মিরসরাইয়ে চিরকুট লিখে, কাফনের কাপড় কিনে ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা

মিরসরাইয়ে এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে নাদেরুজ্জামান (৫৮) নামে এক পোল্ট্রি ব্যবসায়ী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এর আগে নিজের জন্য কাফনের কাপড় ও স্ত্রীর জন্য সাদা কাপড় কিনেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাত ৯ টার দিকে উপজেলার ৮ নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের টেন্ডল বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।

নাদেরুজ্জামান ওই বাড়ির মরহুম দলিল রহমানের পুত্র। নাদেরুজ্জামান উপজেলার মিঠাছড়া বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী। একটি ব্রয়লার মুরগির খামার ও একটি মুদি দোকান রয়েছে তার। দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। বড় ছেলে বিদেশে থাকেন, মেয়ে বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে থাকেন। স্ত্রী ও এক ছেলে নিয়ে মিঠাছড়া বাজারের পাশে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আত্মহত্যার আগে তিনি একটি চিরকুট লিখে গেছেন। নিজের জন্য কাফনের কাপড় ও স্ত্রীর জন্য সাদা কাপড় কিনে তা চিরকুটের পাশে রাখেন তিনি। চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমার ৮০ লাখ টাকার এনজিও ঋণ রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে সাত লাখ টাকা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়।’

নাদেরুজ্জামান চিরকুটটিতে লিখেন যে, তার লাশ নামিয়ে গলার রশি খুলে লুকিয়ে ফেলতে এবং লাশ ঘরের মধ্যে শোয়ানো অবস্থায় রেখে দিতে।

তাদের বাড়ির মোশাররফকে উদ্দেশ্য করে লিখেন, ‘মোশাররফ, আমার মেয়ে রুমাকে ফোন করে জানাবে যে, তোমার বাবা অসুস্থ। এসে তারা আমার লাশ দেখবে। আত্মহত্যা জানলে দুই পরিবারের সম্মান নষ্ট হবে।’ এজন্য পারিশ্রমিক হিসেবে মোশারফের জন্য এক হাজার টাকাও রেখে যান তিনি। পুলিশ নাদেরুজ্জামানের হাতে লেখা চিরকুটটি উদ্ধার করেছে।

দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯ টায় নাদির কাকা আমাকে মোবাইলে জানান তিনি বাড়িতে আসছেন। আমি যেন আধা ঘন্টা পর কাউকে কিছু না জানিয়ে তার ঘরে গিয়ে দেখা করি। আমি আধাঘন্টা পর উনার বাড়িতে গিয়ে দেখি ঘরের দরজা বন্ধ। পরবর্তীতে দরজা খুলে নাদির কাকাকে একাধিকবার ডেকেও কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে রুমের ভেতর প্রবেশ করি। এসময় দেখি একটি রুমে ফ্যানের হুকের সাথে কাকার শরীর ঝুলছে। পরবর্তীতে আমি ভয় পেয়ে চিৎকার শুরু করি। এসময় বাড়ির অন্যান্য লোকজন এগিয়ে আসেন এবং জোরারগঞ্জ থানায় খবর দিই। পরবর্তীতে পুলিশ এসে লাশ নিচে নামান। এসময় তার (নাদির হোসেন) লিখিত একটি চিরকুট তালা চাপ দেওয়া অবস্থায় ছিলো। আত্মহত্যার আগে তিনি নিজের জন্য কাফনের কাপড় ও স্ত্রীর জন্য সাদা কাপড় কিনে পাশে রেখে দেন।

জোরারগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার সঞ্জয় কুমার সাহা জানান, গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর অপমৃত্যু মামলা হবে।

আরও পড়ুন