চট্টগ্রামে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে এক ছাত্রদল নেতাসহ তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষে প্রায় ২০জনেরও বেশি আহত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল ৬টার দিকে ৩জন মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ৩জনের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রয়েছে। তাদের মধ্যে একজন চট্টগ্রাম কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ ওয়াসিম আকরাম (২৩), আরেকজন ফার্নিচার কর্মচারী মোঃ ফারুক (৩২)। তবে অপর নিহতের নাম পরিচয় এখনও শনাক্ত করা যায়নি। এছাড়াও ৭-৮ জন আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল ভর্তি রয়েছেন। নিহত ওয়াসিম আকরামের বাড়ী কক্সবাজারের পেকুয়ায় এবং ফার্নিচার কর্মচারী ফারুকের বাড়ী কুমিল্লায়। বাকি একজনের নাম ফিরোজ, তার পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তিনজনের মরদেহ চমেক মর্গে রয়েছে।
এদিকে বিএনপি দাবি করেছে, নিহত ওয়াসিম আকরাম ছাত্রদল নেতা। সে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক, পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য এবং চট্টগ্রাম কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলাধীন মেহেরনামা গ্রামের সবুর আলমের ছেলে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার এডিসি (দক্ষিণ) মোঃ আশরাফুল করিম বলেন, বিকেলে সোয়া ছয়টা পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা অনেক। আমাদের অনেক পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। তাদের সংখ্যা এখন বলা যাচ্ছে না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগ শুরুতে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করলেও পরে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ শুরু করে। কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। পরে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় ছাত্রলীগ পিছু হটলেও পরে আবার অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দ্বিগুন বেগে হামলায় জড়িয়ে যায়।
এদিকে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপে নগরীর দুই নম্বর গেইট থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ঘটনাস্থলে দেখা গেছে, বিকেল সাড়ে ৩টার আগে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরাও ভাগ হয়ে ষোলশহর রেলস্টেশন, দুই নম্বর গেইট এবং মুরাদপুরে অবস্থান নেয়। দুই নম্বর গেইটে কোটাবিরোধীরা সংঘবদ্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করতে চাইলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেন। এতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় ওয়াসা মোড় থেকে জিইসি হয়ে আসা একটি মিছিল থেকে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। উভয়পক্ষ পরস্পরের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। একইভাবে ষোলশহর রেলস্টেশনের সামনের সড়ক এবং মুরাদপুরেও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ চলছে। দুই নম্বর গেইট ও আশপাশের এলাকায় আট থেকে ১০টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের কারণে নগরীর টাইগারপাস থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আশপাশের অন্যান্য সড়কগুলোতে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন আছে। তবে সংঘাতের মধ্যেও পুলিশ দৃশ্যমান নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
চট্টগ্রামে শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতাসহ নিহত-২