উচ্চ শব্দের হর্ণে দোহাজারী হাসপাতালের রোগী ও চিকিৎসকদের মরণ দশা

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ঘেঁষে অবস্থিত দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। হাসপাতালটির সামনে দিয়ে স্বল্প ও দূরপাল্লার গাড়িগুলো উচ্চ শব্দে হাইড্রোলিক হর্ণ বাজিয়ে ছুটে চলে। হর্ণের উচ্চ শব্দের কারণে বহির্বিভাগে কোনোভাবেই মনোযোগ দিয়ে রোগী দেখতে পারেন না চিকিৎসকেরা। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের দিনের বেলা তো বটেই রাতেও ঘুমানো কঠিন হয়ে যায়।

দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ তানজিমুল ইসলাম বলেন, “হাসপাতালের আশপাশের ১শ মিটার পর্যন্ত নিরব এলাকা হলেও উচ্চ শব্দে যখন বাইরে গাড়ীর হর্ণ বাজে তখন মনোযোগ রাখা যায় না। জোর গলায় রোগীদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। এটি আমাদের প্রতিদিনের সমস্যা। রোগী দেখার মতো কোনও পরিস্থিতিই নাই এখানে। দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চারপাশের রাস্তা যদি হর্ণমুক্ত রাখা যায় তাহলে পরিবেশ যেমন ভালো থাকবে, তেমনি চিকিৎসক ও রোগীরাও স্বস্থি পাবে।”

হাসপাতালে ভর্তি থাকা কয়েকজন রোগী জানান,”দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা গাড়ির হর্ণের শব্দে অসহ্য হয়ে যাচ্ছি। দিনের বেলায় বাস-লেগুনা সহ অন্যান্য গাড়ি আর রাতের বেলায় ট্রাকের হর্ণ। এখানে রোগী সুস্থ হবে কি বরং সুস্থ মানুষই অসুস্থ হয়ে যাওয়ার যোগাড়।”

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী, নীরব এলাকা হিসেবে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বা একই জাতীয় অন্য প্রতিষ্ঠান এবং এর চারিদিকে ১শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে বোঝানো হয়েছে ‘নীরব এলাকা’। চলাচলের সময় সেখানে যানবাহনে কোনও হর্ণ বাজানো যাবে না। এতে বলা হয়েছে যেকোন নিরব এলাকায় অতিরিক্ত হর্ণসহ শব্দদূষণের ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রোগী, পেশাজীবিসহ অন্যান্যদের যেমন শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, তেমনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্ম এলাকায় পরিবেশ ব্যাহত হয়। শিশুদের মেধাবিকাশ ব্যাহত, মানসিক চাপ, অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।

সাধারণভাবে শব্দের মানমাত্রা ৪০ থেকে ৪৫ ডেসিবল আর হাইড্রোলিক হর্ণ ১শ ডেসিবলের বেশি মাত্রার শব্দ সৃষ্টি করে। দোহাজারী ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সামনে গাড়ির হর্ণ বাজানো প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার এবং আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে আরও দায়িত্বশীল ও কঠোর হতে হবে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

এব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আরকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন (চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-বান্দরবান অঞ্চল) সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের অঞ্চলের ১৯টি রুটের প্রায় ১০ হাজার শ্রমিককে আমরা নিয়মিত সচেতন করি। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দেশের বিভিন্ন জেলার বাস-ট্রাক চলাচল করে। আমরা তো আর সকলকে সচেতন করতে পারবো না। সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে ‘সামনে নিরব এলাকা, হর্ণ বাজানো নিষেধ’ এমন সাইনবোর্ড লাগালে এবং তা প্রতিপালনে হাইওয়ে থানা পুলিশ প্রচেষ্টা চালালে নিরব এলাকায় হর্ণ বাজানো বন্ধ হবে।”

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ খান মোহাম্মদ এরফান বলেন, হাইড্রলিক হর্ণের ব্যবহার বন্ধে হাইওয়ে থানা পুলিশ প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। চালকদের অজ্ঞতা, অসচেতনতা ও প্রশক্ষিণের ঘাটতির কারনে হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার হচ্ছে। এব্যাপারে চালকদের সচেতন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন