বিএনপি জামায়াত খুনী ডাকাত ভোট চোরের দল : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়া খুনি, তার দল খুনি, ডাকাত আর ভোট চোর। তারা ক্ষমতায় আসলে দেশকে পিছনে নিয়ে যায়, মানুষ না খেয়ে মরে, দেশের কোনো উন্নয়ন হয়না কেবল নিজেদের উন্নতি ঘটে। খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে খেয়ে এখন সাজাপ্রাপ্ত আসামী। তার ছেলে হাওয়া ভবনের প্রতিষ্ঠাতা। ওয়ান ইলেভেনের সময় মুচলেকা দিয়ে দেশের বাইরে গেছে। জামাত বিএনপির কাজই হলো মানুষ খুন করা। তারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলো। চট্টগ্রামের সমাবেশে গুলি করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিলো। তাই জণগন তাদেরকে প্রত্যাখান করেছে। উন্নয়ন সমৃদ্ধির এ ধারাবাকিতা রাখতে আপনারা আবারও নৌকাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে দেশকে উন্নয়নের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখবেন ইনশাল্লাহ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি এ রোদের মধ্যে অনেক কষ্ট করে আপনারা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছেন। এত রোদ সহ্য করে কষ্ট করে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য আমি আপনাদের নিকট কৃতজ্ঞ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এদেশ স্বাধীন করেছেন, চেয়েছিলেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন। আমি আপনাদের দোয়ায় ভালবাসায় সিক্ত হয়ে আজ এ পর্যন্ত এসেছি। আমার মা বাবা ভাই বেঁচে নেই। আপনারাই আমার স্বজন। আমরা দু’বোন দেশের বাইরে না থাকলে সেদিন ঘাতকরা আমাদেরকেও মেরে ফেলত। আমার চাওয়ার কিছু নেই। আমি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে যেতে চাই।

বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, ত্রিশ লক্ষ শহীদ, ২লক্ষ মা বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে চট্টগ্রামবাসীর নাম সবসময় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি এ সময় প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতাদের স্মরণ করে বলেন, আজিজ কাকা, হান্না কাকা, বাবু ভাই, কায়সার ভাই, পুলিন দে সহ কত নেতারা ছিলেন, যারা জীবন দিয়ে সংগ্রাম করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আপনাদের কাছে এসেছি বিশেষ একটি উপহার নিয়ে। দইজ্জের তল দিয়ে গাড়ী চলে, ফুড়–ত করে বাড়ী যাবে। এই যে নদীর তল দিয়ে গাড়ী চলার ব্যবস্থা অর্থ্যাৎ টানেল। নদীতে বারবার ব্রীজ করলে সিলট্রেশন বাড়বে। সেজন্য আমাদের চিন্তা ছিলো নদীর নিচ দিয়ে টানেল করে দিবো। কিছুক্ষণ আগেই আমরা সে টানেল উদ্বোধন করেছি। এ টানেল শুধু চট্টগ্রাম নয়, পুরোদেশ এবং আমাদের আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটা বিরাট ভূমিকা রেখে যাবে। এখন আর ঝড় বৃষ্টির বিড়ম্বনা সহ্য করতে হবে না, নদীর তল দিয়েই গাড়ী চলাচল করবে। দক্ষিণ এশিয়ায় এতবড় টানেল এই প্রথম।

প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের লক্ষ্য বর্ণনা করে বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশটা আরও উন্নত হোক। এখান থেকে কক্সবাজার যেতে বহু সময় লাগতো। আমরা সেখানে রেল সেবা দিয়ে সময় এবং দুর্ভোগ দুটোই কমিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। শীঘ্রই এ রেললাইন উদ্বোদনের জন্য আমি কক্সবাজার যাবো। ঢাকা বা অন্য এলাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার ক্ষেত্রে শহরে ঢুকে যানজটে আটকা পড়ে থাকতে হবে না। বাইপাস দিয়ে দ্রæত চলে যেতে পারবে। তাছাড়া এশিয়ান হাইওয়ের সাথে আমরা সংযুক্ত হবো যা আমাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের জন্য আরও উপহার নিয়ে এসেছি। আমি ইতোমধ্যে অনেকগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করেছি, কিছু ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। এত এত উন্নয়ন এসব উপহার চট্টগ্রামবাসীর জন্য। আজকে এই যে এত উন্নয়ন সব সম্ভব হয়েছে আপনাদের জন্য। কারণ আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই আমরা ক্ষমতায় এসেছি এবং দেশের জন্য কিছু করতে পারছি। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন, আর এ নৌকা মার্কা যখনই ক্ষমতায় এসেছে দেশের উন্নয়ন হয়েছে। গত ১৫ বছরে চট্টগ্রামে আমরা যা উন্নতি করেছি তা অতীতে কেউ করতে পারেনি কিংবা করেনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছি। চায়না ইকোনমিক জোন হবে গহিরায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক প্রশস্তকরণ, মেট্রোরেল নির্মাণের সমীক্ষা চলছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করছি। চাক্তাই কালুরঘাট মেরিন ড্রাইভের কাজ চলছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ২৫০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ করে দেব। বে-টার্মিনাল করা হচ্ছে। মাতারবাড়িতে ডিপ সি-পোর্ট হচ্ছে। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছি। একাধিক পানি শোধনাগার করেছি। স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ১১ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট নিয়েছি। দ্বিতীয় রিফাইনারির কাজ চলছে। মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। ৩৫টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার পার্ক, মিনি সেক্রেটারিয়েট করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন উন্নয়ন করি তখন ওই বিএনপি জামাত কি করে ? তারা দেশ ধ্বংস করে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে জ্যান্ত মানুষ মারে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং আমার পরিবারের সদস্যদের খুনের সাথে ওই বিএনপি জামায়াত জড়িত ছিলো। এরা খুন করা ছাড়া আর কিছুই জানে না। আওয়ামী লীগের ২১হাজার নেতাকর্মীকে তারা খুন করেছে। ওরা যখন ক্ষমতায় থাকে দুর্নীতি লুটপাট হয়, এই চট্টগ্রামেই ১০ ট্রাক অস্ত্র প্রচারের সাথে জড়িত। গ্রেনেট হামলা করে আমাকে দিনে-দুপুরে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে এবং সেই ঘটনায় আমাদের ২২ জন নেতাকর্মী কে হত্যা করেছে। এই চট্টগ্রামে ছিল সন্ত্রাসের রাজত্ব্য, আমরা সরকার গঠনের পর এই চট্টগ্রামকে শান্তির নগরীতে গড়ে তুলেছি এবং উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন কেউ না খেয়ে থাকে না। আমরা সকলের খাদ্য নিশ্চয়তা নিশ্চিত করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ এ ক্ষমতায় এসে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছি। আর যার কারণে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সহায় সম্বলহীন মানুষের স্থায়ী ঠিকানা নিশ্চিত করেছি। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবেনা, ভূমিহীন থাকবেনা সেটাই আমাদের লক্ষ্য। বেকারত্ব কমিয়ে যুবকদের কর্মসংস্থানমুখী করেছি বলেই আজ বিএনপি জামায়াত তরুণদের কাছে প্রত্যাখাত।

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ এতিমরে না দিয়ে নিজের একাউন্টে রেখে মেরে দিয়েছে। আর তার ছেলে বিদেশে পালিয়ে আছে। কোটি কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করেছে। দশট্রাক অস্ত্র চোরাকাবারির সাথেও সে জড়িত এবং সাজাপ্রাপ্ত। আজকে বিএনপি সরকারের পতন ঘটাবে নানা রকমের আন্দোলনের হুমকি দেয়। তাদেরকে একটি কথা বলে দিতে চাই, জনরায়ে ক্ষমতায় এসে আজ দেশকে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বদলে দিয়েছে। সুতরাং ঐ সমস্ত ভয় আওয়ামী লীগকে দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। বরং খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিলো বলেই ১৫ ফেব্রæয়ারী নির্বাচনের পর জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছে, এটা তাদের মনে রাখা উচিত। ওরা ভোট চোর, ওরা জনগণের অর্থ চোর, ওরা খুনী, বিএনপি জামায়াত মানে হচ্ছে খুনি, হত্যাকারী, সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদে বিশ^াসী।

পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ মানে শান্তি, আওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ^াসী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি আবারও নৌকায় ভোট চেয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

বক্তৃতার শুরুতে তিনি প্রয়াত নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণ করেন। সেই সাথে চীনের প্রেসিডেন্ট শিং জিন পিং এর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। টানেল বাস্তবায়নে প্রকৌশলী, শ্রমিক-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেতু সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সকলের অবদানের কথাও তিনি স্মরণ করেন।

সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।

তার আগে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করেন আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী পৌনে ১২টায় টানেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তারপর গাড়ী বহর নিয়ে টানেল পার হয়ে আনোয়ারা প্রান্তে টোল পরিশোধ করেন। টোল পরিশোধ শেষে আনোয়ারার কেইপিজেড মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভা মঞ্চে উপস্থিত হন। মঞ্চে উপস্থিত হয়ে তিনি কয়েকটি স্মারক ডাক টিকেট উন্মোচন করেন। সেই সাথে আরও কয়েকটি প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন