লেডি মাফিয়া রোজিনার গোমর ফাঁস, দুদকের মামলা
দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ২৭,৮৯,৭৭৭ টাকার তথ্য গোপনপূর্বক জ্ঞাত আরের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে ৪৭,৯২,২৭৭ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কক্সবাজার শহরের আলোচিত নারী লেডি মাফিয়া খ্যাত রোজিনা আকতার (৩০) এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।
রোজিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭(১) ধারায় শান্তিযোগ্য অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সে কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়ার রিয়াজ আহমদ ইলিয়াসের স্ত্রী। তার বিরুদ্ধে মাদক কারবারসহ অনেক অভিযোগ ও মামলা রয়েছে।
মামলার বাদী রিয়াজ উদ্দিন এজাহারে উল্লেখ করেন, রোজিনা আকতারের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার নামে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করা হয়। ২০২১ সালের ১ জুন ওই আদেশ গ্রহণ করে একই বছরের ৯ জুন তিনি সম্পদ বিবরণী দুদকে দাখিল করেন।
সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ে দেখা যায়, রোজিনা আকতার তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর সম্পদ হিসেবে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা মৌজায় ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ জমি ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকায় কিনেছেন মর্মে ঘোষণা দেন। তার দাখিল করা দলিল পর্যালোচনায় জমির মূল্য ৪৭ লাখ ৬ হাজার ৮০০ টাকা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে তিনি ২৭ লাখ ৮৬ হাজার ৮০০ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। এছাড়া তিনি তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে অস্থাবর সম্পদ হিসেবে স্বর্ণ, আসবাবপত্র, ব্যবসার মূলধন হিসেবে ৬ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ে তার নামে ৬ লাখ ৩০ হাজার ৪৭৭ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। আরও কয়েকটি ক্ষেত্র মিলিয়ে তিনি দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭৭ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য অসৎ উদ্দেশ্যে গোপন করে দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা বিষয়ে তিনি আরও উল্লেখ করেন, রোজিনা আকতার ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তার পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা ব্যয় করেছেন। এসময় ৫৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৭৭ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ৫৭ লাখ ২৮ হাজার ২৭৭ টাকা। আয়ের বিপরীতে তার প্রতিষ্ঠান নুরী ফ্যাশন টেইলার্স থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা, নিউ সোনালিয়া শুটকি বিতান থেকে দেড় লাখ ৫০ টাকা, শারমি রিসোর্ট কটেজ থেকে এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা, সাঈদ এন্টারপ্রাইজ থেকে ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং নুরী কালেকশনের এক লাখ ২০ হাজার টাকা মিলিয়ে ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য উৎস পাওয়া যায়। সে হিসাবে তার আয়ের উৎসের অসঙ্গতিপূর্ণ ৪৭ লাখ ৯২ হাজার ২৭৭ টাকার সম্পদ ভোগ দখলে রেখে দুদক আইনে শান্তিযোগ্য অপরাধ করেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় কক্সবাজারের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন বলেন, অপরাধ অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আবদুল মালেকের তদন্ত প্রতিবেদন মূলে রোজিনা আকতারের বিরুদ্ধে মামলাটি রুজু করা হয়েছে। মামলা তদন্তকালে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা আমলে নেওয়া হবে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে রোজিনা আকতারের বক্তব্য জানতে ফোন করলে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।