দোহাজারী হাসপাতালে হঠাৎ বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর চাপ

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে হঠাৎ বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর চাপ। গত ৬ দিনে ৬৩ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন এই হাসপাতালে। প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অধিকাংশ শিশু হলেও বৃদ্ধদের সংখ্যাও কম নয়। রোগীর চাপ বাড়লেও এখন পর্যন্ত কোনো রোগীর অবস্থা আশংকাজনক হয়নি। তবে দোহাজারী পৌরসভার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নগুলো থেকে আসা রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সগণ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১ এপ্রিল ১৪ জন রোগীর মধ্যে ৪ জন, ২ এপ্রিল ১৮ জনের মধ্যে ৭ জন, ৩ এপ্রিল ১৫ জনের মধ্যে ৯ জন, ৪ এপ্রিল ১৮ জনের মধ্যে ১৩ জন, ৫ এপ্রিল ২৭ জনের মধ্যে ১৩ জন, ৬ এপ্রিল ২৭ জনের মধ্যে ১৭ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দোহাজারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশু, কিশোরদের পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্করাও রয়েছেন। হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও যথাযথভাবে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন বলে দাবি দোহাজারী হাসপাতালে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স বিষ্ণুপ্রিয়া নাথের।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকালে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে কথা হয় সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ছেনোয়ারা নামে এক নারীর সাথে। তিনি জানান, তাঁর দুই সন্তান নুসরাত (৬) ও মারওয়াদ (৩) এর হঠাৎ করে জ্বর-সর্দি ও কাশি হওয়ার পর

দের পাতলা পায়খানা শুরু হয়। বাড়িতে কোনো সমাধান না হওয়ায় সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালে আসতে হয়েছে তাঁকে।
সাতকানিয়া উপজেলার আমিলাইষ ইউনিয়ন থেকে আসা মো. হোসেন জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত তার স্ত্রী মনোয়ারা (৬০) কে বাড়িতে রেখে দুই দিন চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তিনি হাসপাতালে এসেছেন। এখানেই তিনদিন ধরে চিকিৎসা চলছে তাঁর স্ত্রীর।

বৈলতলী ইউনিয়নের জামতল গ্রাম থেকে আসা মো. ইদ্রিস (৬০) জানান, রাতে খাওয়ার পর ঘুমিয়ে যাই। সকালে উঠে দেখি দুই তিনবার পাতলা পায়খানা হচ্ছে। মনে করেছি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সুস্থ না হওয়ার কারণে গত তিনদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।

সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের মৌলভীর দোকান এলাকার আলম আরা (৫০) জানান, রাতে খাওয়ার পর ঘুমিয়ে যাই। সকালে উঠে দেখি দুই তিনবার পাতলা পায়খানা হচ্ছে। মনে করেছি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সুস্থ না হওয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।

হাশিমপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড থেকে আসা আরিফ উদ্দীন বলেন, দুদিন আগে তার ২ বছর বয়সী সন্তান মুনতাহার হঠাৎ করেই পাতলা পায়খানা শুরু হয়। স্যালাইন খাওয়ানোর পরও কোনো কাজে আসেনি। অবশেষে হাসপাতালে ছুটে আসেন তিনি।
সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের মৌলভীর দোকান থেকে আসা ফারুক বলেন, গতকাল সকালে আমার ছেলে আয়াত (১১ মাস) অসুস্থ হলে প্রথমে ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় চিকিৎসা করতে চেয়েছি। কিন্তু অবস্থা ভালো মনে না হওয়ায় রাতেই ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কয়েকজন রোগী জানান, হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ওষুধ ও স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে এবং চিকিৎসক ও নার্সগণ আন্তরিকভাবে সেবা দিচ্ছেন।

খাবারের কারনে বেশিরভাগ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন উল্লেখ করে দোহাজারী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ তানজিমুল ইসলাম বাইরের খাবার পরিহার, ঠাণ্ডা খাবার গ্রহণ না করা, বিশুদ্ধ পানি পান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন,খাবার আগে সাবান দিয়ে দুই হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। বাজারের খোলা স্থানে রাখা খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। আবহাওয়া পরিবর্তনে পানি ফুটিয়ে পান না করলে পানিবাহিত রোগ বাড়ে। এজন্য বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। রমজানে যত্রতত্র বাহিরের বাসি ইফতারি সামগ্রী ও পানি পান বর্জন করতে হবে।দোহাজারী হাসপাতালে খাবার স্যালাইন ও কলেরা স্যালাইনের কোনো সংকট নেই উল্লেখ করে রোগীদের যথাযথভাবে সেবা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন