বন্দর পতেঙ্গায় নৌকার বিপক্ষে ছয় কাউন্সিলর

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে ২৮ জনকে টপকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া নৌকার প্রার্থী এম এ লতিফের পক্ষ না নিয়ে এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনের কেটলিকে বিজয়ী করতে কাজ করছেন ৭ কাউন্সিলর এবং ২ নারী কাউন্সিলর। আসনের ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। বাকী ৯ ওয়ার্ডের ছয় কাউন্সিলরই তার পক্ষে মাঠে রয়েছেন এবং তিন কাউন্সিলর রয়েছেন নৌকার পক্ষে। আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিজয়ী হওয়া এসব কাউন্সিলরদের মধ্যে অনেকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার পরও তারা নৌকা প্রার্থীর জন্য কাজ না করে নিজেদেরই আরেক সহকর্মীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এ আসনের অনেক ভোটার।

অর্থনীতির প্রবেশদ্বারখ্যাত বন্দর-পতেঙ্গা আসনটিতে রয়েছে সমুদ্র বন্দর, বিমান বন্দর, কাস্টমস, ইপিজেড , শিপিং কর্পোরেশন, ড্রাই ডক, ইস্টার্ন রিফাইনারি, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা ওয়েলসহ বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ আসন থেকে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এম এ লতিফ। এবার এই আসনটি ভাগিয়ে নেওয়ার জন্য নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ তিন নেতাসহ ২৮ মনোনয়ন প্রত্যাশী দৌঁড়ঝাপ করলেও শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন জুটে লতিফের ভাগ্যেই। মনোনয়ন প্রত্যাশী ২৮জনের মধ্যে ছিলেন ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবেক ছাত্রনেতা জিয়াউল হক সুমন। মনোনয়ন না পেয়ে অন্যরা সরে দাড়ালেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে থেকে গেছেন জিয়াউল হক সুমন।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২৭নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ, ২৮নং পাঠানটুলী, ২৯নং পশ্চিম মাদারবাড়ী, ৩০নং পূর্ব মাদারবাড়ী, ৩৬নং গোসাইলডাঙ্গা, ৩৭নং উত্তর মধ্যম হালিশহর, ৩৮নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, ৩৯নং দক্ষিণ হালিশহর, ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা এবং ৪১নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড। এই ১০ ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই মূলদল এবং বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বেও রয়েছেন। তারপরও নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় তাদেরকে নৌকা প্রার্থীর সাথে দেখা যাচ্ছে না বলে ভোটার ও দল সংশ্লিষ্টদের অভিমত। এই দশ কাউন্সিলরদের মধ্যে দু/একজন নৌকার পক্ষে মিছিল মিটিং ও গণসংযোগ তথা প্রচার প্রচারণায় অংশ নিলেও বাকীরা হয়তো নিরব, নয়তো স্বতন্ত্র নিয়ে সরব।

দশ কাউন্সিলরের মধ্যে দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের মোঃ শেখ জাফরুল হায়দার চৌধুরী সবুজ, পাঠানটুলী ওয়ার্ডের নজরুল ইসলাম বাহাদুর, পশ্চিম মাদারবাড়ী ওয়ার্ডের গোলাম মোঃ জোবায়ের, গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের মোর্শেদ আলী, উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, দক্ষিণ পতেঙ্গার ছালেহ আহমদ চৌধুরী ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনের কেটলি মার্কার পক্ষে প্রচার প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বলে ভোটার এবং এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে পাঠানটুলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাহাদুরের বাড়ীর গেট কেটলি সাজে সাজিয়ে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়েছে। ওই এলাকার নির্বাচনী প্রচারের প্রধান সেল হিসেবেও বাহাদুরের বাড়ীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া দক্ষিণ পাঠানটুলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবদুল কাদের এবং ৩৬নং গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সাইফুল আলম চৌধুরী, মহিলা কাউন্সিলর ফেরদৌসী আকবর এবং আফরোজা কালাম স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। অপরদিকে পূর্ব মাদারবাড়ী ওয়ার্ডের আতাউল্লা চৌধুরী, দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী, উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের আবদুল বারেক নৌকা প্রার্থীর পক্ষে প্রচার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয়া বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর জানান, নৌকার বিপক্ষে নয়, আমরা জনবিচ্ছিন্ন প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছি। গত তিনবার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন। জামায়াত বিএনপির সাথে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখেছেন। এলাকায় কাংখিত উন্নয়ন সাধনে ব্যর্থ হয়েছেন।

পক্ষান্তরে উল্লেখিত অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে এম এ লতিফ বলেন, তারা আমার বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে তারা নৌকার বিরোধীতায় নেমেছেন। আমার জনসম্পৃক্ততা ও ক্লিন ইমেজ এবং গত ১৫ বছরের কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করে নেত্রী আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। তারা এখন আমার বিরোধীতা করতে গিয়ে একপ্রকার প্রধানমন্ত্রীর সিন্ধান্তের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছেন।

আরও পড়ুন