মিরসরাই জোরারগঞ্জ : দেখে এমন ব্রীজ, যে কেউ হবেন ফ্রিজ

চলতি বছরের শুরুর দিকে সত্তর বছর বয়সী নুরুল আবছার ভাঙ্গা ব্রীজ পার হতে গিয়ে খালে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যুবরণ করেন। সম্প্রতি দুই শিশু ব্রীজ থেকে পড়ে মারাত্বকভাবে আহত হয়।নিত্যদিন এমন মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাচল ৫ বছর পূর্বে ভেঙ্গে যাওয়া একটি ব্রীজ দিয়ে। এটি মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ তাজপুর ও ওসমানপুর ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব সাহেবপুর গ্রামের ডালিয়া খালের উপর নির্মিত এয়াকুব আলী সড়কের মোহাম্মদীয়া বটতল সংযোগ ব্রীজ। ৩৫ বছর পুরনো ব্রীজের কারণে দুই গ্রামের ৫ হাজার মানুষ প্রতিনিয়তই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ভাঙ্গা ব্রীজের কারণে স্থানীয়দের আড়াই কিলোমিটার সড়ক পথ পাঁয়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়।তবে কবে নাগাদ এই ব্রীজ সংস্কার বা পূণঃ নির্মাণ হবে সেই বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ নিশ্চিত করেনি।
জানা যায়, জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ তাজপুর ও ওসমানপুর ইউনিয়নের পূর্ব সাহেবপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা পড়–য়া শিক্ষার্থীরা এয়াকুব আলী সড়কেরমোহাম্মদীয়া বটতল সংযোগ ব্রীজদিয়ে তাজপুর বড় জামে মসজিদ, তাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিষুমিয়ারহাট মাদ্রাসা ও এতিমখানা, ওসমানপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, জোরারগঞ্জ জে.বি উচ্চ বিদ্যালয়, মারকাজুল উলুম মাদ্রাসা, জোরারগঞ্জ মহিলা কলেজ, বারইয়ারহাট কলেজ, মিরসরাই বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ যাওয়ার জন্য বিকল্পহীনপথ হিসেবে ভাঙ্গা ব্রীজটি ব্যবহার করে থাকেন। ১৯৮৬ সালে নির্মিত ৪৫ ফুট দৈর্ঘ্যরে এই ব্রীজগত ৫বছর পূর্বে ভেঙ্গে পড়ায়পাঁয়ে হেঁটে চলাচল করাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ব্রীজের মাঝখানে ভেঙে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সবরকম যানবাহন চলাচলবন্ধ রয়েছে। এছাড়াব্রীজের বেশকিছু অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে, একপাশের রেলিং পুরোপুরিভাবে ভেঙ্গে গেছে; অন্যপাশের রেলিং ভেঙ্গে রড় বেরিয়ে এসেছে।দীর্ঘসময় ব্রীজটি সংষ্কারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারী না থাকায় ক্ষুদ্ধস্থানীয়রা এবং জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বহীনতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন।
স্থানীয় কৃষক হোরা মিয়া বলেন, ভাঙ্গা ব্রীজের কারণে ফসল আনানেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। ব্রীজটি দিয়ে পাঁয়ে হেঁটে যেতেও ভয় করে। যেকোন সময় ধসে পড়তে পারে ব্রীজটি।
তাজপুর বড় জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, সচরাচর চলাচল ছাড়াও একটা মানুষ মারা গেলে লাশ নিয়ে যেতে কষ্টের কোন সীমা থাকে না। ব্রীজটি দ্রæত সংস্কার করার দাবী জানাচ্ছি।
স্থানীয় বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, ব্রীজটি দিয়ে বিশেষ করে অসুস্থ্য রোগী ও ভারী কোন জিনিস আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয় দুই গ্রামের ৫ হাজার মানুষকে।
শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, দেখতে দেখতে ৫ বছর কেটে গেলেও ভাঙ্গা ব্রীজ ভাঙ্গাই থেকে গেল, পুণরায় নির্মাণ বা সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমরা যারা কোমলমতি শিক্ষার্থী আছি তারা প্রতিনিয়তই ভয়ে ভয়ে ব্রীজ পারাপার হই। ব্রীজ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে আমি নিজেও আহত হয়েছি।
ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দীন বলেন, প্রায় ৫ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দুই গ্রামের মানুষকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পাঠিয়ে অভিভাবকরা নিত্যদিন আতংকের মধ্যে থাকেন কখন দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল খায়ের মিয়া বলেন, আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। টেন্ডার হলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই ব্রীজের কাজ শুরু হবে।
জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকসুদ আহমদ চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ তাজপুর এলাকার ডালিয়া খালের উপর নির্মিত ক্ষতিগ্রস্ত বটতল ব্রীজটি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের একটা টিম চলতি বছরের শুরুর দিকে সরেজমিন পরিদর্শন করে মাটি পরীক্ষার পর রিপোর্ট সংগ্রহ করে।
মিরসরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বটতলব্রীজ সংস্কারের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। সরেজমিন পরিদর্শন করে ওই স্থানের মাটি পরীক্ষার পর রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। টেন্ডার হলে কাজ শুরু হবে।

আরও পড়ুন