যাত্রীবাহী রেলে আবারও চালু হচ্ছে পণ্য পরিবহণ সেবা

কম সময়ে স্বল্প খরচে প্রান্তিক এলাকায় মালামাল পৌঁছে দিয়ে রেলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ হিসেবে আগামী রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) চালু হচ্ছে রেলের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেনে পণ্য পরিবহন সেবা। প্রত্যেক ট্রেনে একটি করে লাগেজ ভ্যান যুক্ত থাকবে। এতে পন্য পরিবহণ সহজতর হবে বলে রেল কর্তৃপক্ষের আশা।

জানা গেছে, চীন থেকে ৭৫টি লাগেজ ভ্যান আমদানি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রথম লটের ২০টি লাগেজ ভ্যান বিভিন্ন ট্রেনে ব্যবহার, লোডিং, আনলোডিং স্টেশন নির্ধারণ করেছে পরিবহন বিভাগ। ২০টি লাগেজ ভ্যানের মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ১৩ ও পশ্চিমাঞ্চলে তিনটি যুক্ত হচ্ছে; বাকি চারটি স্পেয়ার হিসেবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও লালমনিরহাট ইয়ার্ডে থাকবে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট রুটে পারাবাত এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের পাহাড়িকা ও উদয়ন, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটের বিজয় এক্সপ্রেস, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটের ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, ঢাকা-ভূঞাপুর রুটের জামালপুর এক্সপ্রেস, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটের হাওর এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের মহানগর এক্সপ্রেস, ঢাকা-সিলেট রুটের জয়ন্তিকা ও উপবন ট্রেনে একটি এবং চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনে দুটি লাগেজ ভ্যান যুক্ত হবে।

এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চলের ঢাকা-রংপুর রুটের রংপুর এক্সপ্রেস, ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটের কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ও ঢাকা-লালমনিরহাট রুটের লালমনিরহাট এক্সপ্রেস ট্রেনে একটি করে লাগেজ ভ্যান যুক্ত হবে।

ঢাকা-সিলেট রুটে পারাবাত এক্সপ্রেস ট্রেনের লাগেজ ভ্যানে ঢাকা ও সিলেট থেকে পণ্য তোলা ও নামানো যাবে। পাহাড়িকা ও উদয়নে চট্টগ্রাম, সিলেট, শ্রীমঙ্গল স্টেশন, বিজয় এক্সপ্রেসে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, গৌরীপুর, কিশোরগঞ্জ ও ভৈরববাজার, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসে ঢাকা, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহবাজার, ইসলামপুর বাজার, জামালপুর এক্সপ্রেসে ঢাকা, তারাকান্দি, জামালপুর, সরিষাবাড়ী, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসে ঢাকা, নরসিংদী, ভৈরববাজার, কিশোরগঞ্জ, হাওর এক্সপ্রেসে ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, মোহনগঞ্জ, মহানগর এক্সপ্রেসে চট্টগ্রাম, ঢাকা, কুমিল্লা, লাকসাম, জয়ন্তিকা ও উপবনে ঢাকা, সিলেট, শায়েস্তাগঞ্জ, চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নরসিংদী, ভৈরববাজার, ফেনী ও লাকসাম স্টেশন থেকে পণ্য লোডিং-আনলোডিং করতে পারবে।
আগামী রবিবার থেকে লাগেজ ভ্যান পরিচালনা ও পণ্য পরিবহনে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রেলের পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগ।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, স্বল্প সময় ও কম খরচের কারণে রেলে পণ্য পরিবহনে ঝোঁক ছিল বেশি। পুরো দেশে রেল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেই মালামাল পরিবহন হতো। চাহিদা থাকলেও নানা সংকটে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে পারেনি রেলওয়ে। লাগেজ ভ্যান সংকটের কারণে পার্সেল নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানো যেত না। ফলে একটা সময় গ্রাহকরা রেলে পণ্য পরিবহন থেকে দূরে সরে যায়। বর্তমানে রেলের সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পর্যাপ্ত লাগেজ ভ্যান আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। প্রথম চালানে ২০টি লাগেজ ভ্যান এসেছে। সেগুলো দিয়ে পণ্য পরিবহন সেবা চালু হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে ভারী ও ফ্রিজিং মালামাল পরিবহনে উন্নতমানের লাগেজ ভ্যানও যুক্ত হবে।

তিনি বলেন, সড়ক পথের চেয়ে রেলে পরিবহন খরচ কম ও ঝামেলামুক্ত হওয়ার কারণে ব্যবসায়ী, প্রান্ত্রিক চাষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। খুব সহজে দেশের বিভাগ, জেলা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে মালামাল পৌঁছানো সম্ভব হবে। এতে সবাই লাভবান হবেন। এই সেবা চালুর মাধ্যমে আমরা রেলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে চাই। আশা করছি অতীতের মতো আবারও রেলে পণ্য পরিবহনের সেই জৌলুস ফিরে আসবে।

আরও পড়ুন