চাঞ্চল্যকর মাদ্রাসা ছাত্র তাওহীদ ইসলামকে অপহরণ করে হত্যার পর সেপ্টিক ট্যাংকে লাশ গুমের পর মুক্তিপণের টাকা আদায়ের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারীকে মুক্তিপণের টাকাসহ রাজধানীর শ্যামপুর এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার রসুলপুর জামি’আ ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে অধ্যয়নরত মাদ্রাসাছাত্র মোঃ তাওহীদ ইসলাম (১০) নিখোঁজ হয়। পরিবারের লোকজন সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুজি করে তার সন্ধান পাওয়নি। একপর্যায় ওই দিন রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফোন করে জানায় যে, তাওহীদকে অপহরণ করা হয়েছে এবং মুক্তিপন হিসেবে ৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা দাবী করে।
পরবর্তীতে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করে( মামলা নং-৩৩/৯৫ ১১ ফেব্রুয়ারি) পরবর্তীতে তাওহিদের মা তার ছেলেকে উদ্ধারে র্যাবের নিকটও অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত অপহৃত ভিকটিম’কে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র্যাব। গত রাতে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী কেরাণীগঞ্জের পোস্তগোলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর মাদরাসা ছাত্র মোঃ তাওহীদ ইসলামকে অপহরণ করে হত্যার পর সেপ্টিক ট্যাংকে লাশ গুমের পরও মুক্তিপণের টাকা আদায়ের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী মোঃ মকবুল হোসেন (৩৭)কে গ্রেফতার করে।তার পিতার নাম আলী হোসেন, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে তার বাড়ি।উদ্ধার করা হয় মুক্তিপনের ২,৯০,০০০/- টাকা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত উক্ত অপহরণ ও হত্যার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে র্যাবের কাছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত মকবুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। ভিকটিমের পরিবার ও গ্রেফতারকৃত মকবুল একই এলাকায় বসবাস করতো এবং কিছুদিন পূর্বে গ্রেফতারকৃত মকবুল ভিকটিমের বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেছে বলে জানায়। একই এলাকায় বসবাস এবং বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করার সুবাধে তাওহিদের পরিবারের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। তাওহীদের বাবা একজন প্রবাসী। তাওহীদ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে পড়াশুনা করতো। যার ফলে সে সকালে মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে বাসা হতে বের হতো এবং বাসায় ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যা হয়ে যেতো। গ্রেফতারকৃত মকবুল এর ধারণা ছিল যে,তাওহীদের বাবা প্রবাসী তাই ভিকটিমকে অপহরণ করলে মোটা অংকের মুক্তিপন আদায় করা যাবে। এরই প্রেক্ষিতে গ্রেফতারকৃত মকবুল অল্পসময়ে অধিক অর্থ লাভের আশায় প্রায় ৬ মাস যাবৎ ভিকটিমকে অপহরণের পরিকল্পনা করে আসছিল। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১০ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারকৃত মকবুল তাওহীদ মাদ্রাসা থেকে বাড়ী ফেরার পথিমধ্যে তাওহীদের বাড়ীর রাস্তার পাশেই ওৎ পেতে থাকে। এসময় তাওহীদ মাদ্রাসা থেকে আনুমানিক রাত সাড়ে আটটার দিকে আসলে ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র পূর্বহতে ওৎ পেতে থাকা গ্রেফতারকৃত মকবুল ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে উক্ত এলাকার নিকটস্থ একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে তার হাত, পা ও মুখ বেধে রাখে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত মকবুল পূর্বে ক্রয়কৃত তার মোবাইল কৌশলে তাওহীদের বাসায় রেখে আসে। গ্রেফতারকৃত মকবুল ভিকটিমের বাসায় রেখে আসা মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তাওহীদকে অপহরণের বিষয়টি জানায় এবং ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিলে তাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। পরবর্তীতে তাওহীদের মুখের বাঁধন খুলে গেলে সে ডাক-চিৎকার করলে গ্রেফতারকৃত মকবুল ক্ষিপ্ত হয়ে তাওহীদের মুখ ও গলা মাফলার দিয়ে পেচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে উক্ত এলাকার নিকটস্থ একটি সেইফটি ট্যাংকের ভিতরে ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়। গত ১১ ফেব্রুয়ারী সকালে গ্রেফতারকৃত মকবুল মুক্তিপণের টাকা নিয়ে প্রথমে আব্দুল্লাহপুর বাজারে, সেখান থেকে রাজেন্দ্রপুর, তারপর রসুলপুর আসতে বলে এভাবেই তাওহীদের মামাকে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাতে থাকে। সর্বশেষ একই দিন আনুমানিক সকাল সাড়ে দশটায় তাওহীদের মামা গ্রেফতারকৃত মকবুলের কথা মত ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের ফুটওভার ব্রিজের উপরে ৪নং পিলারের গোড়ায় নগদ-৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা রেখে আসে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত মকবুল মুক্তিপণের টাকা নিয়ে পোস্তগোলা এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে। হোটেলে অবস্থাকালীন সময় র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে র্যাব জানিয়েছে।