মাঠের অভাবে খেলাধুলা বঞ্চিত কর্ণফুলী খোয়াজনগর প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা

মাঠের অভাবে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলাধীন খোয়াজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত যুগ যুগ ধরে। বিদ্যালয়ের যথেষ্ট পরিমান খালি জায়গা থাকার পরও তা অন্যদের দখলে থাকায় তা ব্যবহার করতে পারছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। ফলে শিক্ষার্থীর স্কুলগৃহেই একপ্রকার আবদ্ধ থেকে তাদের দিনপার করেন।

জানা গেছে, বিদ্যালয়ের ১শ শতক জমির মধ্যে ৮৫ শতক জমিই দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। দখলকৃত জমিতে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের ফলে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ আইনী লড়াই শেষে ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের অনূকুলে আদালতের রায় আসায় তাতে নতুন করে মাঠ ভরাট করে শিশুদের খেলাধুলার উপযোগী করে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ। বিদ্যালয়ের অনুকূলে রায় পাওয়ার বিষয়টি শনিবার (২৬ আগস্ট) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি। মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মামুনুর রশিদ এবং সহকারী কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড) পিযুষ কুমার চৌধুরী বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে মাঠ ভরাটের কাজ শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

বর্তমানে শ্রেণিকক্ষ ছাড়া বিদ্যালয়টিতে কোনো মাঠ নেই। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হলেই সড়কে অবস্থান করতে হচ্ছে। মাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় খেলাধুলা করছে এবং শিক্ষকরা গাড়ি চলাচলে শিক্ষার্থীদের পাহারা দিতে হচ্ছে। এ বিষয়ে দখলকৃত জমির সাইনবোর্ডে লিখা মুঠোফোনে নম্বরে বারবার কল করলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৬শ শিক্ষার্থী ও ১২ জন শিক্ষক রয়েছে। ১৯৬২ সালে জনৈক জামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বিদ্যালয়ের নামে এক একর জমি বিক্রিয় মূল্যে রেজিস্ট্রি করে দেন। কিন্তু জামাল হোসেনের উত্তরসূরি আবুল কালাম ভূমিদাতা দাবি করে আসলেও কৌশলে এসব জমি নিজের নামে নামজারি করে নেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মিচ মামলায় আবুল কালামের নামজারি বাতিল করে দেন ভূমি অফিস। ২০১২ সালে বিদ্যালয়ের এসব জমিতে নতুন ভবন নির্মাণ করতে গেলে তারা বাধা দেয়। এ বিষয়ে স্থানীয়রা জমি উদ্ধারে মানববন্ধনসহ ভূমিমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপিও প্রদান করে। দখলকারী কর্তৃক বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা হাকিমের আদালত চট্টগ্রাম মহানগর (মিচ মামলা নং ১৭৬৬/১৯) ১৪৫ ধারা দায়ের করেন। এতে দু-পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা ও শুনানী শেষে দীর্ঘ তিন বছর পর বিজ্ঞ আদালত আদেশ প্রদান করেন। আদেশে প্রতিপক্ষকে বিদ্যালয়ের জায়গায় (বি.এস দাগ ২০২৭) প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এখন সেখানে তারা প্রবেশের চেষ্টা করলে সেটা আইনত অবৈধ বলে গণ্য হবে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামিরা পারভীন বলেন, করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুযোগে বিদ্যালয়ের ৮৫ শতক জমিতে বেড়া দিয়ে দখল করে নেয় আবুল কালাম। এখন বিদ্যালয়ের ভবন ছাড়া আমাদের কোনো মাঠ নেই। শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় জমির অভাবে নতুন ভবনও নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহম্মেদ বলেন, আদালত ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্কুলের জমি ছেড়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর জমি দখল করে রখেছেন আবুল কালামের পরিবার। এ বিষয়ে আমি সংবাদ সম্মেলনও করেছি। শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ, নতুন ভবন নির্মাণে জমি দরকার। এ জন্য আমি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

আরও পড়ুন