বিভিন্ন স্পটে ছাত্রলীগ-যুবলীগের অবস্থান

মিরসরাইয়ে সরকারী দলের হামলায় বিএনপির ১০ নেতাকর্মী আহত

চট্টগ্রামে বিএনপির কেন্দ্রীয় মহাসমাবেশে যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্পটে গাড়ি তল্লাশী ও ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি দলের হামলায় বিএনপির অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এছাড়া বুধবার (১২ অক্টোবর) ভোর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে চট্টগ্রামমুখী গাড়ি তল্লাশী করছে এবং কয়েকটি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে।

বারইয়ারহাটে হামলায় আহত হয়েছে বারইয়ারহাট পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র ও পৌর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জসীম উদ্দিন (৫০), হিঙ্গুলী ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক কাজী ছালেহ আহম্মদ (৫২), পৌর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সেলিম হাজারী (৫০), বিএনপি নেতা জাফর আলম লিটন (৪০) সহ ১০ জন। আহদের উপজেলা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ছাত্রলীগ যুবলীগের মোটরসাইকেল মহড়া

এদিকে মিরসরাই থানার সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের নেতৃত্বে চট্টগ্রামমুখী গাড়ি তল্লাশি করেছে পুলিশ। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে অবস্থান নেন এবং লাঠিসোটা নিয়ে মোটরসাইকেল মহড়া দেন।

উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বারইয়ারহাটে আমাদের ৪ জন নেতাসহ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এছাড়া গত মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন জায়গায় সরকারি দলের লোকজন মহড়া দিচ্ছে। উপজেলার সমস্ত বাস, মাইক্রো, হাইসের মালিক ও চালকদের বিএনপির ভাড়া না ধরতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বারইয়ারহাট, জোরারগঞ্জ, ঠাকুরদীঘি, মিরসরাই সদর, বড়তাকিয়া, কমলদহ, ডাকঘর, নিজামপুর কলেজ, বড়দারোগাহাটে বিভিন্ন গাড়ি তল্লাসী করে উল্টো পথে পাঠিয়ে দিচ্ছে সরকারি দলের লোকজন। কয়েকটি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে।

পথে পথে পুলিশের তল্লাশিতে বেড়েছে ভোগান্তি

ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মিরসরাইয়ের নিজামপুর কলেজের সামনে আমার গাড়ি বহরে হামলা চালিয়ে ৭টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। এসময় সরকার দলীয় ক্যাডারদের হামলায় দাগনভূঁইয়া উপজেলা যুবদল আহ্বায়ক কবির আহমেদ ডিপলু, যুগ্ম আহ্বায়ক দিদার, ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাজিব, যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ, ফেনী পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী, ছাত্রনেতা রিপন, শুভসহ প্রায় ৩০ নেতাকর্মী হামলার শিকার হয়।’

হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আশরাফুল কামাল মিঠু জানান, বিএনপির নেতাকর্মীদের বহনকারী গাড়ির ধাক্কায় ছাত্রলীগ কর্মী আহত হওয়ায় সাময়িক মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেন বন্ধ রাখেন তাঁরা। যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে তাঁরা যান চলাচলের ব্যবস্থা করে দেন। কারও ওপর হামলাও গাড়ি ভাংচুরের বিষয়টি সত্য নয়।

মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, ‘আমি ইউএনও মহোদয়সহ মহাসড়কেই রয়েছি। হামলার অভিযোগ মিথ্যা। তারা (বিএনপির লোকজন) সকালে শহরে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের বহরে গাড়ি তুলে দিয়ে একজনকে গুরুতর আহত করেছে। তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

মহাসসড়কের গাড়ি তল্লাশী বিষয়ে ওসি বলেন, ‘নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইউএনও স্যারের উপস্থিতিতে বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন গাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’

এদিকে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল কম থাকায় বুধবার ভোর থেকে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অফিসমুখীদের। চট্টগ্রাম শহরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মিরসরাই সদর বাস ষ্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা আইনুল কবির মাহিন বলেন, ভোর সাড়ে ৬ টা থেকে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। এখন সাড়ে ৮ টা খুব কম যাত্রীবাহী বাস আসছে। মাঝেমধ্যে দু’একটি আসছে তাও যাত্রীতে ঠাসা। শেষ পর্যন্ত আজ অফিসে যেতে পারবো কি না বুঝতেছিনা। এভাবে মহাসড়কের বিভিন্ন ষ্ট্যান্ডে যাত্রীদের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ নূর হোসেন মামুন বলেন, বারইয়ারহাটে হামলার ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির কোন নেতাকর্মীর হামলা করেনি। বিএনপির নিজের গ্রুপিংয়ের কারণে হয়তো হামলার ঘটনা ঘটতে পারে।

আরও পড়ুন