এসি আকরামের জবানবন্দিঃ জেনারেল নুর উদ্দীন বললেন, আপনি দেশকে আলোকিত করছেন, আপনার গ্রাম অন্ধকারে থাকবে কেন !

প্রথম প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২১ইং
কাউকেই কখনো অবহেলা করতে নেই। মহান আল্লাহ কার উছিলায় কাকে কিভাবে কাজে লাগান তার একটি প্রমাণ পেয়েছিলেন এসি আকরাম হোসাইন।

১৯৯৭ সালের কথা। গুলশান এলাকায় কোন অভিযানে গেলেই হাতে বেশী সময় থাকলে গুলশান ১নাম্বার মার্কেটের একটি ফার্নিচারের দোকানে গিয়ে বসতেন এবং সময় পার করতেন। এভাবে ওই ফার্নিচার ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। দোকানটিতে পুরোনো বিদেশী ফার্নিচার ও বিদেশি দূতাবাসের ব্যবহার করা অনেক দূর্লভ কাঠের সামগ্রী বেচাকেনা হয়। যার ফলে ওই এলাকার অনেক অভিজাত পরিবারের ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, এমপি, মন্ত্রী ও ভিআইপি ক্রেতার যাতায়াত আছে ফার্নিচারের দোকানটিতে। আলাপচারিতায় ওই ব্যবসায়ী এসি আকরামকে জানালেন জেনারেল নুর উদ্দীন তার দোকানে প্রায়ই আসেন। বিদেশি পুরোনো দূর্লভ ফার্নিচার সংগ্রহ তার সখ।

দোকান মালিক আরো জানালেন, জেনারেল নুর উদ্দীন তাকে অনেক স্নেহ করেন। জেনারেল নুর উদ্দীন তখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রী। এসি আকরাম অনেকটা কৌতুহলভাবেই তাকে বললেন, আপনি কি আমাকে নুর উদ্দীন সাহেবকে দিয়ে একটি কাজ করিয়ে দিতে পারবেন? ফার্নিচার ব্যবসায়ী জানতে চাইলেন কি কাজ? এসি আকরাম বললেন, আমার গ্রামে বিদ্যুৎ লাইনের ব্যবস্থা করতে হবে।ফার্নিচার ব্যবসায়ী জানালেন, চলুন একদিন মন্ত্রী পাড়ায় ওনার অফিসে আপনাকে নিয়ে দেখা করি। টাইম শিডিউল ঠিক করে একদিন সকালেই সচিবালয়ে গেলেন। মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারীও ওই ব্যবসায়ীকে চেনেন। তিনি এসি আকরামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে সরাসরি মন্ত্রী কাছে নিয়ে গেলেন। এসি আকরামের আর বুঝতে বাকি নেই, এই ফার্নিচার ব্যবসায়ীকে আসলেই মন্ত্রী অনেক স্নেহ করেন। এসি আকরামকে জেনারেল নুর উদ্দীনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই জেনারেল নুর উদ্দীন বললেন, আপনার কথা অনেক শুনেছি। কি সমস্যা বলুন। এসি আকরাম বললেন, স্যার আমার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল সদরের হুগড়া ইউনিয়নে কোন বিদুৎ নাই। আমার গ্রামবাসী এই শতাব্দীতেও অন্ধকারে থাকে।

জেনারেল নুর উদ্দীন বললেন, আপনি দেশে বড় বড় অপরাধী ধরে সন্ত্রাস নির্মূল করে দেশ ও সমাজকে আলোকিত করছেন আর আপনার গ্রাম অন্ধকারে থাকবে কেন? এই বলে জেনারেল নুর উদ্দীন পিডিবির চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়ে বলে দিলেন, এসি আকরামের কথা এবং যতদ্রুত সম্ভব হুগড়ায় বিদ্যুৎ এর লাইন টেনে গ্রামবাসীর ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েই যেন তাকে জানানো হয়। সাবেক সেনাপ্রধান ও একজন মন্ত্রীর কাছ থেকে এমন সম্মান পেয়ে তিনি অভিভূত হয়ে পড়েন। তার পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার মূল্যায়নেই আজ এই সম্মান বলে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন। একজন ফার্নিচার ব্যবসায়ীর সহায়তায় তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া সম্মানের কথা তার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলেই বর্ণনা করলেন। এরপরই পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে একটি এমাউন্টের চাঁদা দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদস্য ও পরে প্রথমেই এসি আকরামের বাড়িতে বিদুৎ সংযোগ দেন। এরপর হুগড়া গ্রামবাসীদের সকলকেই পল্লী বিদ্যুৎ এর সদস্য করা হয়।

গ্রামবাসীর সদস্য চাঁদাও এসি আকরাম বহন করেন এবং সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এর আলোয়ে আলোকিত করে দেন। অন্ধকার গ্রাম হুগড়া এখন বিদ্যুৎ ও জ্ঞানের আলোয় আলোকিত। এসি আকরাম হোসাইন অপরাধী গ্রেফতারে সফলতার পাশাপাশি তার গ্রামের মানুষের জীবন ব্যবস্থার উন্নয়নেও কাজ করতে পেরে নিজেকে বেশ ভাগ্যবান মনে করেছিলেন। তিনি গুলশানের সেই ফার্নিচার ব্যবসায়ী ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী জেনারেল নুর উদ্দীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। “আপনি দেশকে আলোকিত করছেন আর আপনার গ্রাম অন্ধকারে থাকবে” এটা কি করে হতে পারে সাবেক সেনাপ্রধান ও মন্ত্রী নুর উদ্দীনের এই কথাটি তার পেশাদারী জীবনের একটি বড় পাওয়া বলে তিনি মনে করেছিলেন।

আরও পড়ুন