হিট স্ট্রোক প্রতিকারে হোমিওপ্যাথি

ডা. প্রধীর রঞ্জন নাথ :: হিট স্ট্রোক প্রতিকারে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের প্রয়োগ সংকেত নিয়ে আজকের আলোচনা। হিট স্ট্রোক এক ধরনের হাইপারথার্মিয়া (হাইপার-অধিক মাত্রা, থার্মিয়া-তাপ)। সোজা কথায় বুঝিয়ে বলতে গেলে শরীরের তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকেই বলা হয় হিট স্ট্রোক। শরীরের ভিতরে নানা রাসায়নিক ক্রিয়ার কারণে আমাদের শরীরে সব সময় তাপ সৃষ্টি হতে থাকে। ঘামের সাহায্যে সেই তাপ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার মধ্যে একটানা কাজ করলে শরীরের তাপমাত্রা বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। এর সঙ্গে কম জল খাওয়ার জন্যে যদি শরীরে জলশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি হয় তা হলে হিট স্ট্রোক দেখা দিতে পারে। হিট স্ট্রোক এক ধরনের মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি, যার তৎক্ষনাৎ চিকিৎসা প্রয়োজন। বাচ্চাদের, বয়স্কদের (৬৫ র উপরে বয়স) এবং যাঁরা ওবিসিটিতে ভূগছেন, তাঁদের হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

লক্ষণঃ হিট স্ট্রোকের লক্ষণ অনেকটা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষনের সঙ্গে মিলে যায়। যদিও প্রত্যেক রোগীর লক্ষণের মধ্যে ভেদাভেদ আছে, তবুও হিট স্ট্রোকের লক্ষণ শরীরে দেখা দিলেই বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়াই ভাল।

  •  শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি।
  • ঘাম কমে যাওয়া বা একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া। ত্বক লাল হয়ে শুস্ক হয়ে যাওয়া।
  • পালস দ্রুত হয়ে যাওয়া এবং হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা।
  • শরীরে ক্লান্তিভাব, মাথাব্যথা এবং গা গোলানো।
  • অস্বাভাবিক জিনিস দেখতে পাওয়া বা হ্যালুসিনেশন।
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

প্রাথমিক চিকিৎসাঃ শরীরের বিভিন্ন হিট কন্ট্রোল মেকানিজম যখন ভেঙ্গে পড়ে, তখনই দেখা দেয় হিট স্ট্রোক। বডি টেম্পারেচার ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলে কয়েকটি সহজ উপায়ে বাড়িতেই রোগীকে খানিকটা আরামে রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

  • প্রথমেই রোগীকে বাড়ীর ভিতরে কোনও ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে এসে শুইয়ে দিন।
  •  ঘরে ফুল স্পিডে পাখা বা এয়ার কন্ডিশনার চালিয়ে দিন। শাড়ি জলে ভিজিয়ে, নিংড়ে নিয়ে পর্দার উপর টান টান করে লাগিয়ে দিতে পারেন।
  • জামার বোতাম খুলে দিন যাতে শরীর হাওয়া পায়। ভারী জামা কাপড় পরা থাকলে ছাড়িয়ে দিয়ে হালকা জামা পরিয়ে দিন।
  • কপাল, মুখ, গলা, ঘাড়ে জলপট্টি দিন। মুখ, গলায় জলের ছিটে দিন বা ¯েপ্রয়ার দিয়ে ১৫-২০ মিনিট অন্তর অন্তর জল স্প্রে করে দিন।
  • ঠান্ডা জলে নুন, চিনি মিশিয়ে রোগীকে খাওয়াতে থাকুন।
  • যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারকে কল দিন।
  • ডাক্তার না পৌঁছানো পর্যন্ত বডি টেম্পারেচার ক্রমাগত মনিটর করতে থাকুন।

পরামর্শঃ যাদের বাড়ির বাইরে বেরতে হয়, তাঁরা চেষ্টা করুন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে। বেলা ১১টা থেকে ৩টা অবধি রোদ না লাগানোর চেষ্টা করুন।

  • বের বার আগে ৩-৪ গ্লাস জল খান। সঙ্গে ওয়াটার বটল ক্যারি করুন। ১৫-২০ মিনিট অন্তর অন্তর জল খান।
  •  চা, কফি, বা অ্যালকোহলিক ড্রিঙ্ক পারতপক্ষে খাবেন না এই পানীয়গুলো শরীরে জলশূন্যতা ঘটাতে সাহায্য করে।
  • রোদ উঠে যাওয়ার পর হাঁটাহাটি বা ওয়র্ক আউট করবেন না।
  • সকাল বা বিকেলে ওয়র্কআউট করার সময় ঘন ঘন জল খান। ক্লান্ত হয়ে গেলে ওয়ার্কআউট বন্ধ করে দিন।
  • হালকা রঙের লুজ ফিটিং জামাকাপড় পরুন।
  • দিনে দুবার স্নান করুন। খুব গরম লাগলে তোয়ালে রুমাল দিয়ে মুখ, ঘাড়, গলা ভাল করে মুছে নিন।

গরমে অন্যান্য সমস্যাঃ হিট এগজশন- হিট স্ট্রোক এবং হিট এগজশনের লক্ষণগুলো মোটামুটি এক। প্রচন্ড গরমে একটানা ৩-৪ ঘন্টা রোদে থাকার দরুন বমিভাব, মাথা ঘোড়া, মুখ চোখ ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া-এ সবই হিট এগজশনের লক্ষণ। তবে হিট স্ট্রোকের মতো হিট এগজশনে হ্যালুসিনেশন বা ওই ধরনের মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয় না।

কী করবেন পরামর্শঃ

  • রোদে কাজ করতে হলেও কাজের মধ্যে মাঝে মাঝেই ব্রেক নিয়ে বাড়ির ভিতর বা ছায়ায় বসুন।
  • সান গ্লাস এবং টুপি অবশ্যই ব্যবহার করুন।
  • ফ্লুয়িড ইনটেক কমাবেন না। ১৫-২০ মিনিট অন্তর অন্তর গ্লুকোজ বা জল খেতে থাকুন।

হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধানঃ হিটস্ট্রোক নিরাময়ে হোমিওপ্যাথিতে অত্যন্ত ফলদায়ক ঔষধ আছে। লক্ষণ বিচার করে নির্দ্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ সেবনে এই রোগ ত্বরিত আরোগ্য লাভ করে। এই রোগে যে ওষধ ব্যবহৃত হয় তা নি¤েœ প্রদত্ত হল। যথা ঃ (১) বেলেডোনা, (২) একোনাইট, (৩) গেøানিয়ন, (৪) ক্যাম্পার, (৫) এমিল নাইট্রেট, (৬) ওপিয়াম, (৭) জেলসিমিয়াম, (৮) এগারিকাস, (৯) নেট্রাম কার্ব, (১০) ল্যাকেসিস, (১১) এনাকার্ডিয়াম উল্লেখযোগ্য। তাপরেও চিকিৎসকের তত্ত¡াবধানে থেকে ওষুধ সেবন করা উচিত। অন্যথায় হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভব থাকে।

লেখকঃ ডা. প্রধীর রঞ্জন নাথ, হোমিও চিকিৎসক ও প্রাবন্ধিক।

আরও পড়ুন