কক্সবাজারে জেলেরা লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই যান সাগরে : ঘটছে প্রাণহাণি

কক্সবাজার জেলাতে ছোট-বড় মিলে ৭শ মতো নৌযান আছে। তারমধ্যে ৯৬২০ জেলে কার্ডের আওতাধীন। তবে, হিসেবের বাইরে আছে আরও তিনশতাধিক নৌযান। সবমিলে আছে দেড় হাজার জেলে। ইলিশ ধরতে গভীর সমুদ্রে যেতে হয় জেলেদের। প্রাকৃতিক দুর্যোগও সেই পেশাগত ঝুঁকিরই অংশ। কিন্তু সেই ঝুঁকি মোকাবেলায় জেলেদের প্রস্তুতি থাকে না বললেই চলে। লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই জেলেরা যাচ্ছেন সাগরে। এতে প্রতিবছরই ট্রলারডুবিতে প্রাণ হারাতে হয় জেলেদের। গত কয়েক দিনে সাগরে একাধিক ট্রলারডুবিতে অন্তত ৮ জন জেলে নিখোঁজ হন। ৭ জেলের মরদেহ উদ্ধার হয়, এখনো নিখোঁজ রয়েছে এক জেলে। এই ফিশিং ট্রলারটিতেও ছিলনা কোন লাইফ জ্যাকেট।

বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার নাজিরার টেক চ্যানেলে গত ১৯ আগষ্ট এফবি মায়ের দোয়া নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে যায়। ঝড়ের কবলে ১৯ জেলেসহ মাছ ধরার ট্রলারডুবির ঘটনাটি ঘটে। এতে ট্রলারের ৮ জেলে নিখোঁজ হন। এ সময় কোষ্টগার্ড ৮ জেলে উদ্ধার করে। অন্য বোটের সহায়তায় কুলে ফিরে আরও তিন জেলে। পর্যায়ক্রমে ৭ জন জেলের মরদেহ উদ্ধার হলেও এখনো একজন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।

নিহত জেলেরা হলেন- হোসেন আহমেদ, আজিজুল হক, মোঃ আবছার, নাজির হোসেন, নুরুল ইসলাম, মোঃ আইয়ুব ও সাইফুল ইসলাম। তারা সবাই কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের বাসিন্দা।

খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ছিদ্দিকী

বলেন, বঙ্গোপসাগরের নাজিরারটেক চ্যানেলে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ডুবে যাওয়া ট্রলারটিতে কোন জেলের লাইফ জ্যাকেট ছিল না। এতে ভেসে যায় সকলে। সব ট্রলারে থাকা জেলেদেরকে লাইফ জ্যাকেটের আওতায় আনার দাবী তুলেন তিনি।

কক্সবাজার সদর- রামু-ঈদগাঁও আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রতিজন জেলেকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছেন। এছাড়াও খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে থেকে প্রতিজন জেলে পরিবারকে ৫ হাজার টাকা ও প্রতি পরিবারকে দুইবস্তা করে চাউল অনুদান দেওয়া হয়। এর আগে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকেপ্রতিজন জেলে পরিবারকে নগদ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া।

ডুবে যাওয়া ট্রলার এফবি মায়ের দোয়ার মালিক মো. জাকির হোসেন বলেন, ১৯ জন মাঝি মাল্লা নিয়ে ১৯ আগষ্ট ডুবি যাওয়া ট্রলারে থাকা একজন জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছে। তাদের কোন লাইফ জ্যাকেট ছিলনা বলে স্বীকার করেন তিনি। জীবিত উদ্ধার হওয়া জেলে কাসেম বলেন, ‘আমি এক যুগের বেশি সময় ধরে সাগরে মাছ ধরছি।

শুক্রবার দুর্ঘটনার সময় ট্রলারটিতে কোনো লাইফ জ্যাকেট ছিল না। ফলে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ট্রলার উল্টে যাওয়ার পর আমাদের কার্যত ভাগ্যের ভরসায় থাকা ছাড়া উপায় ছিল না।’ তাঁর তথ্য মতে, ভাগ্যের কারণে ১৯ জেলের মধ্যে মাত্র ১১ জন উদ্ধার হয়। এখনো ট্রলারের ১ জেলে নিখোঁজ। তিনি বেঁচে ফিরবেন কি না সেটা বলা যাচ্ছে না। একমাত্র ওপরওয়ালাই তাঁদের বাঁচিয়ে রাখতে পারেন।

কয়েকজন জেলে বলেন, ‘ট্রলার সমুদ্রের কত গভীরে চলে গেছে, তা জানার মতো আমাদের কোনো ব্যবস্থা নেই। ট্রলারচালকদের কোনো উপযুক্ত প্রশিক্ষণও নেই। শুধু তা-ই নয়, সমুদ্রে গিয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা ট্রলার খারাপ হয়ে গেলে বন্দরে যোগাযোগের কোনো উপায় নেই।’ তবে, কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বদরুজ্জামান বলেন, জিএসএম ডিভাইসটি চালু হলে জলসীমা ভিতরে সমস্ত কিছু মনিটরিং করতে পারবো। এর ফলে জেলেরা যেকোনো বিপদের সম্মুখীন হলে আমরা মনিটরিং সেল থেকে সেটা জানতে পারবো। তিনি বলেন, এই ডিভাইস জেলেদের পুরো নিরাপত্তা দিতে পারবে। এর গুণাগুণ এতো বেশি কোন বোট আওতার বাইরে চলে গেলেও তাকে খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।

তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলাতে ছোট-বড় মিলে ৭০০ মতো নৌযান আছে। তারমধ্যে ৯৬২০ জেলে কার্ডের আওতাধীন। যাচাই বাছাই করে ১৬৭ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রলারকে এই জিএসএম ডিভাইস দেওয়া হয়েছে।

মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা জয়নাল আবেদীন বলেন, গভীর সমুদ্রে যাওয়া ট্রলারের কাছে বিপত্সংকেত পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। কারণ গভীর সমুদ্রে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক কাজ করে না। একই কারণে আবহাওয়া অফিস থেকে আগাম পূর্বাভাস জেলেরা জানতে পারেন না। জানতে না পারায় গভীর সমুদ্রে গিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়তে হয় তাঁদের ।

 

আরও পড়ুন