ঈগল ও ট্রাকের যেকেউ আসুক। বিগত দুই বারের মতো সাংসদ থেকে মোস্তাফিজের আমলে বাঁশখালীতে যে পরিবর্তন হওয়ার কথা তেমন উন্নয়ন চোখে পড়েনি এমন অভিযোগের তীর তার দিকে। অভ্যন্তরীণ সড়কসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে বাঁশখালী। এই তিন প্রার্থী ছাড়া আরও ৭ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তারা হলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ খালেকুজ্জামান (বেঞ্চ), ছনুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুর করিম শরীফি (কংগ্রেস পার্টি থেকে ডাব), ন্যাপের প্রার্থী আশীষ কুমার শীল (কুঁড়েঘর), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহিউল আলম চৌধুরী (মোমবাতি), ইসলামী ঐক্যজোটের শফকত হোসেন চাটগামী (মিনার), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আবদুল মালেক আশরাফী (চেয়ার), এনপিপির মামুন আবছার চৌধুরী (আম)।

এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মুজিবুর রহমান ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বিগত সময়ে তিনি বাঁশখালীর রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় না থাকলেও তার পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র কয়েকজন নেতা, সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা মাঠে নেমেছেন। প্রার্থী নিজেও বাঁশখালীর গ্রামগঞ্জ চষে বেড়াচ্ছেন। প্রচার প্রচারণায় এখন পর্যন্ত অন্য প্রার্থীদের চেয়ে তিনি এগিয়ে রয়েছেন। শিক্ষা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, করোনাকালীন সময়ে তিনি বাঁশখালীজুড়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সর্বসাধারণের কাছে ইতোমধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছেন। ভোটের মাঠে আপাতত সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও মাঠে তার শক্ত প্রতিপক্ষও রয়েছে। ভোটের মাঠে নতুন প্রার্থী হওয়ায় প্রতিপক্ষকে তিনি কতটুকু মোকাবিলা করতে পারবেন তা নিয়েও ভোটারদের মাঝে নানা আলোচনা রয়েছে। তবে নির্বাচনী সভা, সমাবেশে পরিকল্পিত উন্নয়নের কথা বলায় সাধারণ এবং নতুন ভোটাররা তার দিকে ঝুঁকছেন।

আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল্লাহ কবির লিটন রয়েছেন ট্রাক প্রতীক নিয়ে। তিনি ৩২ বছর ধরে বাঁশখালীর আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিয়ে আসলেও এবারই প্রথম ভোটের মাঠে লড়ছেন। তিনিও নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে প্রতিদিনই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নির্বাচনী মাঠে আসার পর কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও তার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে তার জনপ্রিয়তা বাড়ছে বহুগুণ। আবদুল্লাহ কবির লিটন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নিকটাত্মীয়। বাঁশখালী আসনে আবদুল্লাহ কবির লিটনকে বিজয়ী করতে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ কাজ করছেন বলেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বাঁশখালীর সাবেক সাংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সোলতান-উল কবিরের পুত্র উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (প্রাক্তন) চৌধুরী মোহাম্মদ গালীব সাদলীও লিটনের পক্ষে প্রচার প্রচারণায় একজোট হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৫ জন ভোটারের এ আসনে নৌকার বিজয় কেতন উড়বে নাকি স্বতন্ত্রে ধরাশায়ী হবে সেটা দেখার জন্য ৭ জানুয়ারী পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে দেশবাসীকে। ঈগল আর ট্রাকের তীব্র চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকার মাঝির জয় পরাজয় সাগরের জোয়ার ভাটার মতো দোলছে বলে ভোটারদের অভিমত। তবে সবকিছুর বাইরে ভোটারদের প্রত্যাশা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।

আরও পড়ুন