এসি আকরামের জবানবন্দিঃ ফেলে দেওয়া খাম জানিয়েছিলো জোসেফের নামধাম
মরহুম আকরাম হোসাইন একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। দেশবাসীর কাছে তিনি এসি আকরাম নামেই পরিচিত ছিলেন। ৭০ হতে ৮০ ও ৯০’র দশকে ঢাকাসহ সারাদেশের অপরাধীদের কাছে এক আতঙ্কের নাম এসি আকরাম। ক্লু লেস মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধীদের আটক বা কোন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগাম সংবাদ পেলেই যেকোন মূল্যে তা রোধ করে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসাই ছিল তার নেশা-পেশা।
২০২১ সালের ১৬ জুলাই পুলিশের সাবেক এই এসি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে হাসপাতালের বেডে শুয়ে বসে তিনি কথা বলেছিলেন সিটিজি সংবাদ ডট কম’র ঢাকা ব্যুরো প্রধান ইকবাল কবিরের সাথে। আলাপচারিতায় ওঠে এসেছিলো তার কর্মজীবনের নানা সফলতা ও ব্যর্থতার গল্প। তার বয়ানে ওঠে আসা সেসব লোমহর্ষক তথ্য আমরা ধারাবাহিকভাবে ২৮টি পর্বে প্রকাশ করেছিলাম সিটিজি সংবাদ ডট কম-এ।
সে সময় আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফকে নিয়ে বলা তার কথাগুলো অনিবার্য কারণবশত আমরা প্রকাশ করিনি। ২৮ পর্বেই আমরা সাক্ষাৎকারটির ইতি টেনেছিলাম। পাঠকদের আগ্রহ এবং পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় আজ প্রকাশিত হলো চাঞ্চল্যকর জোসেফ কাহিনি।
একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ঢাকার একজন সংসদসদস্যকে হত্যার মিশন নিয়ে। বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে এমন খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর ঘুম হারাম হয়ে যায় ঢাকার গোয়েন্দা বিভাগের জাঁদরেল পুলিশ কর্মকর্তা এসি আকরামের। পুলিশ প্রশাসনে কাজ পাগলা অফিসার খ্যাত এসি আকরাম দ্রুত ছুটে যান তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে। তিনি বিষয়টি অবহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইজিপির মাধ্যমে ঢাকার সেই সংসদ সদস্যের কাছে বার্তা পৌছানো হয়, “আপনার জীবন ঝুঁকিতে আছে, কয়েকদিন বাসা থেকে বের হবেন না।“ এরপর ওই সংসদসদস্য বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে নিজের নিরাপত্তা জোরদার করেন। কিন্তু কেন তার জীবন ঝুঁকিতে, কারা তাকে হত্যা করতে সুপারি দিয়েছে এ বিষয়ে সংসদ সদস্যকে কিছুই অবহিত করা হয়নি। যতদ্রুত সম্ভব যেকোন মূল্যে ওই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে আটক করে আইনের আওতায় আনতে হবে। জীবন রক্ষা করতে হবে সংসদ সদস্যের।
কাজ পাগলা এসি আকরামের কাছে এ যেনো যুদ্ধে জয়ের দায়িত্ব কাঁধে তুলে দেয়া হয়। কোন অপারেশনে এসি আকরামের ব্যর্থতার রেকর্ড নেই। তাই তাকে এই মিশনেও জয়ী হতেই হবে। যেমন ভাবনা তেমনি কাজ। স্পর্শকাতর বিষয়। মাননীয় সংসদ সদস্যের জীবন বাঁচানোর বিষয়। ব্যর্থ হলে পুলিশে চাকরি জীবনের সব ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যাবে। তাই সর্বক্ষণ মাথায় একটাই ভাবনা। বাংলাদেশে আসলে সেই শীর্ষ সন্ত্রাসী কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন? ভাবলেন প্রথমেই এমন ব্যক্তিকে সনাক্ত করতে পারলেই বহুল কাংখিত সেই সন্ত্রাসীকে হাতে পাওয়া যেতে পারে। যেমন ভাবনা তেমনই কাজ। দ্রৃুত খোঁজখবর নেয়া শুরু হলো।ঢাকায় কার কার সঙ্গে ওই শীর্ষ সন্ত্রাসী যোগাযোগ করতে পারেন। হ্যাঁ, পাওয়া গেলো সেই সন্ত্রাসীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নাম, ঠিকানা পরিচয়। সময়ক্ষেপণ করার সময় নেই। দেশের আলোচিত এই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে আটকের সময়কালটি ছিলো ২১বছর পর ক্ষমতায় আসা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের ১৯৯৮ সালের কথা।
সরকার ঘোষিত আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফকে আটকের ঘটনা। সেই সময় আটকের পর থেকেই জোসেফ দীর্ঘ কারাবাস করেন। এরপর নিন্ম আদালতের একটি মামলায় তার মৃত্যুদন্ড ও পরে উচ্চ আদালতে আপিল করে যাবজ্জীবন সাজা হলেও পরে প্রেসিডেন্টের ক্ষমায় তিনি মুক্ত জীবন যাপনে ফিরে আসেন।
৯০দশকে সরকারের ঘোষিত চার শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম ছিলেন জোসেফ। চারজনের তিনজনকেই আটক করেছিলেন এসি আকরাম। সেই তিনজন হলেন সুইডেন আসলাম, জোসেফ, বিকাশ। আজ অবধি অধরাই থেকে গেছে বিকাশের আরেক ভাই প্রকাশ। প্রকাশকে আজ-অব্দি আটক করতে পারেনি পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের জাঁদরেল অফিসার এসি আকরাম কিভাবে আটক করেছিলেন জোসেফকে ?
অপারেশন সেভ লাইফ :: এসি আকরাম হোসাইন দু’জন চৌকস পুলিশ ইন্সপেক্টর, তিনজন সাব- ইন্সপেক্টর ও দশজন সাহসি সিপাহীর সমন্বয়ে গঠন করলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফকে আটকের টিম। আর এই অভিযানের নাম দিলেন “অপারেশনের সেভ লাইফ”। রাত ১২ টা। যখন ঢাকার রাজপথ নিরব সবাই ঘুম দুটি গাড়ি মিন্টু রোডের ডিবি অফিস থেকে রওনা হলো মৌচাক মালিবাগের দিকে। সেই কাঙ্খিত বাড়িটিকে টার্গেট করে গাড়ি এগিয়ে চলছে। এসি আকরাম হোসাইন সামনে বসেই চালককে নির্কোদেশনা দিচ্ছেন গাড়ি কোন পথে যাবে। বাকীর ফলো করছে। অপারেশনের আগে সাধারণত রেকি করার রেওয়াজ থাকলেও ভয়ঙ্কর শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফকে আটকের অভিযানে তা করা হয়নি। এতে করে আসামি টের পেয়ে গেলে তাকে দ্বিতীয় দফা অভিযানে আটক কঠিন হবে। এমন অভিজ্ঞতার আলোকেই এসি আকরামের এ-ই কৌশল।রাতের আধারেই মৌচাক থেকে রামপুরার দিকে যেতেই হাতের ডান দিকে মোড় নিয়েই সেই চারতলা বাড়িটির সন্ধান মিললো। বিরাট বড় বাড়ি। ভেতরে ঢুকে সাদা পোষাকের ডিবি’র দলটি চারপাশ থেকেই বাড়িটি ঘিরে ফেললেন খুব সতর্কতার সঙ্গে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এসি আকরাম দ্রুত সিড়ি বেয়ে জোসেফের বন্ধুর তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটের দরজায় পৌঁছে গেলেন, সঙ্গে দুইজন ইন্সপেক্টর। সতর্কতার সঙ্গে দরজায় নক করলেন, বিনয়ের সঙ্গে দরজা খুলতে বললেন। ভেতর থেকে তেমন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ রেসপন্স করছে না। আবারও নক করলেন, পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বললেন। পুলিশ পরিচয় পাওয়ার অনেকক্ষণ পর দরজা খুললেন এক তরুণ। নিজের নাম বলে সাংবাদিক পরিচয় দিলেন। এসি আকরাম জোসেপের বিষয় জানতে চাইলে, সাংবাদিক জোসেফের সঙ্গে তার যোগাযোগের বিষয়টি অস্বীকার করতে শুরু করলেন। এসি আকরাম সব বিষয় নিশ্চিত হয়েই অভিযানে এসেছি বলে জানালেও সাংবাদিক জোসেফের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি বারবার অস্বীকার করেই আসছিলেন। কথোপকথনের এক পর্যায়ে একজন সিপাহী নীচ থেকে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে এসে এসি আকরামের নিকট একটি প্যাকেট খাম হাতে দিয়ে বললেন, “ স্যার আমি যখন এই ফ্ল্যাটের বরাবর নীচে দাঁড়িয়ে ছিলাম, মনে হয় আপনারা দরোজা নক করার পরই আমার মাথার উপর এই প্যাকেটটি পড়ে। তখন প্যাকেটটি খুলে দেখা যায় এর ভেতর একটি পাসপোর্ট ও বেশ কয়েকটি ছবি। পাসপোর্টটির বাহকের নাম তোফায়েল আহমেদ জোসেফ। একেই বলে পরবি তো পর মালিক ঘাড়েই। এবার সাংবাদিককে এসি আকরাম বললেন, “তুমি আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে এটা নিচে ফেলে দিয়েছো, এবার সাংবাদিক পরিচয়দানকারী জোসেফের বন্ধু অকপটে স্বীকার করলেন, জোসেফ তাকে পাসপোর্টে ভিসা লাগাতে দিয়েছে। তার সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি গোপন করতেই পাসপোর্টটি নীচে ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত পাসপোর্টটি পুলিশের ওপরেই পড়ে। এসি আকরাম জোসেফকে আটকে সহযোগিতার কথা বললেন। এই সাংবাদিক পরিচয়দানকারী তরুণ জানালেন, “দিনে সে নারায়নগন্জ শামীম ওসমানের মহল্লার একটি বাড়ি থেকে সে জোসেফের পাসপোর্টটি নিয়ে এসেছে। এসি আকরাম তাকে সঙ্গে নিয়েই রওনা দিলেন নারায়নগঞ্জের ওই বাড়ির গন্তব্যে। অভিযানের নাম “অপারেশন সেভ লাইফ” তাই সময় নষ্ট করার সময়ও যেনো নেই। নারায়নগঞ্জ থানায় ওসি থাকার সুবাদে এসি আকরাম নারায়ণগঞ্জ শহর ও অলিগলি পথঘাট সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা আছে। গন্তব্যে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভোর হয়ে যায়। তখন অভিযানে শামীম ওসমানের মহল্লায় বাধসাধে এলাকাবাসী। পুলিশকে এলাকায় ঢুকতে দিবেনা। শোরগোল বাঁধিয়ে দেন। গোটা মহল্লার মানুষ জেগে ওঠেছে। এসি আকরাম নিজের ক্যারিশমায় জনতাকে বুঝিয়ে যতদ্রুত সম্ভব তার কাঙ্খিত বাড়িতে পৌঁছে যান। ততক্ষণে জোসেফ ভবনের সঙ্গে লাগোয়া ভবন থাকায় এ ছাদ থেকে ওই ছাদ এ ভাবেই টপকে টপকে পালিয়ে যান। অনেকটা হতাশ হলেও দমবার অফিসার তিনি নন। তবে জোসেফের সাংবাদিক পরিচয়দানকারী বন্ধুকে হাতছাড়া করেননি এসি আকরাম। খুবই সতর্কতার সঙ্গে জোসেফের বন্ধুকে এসি আকরামের সঙ্গেই রাখেন যাতে জোসেফ কোন ধারণাই করতে না পারেন।
জোসেফের বন্ধুকে সঙ্গে নিয়েই ঢাকায় ফিরেন এসি আকরাম। আসার পথেই কৌশল ঠিক করে ফেলেন, নিজে বাড়িতে না ফিরে একটি অপরিচিত আবাসিক হোটেলে ওঠেন। সঙ্গে জোসেফের বন্ধুকে কঠোর নজরদারিতে রাখেন। কারণ, এই বন্ধু আর পাসপোর্টই এসি আকরামকে পৌছে দিবে শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফের কাছে। সকাল আটটার দিকে বন্ধুর কাছে ফোন আসলো জোসেফের। ফোনে জোসেফ জানাচ্ছিলেন, “তার পেছনে পুলিশ লেগেছে, যতদ্রুত সম্ভব তার পাসপোর্ট ভিসা লাগিয়ে দিতে।“ সাংবাদিক দাবিদার জোসেফের বন্ধু এসি আকরামের শেখানো মতে ভিসা ফর্মে সই এবং তার সঙ্গে জরুরি দেখা দরকার বলে জানান। রাতে সাক্ষাতের সময়, স্থান ঠিক করা হয়। আবারও নারায়নগঞ্জ। এবার শামীম ওসমানের মহল্লা নয়। নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের পশ্চিম দিকের মহল্লা। জোসেফ ম্যাপ করে বুঝিয়ে দেয় বন্ধুকে কিভাবে আসতে হবে। রাতেই আবারও রওনা হন। এবার যে বাড়িটিতে জোসেফের অবস্থানের বর্ণনা আসে তা একেবারে রোডের পাশের একটি নীচতলা বাড়ি। তখন পুলিশে মোবাইল লোকেশন সনাক্তকরণ বা আধুনিক কোন যন্ত্রপাতি ছিলো না। এসি আকরাম নারায়ণগঞ্জে ওসি থাকার সুবাদে জোসেফের বন্ধুর দেয়া বর্ণনার বাড়িটি সনাক্ত করতে তার তেমন বেগ পেতে হয়নি। আবারও সেই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। এবার যেন শিকার হাত ফসকে না যায়। বাড়িটি একতলা। খুব সতর্কতার সঙ্গে পায়ের শব্দও যেনো না হয়ে এমন কৌশলে চারপাশ থেকে বাড়িটি ঘিরে ফেলা হয়েছে। সাদা পোষাকের গোয়েন্দা দলের সকল অস্ত্র তাক করা ওই বাড়িটির দিকে। সবার সুক্ষ নজর বাড়িটি দরজা-জানালা হতে ছাদ পর্যন্ত। ছাদে উঠার সিড়ি ঘরের দরজায় সতর্ক অবস্থান। বন্ধু ফোন করে জানিয়েছিলো এক্কেবারে মেন রোডের পাশের প্রথম রুমটিতেই জোসেফের অবস্থান।
এসি আকরামের শিখিয়ে দেয়া কৌশল মতোই তার বন্ধু দরজা নক করে তার আসার কথা জানান। বন্ধুর আগমনে জোসেফ নিজেই দরজা খুলে দেন। বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ জোসেফের আর বুঝতে বাকি নেই যে, তিনি পাসপোর্ট আর ভিসার ফাঁদে পুলিশের জালে আটকে গেছেন। জোসেফ দ্রুত আলমারির দিকে এগিয়ে আলমারিতে হাত দেয়ার আগেই এসি আকরাম তাকে ঝাপটে ধরে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দেন। এরপর এসি আকরাম নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, “আলমারিতে অস্ত্র আছে আমি জানি, তাই দৌড়ে আলমারি খোলার চেষ্টা করেছো। এবার আলমারি খুলে পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করে জোসেফকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।এভাবেই একটানা ২৪ ঘন্টার “অপারেশন সেভ লাইফ“ এর সমাপ্তি ঘটে। সেই সঙ্গে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন এসি আকরাম। মনে মনে মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানান তার অভিযানের সাফল্যের জন্য।
নারায়নগঞ্জ শহরে থাকতেই মাইকে ফজরের আজান হচ্ছিল। এসি আকরাম জানতেন আইজিপি নামাজ পড়েন। তাই ভাবলেন নামাজের পর আইজিপি স্যারকে জানাবেন জোসেফকে গ্রেফতারের সংবাদটি। নারায়নগঞ্জ শহর ছেড়ে ঢাকামুখী গাড়ির বহরটি যখন ফতুল্লা এসে পৌছায় তখন ফজরের নামাজ শেষ। এরপর এসি আকরাম তৎকালীন আইজিপি আজিজুল হককে শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফকে আটকের কথা জানান। আইজিপি এসি আকরামের কাছে জানতে চাচ্ছিলেন, “আসলেই কি জোসেফকে গ্রেফতার করা হয়েছে? এসি আকরাম বললেন, “স্যার আমি নিজে গ্রেফতার করে ঢাকার পথে আছি। এরপর সকালে জোসেফকে ডিবি অফিসে রাখা হয়। একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী এতো ভদ্র বিনয়ী তিনি ভাবতেও পারেননি বললেন, এসি আকরাম ।এরপর জোসেফ ভারত থেকে ঢাকায় একজন সংসদ সদস্যকে হত্যার মিশনের কথা স্বীকার করেন এবং তাকে কে এই সুপারি দিয়েছে কত টাকায় কন্ট্রাক্ট হয়েছ তাও জানান।
ডিবিতে রিমান্ডে থাকাকালে জোসেফ আরও জানান, বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ী তাকে ঢাকার একজন সংসদ সদস্যকে হত্যার অ্যাসাইনমেন্ট দেন। তা বাস্তবায়নেই সে ভারতে থেকে সীমান্ত পথে পাসপোর্ট ছাড়া দেশে আসে। মিশন সফল করে পাসপোর্টে ভিসা নিয়ে বৈধভাবেই ভারতে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো তার।
জোসেফ জানান, সংসদ সদস্যের হত্যার মিশন সফল হলে ওই আসনের উপ- নির্বাচনে সেই ব্যবসায়ীর (বর্তমানে ও-ই ব্যবসায়ী সরকারের খুবই কাছের লোক) নির্বাচন করার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে। ডিবির চৌকষ কাজ পাগলা অফিসারখ্যাত এসি আকরামের মেধা, দক্ষতায় শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফকে আটকের মাধ্যমে খুনের হাত থেকে বেঁচে যান একজন সংসদ সদস্য। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংসদ সদস্যের লাইফ সেভ করার কিছুদিন পরই এসি আকরাম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুবেল হত্যা ষড়যন্ত্র মূলক মামলায় নিজেও জেলে যান। এরপর আইনী প্রক্রিয়ায় উচ্চ আদালতে তিনি প্রমাণ করেন তার বিরুদ্ধে আনীত রুবেল হত্যা মামলায় তিনি জড়িত ছিলেন না। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। তিনি আইনী প্রক্রিয়ায় মুক্তিলাভ করেন। তিনি যেই শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফকে আটক করেছিলেন, উচ্চ আদালতে সাজা বহাল থাকা সত্বেও জোসেফ পায় রাষ্ট্রপতির মার্সি পিটিশন ক্ষমা।
এ প্রসঙ্গে এসি আকরাম মনে করেন, এতে পুলিশ অপরাধী ধরায় নিরুৎসাহিত হবে। কারণ, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে আটকের পর নিন্ম আদালত হতে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সাজা বহাল থাকা সত্বেও প্রেসিডেন্টের ক্ষমা, অপরাধকেই উৎসাহিত করা। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রেফারেন্স হয়ে থাকবে। এ কালচার থেকে আমাদের বের হয়ে আসা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, যে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটক করে আমি পুরষ্কার পেয়েছি, তাদেরই যদি সাধারণ ক্ষমা করা হয়, তবে আমার বীরত্বের পদকের কি হবে?