বাঁশখালী ইকোপার্ক : ঝুলন্ত সেতুতে জীবন ঝুলে যাওয়ার শঙ্কা

বাংলাদেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতুটির অবস্থান চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্কে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপূর্ব সমন্বয় বাঁশখালী ইকো-পার্কের ঝুলন্ত সেতুটি এখন মরণফাঁদ। খুলে ফেলা হয়েছে দুই তৃতীয়াংশ পাটাতন। সু-উচ্চ পাহাড়, মনজুড়ানো সবুজের ছায়াঘেরা গাছগাছালি, সন্ধ্যায় বন্যপ্রাণীর হাঁকডাক, বামের ও ডানের ছড়া লেকের স্বচ্ছ জলরাশি, সু-উচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ সব মিলিয়ে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের নয়নাভিরাম অভয়ারণ্য বাঁশখালী ইকো-পার্ক। এখানে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো রয়েছে অজ¯্র প্রাকৃতকি সৌন্দয্যের সংমিশ্রণ। বিকেলের গোধূলিতে লেকের সৌন্দর্য্যে মন ভরে যায়। ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির বিচরণ পার্কটিকে করেছে আরও রোমাঞ্চকর। কিন্তু সে সৌন্দর্য্যের চিরচেনা রূপ আর নেই। কর্টেজ, ছাতা, রিফ্রেশমেন্ট কর্ণার, বসার জন্য নির্মিত বিশ্রামাগারসহ স্থাপনা এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতুর একটি ‘বাঁশখালী ইকোপার্কের ঝুলন্ত সেতু’। এটি এখন মরণ ফাঁদ। পার্ক কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে এটিকে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে রেখেছে। তাদের দাবী পূনঃমেরামত করতে দর্শনার্থীদের পারাপার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সংস্কারের কাজ চলছে। খুব সহসাই খুলে দেওয়া হবে সেতু।

সরকারী দীর্ঘ ছুটির দিনে, সপ্তাহের শুক্রবারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণ করতে আসে ভ্রমণ পিপাসু লোকজন। এমনিতেই নিত্যদিন দর্শকের আনাগোনায় মুখরিত থাকে পার্কটি। বিগত ২০০৮ সালের টানা বর্ষণে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে বাঁশখালী ইকোপার্কের বাঁধ ভেঙে যায়। ফলে বামের ছড়া লেক জলশুন্য হয়ে পড়ে, হারিয়ে যায় সোন্দর্য্যের বিরল দৃশ্য। এখনও পার্কের সৌন্দর্য্য বর্ধনের মতো কোন কাজ দৃশ্যমান হয়নি। সেই অবধি পর্যটক শুন্য হয়ে পড়ে বাঁশখালী ইকোপার্ক।

সম্প্রতি বাংলাদেশের নাটক জগৎ এর অন্যতম অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ও অভিনেত্রী সাদিয়া আইমনসহ আরও অনেকে শিহাব শাহীন পরিচালিত ওয়েব সিরিজ “মায়া শালীক” নাটক এর শুটিং শেষ করেছেন বাঁশখালী ইকোপার্কে। এতে দর্শনার্থীদের ছিল উপচেপড়া ভীড়। পার্কের অনুন্নত অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে অনেকে তুলেছেন নানা তীর্যক প্রশ্ন। সবুজের নয়নাভিরাম পার্কের সংস্কার করা হলে সৌন্দর্য বাড়তো আরও বহুগুণে। বিভিন্ন নাটক, চলচিত্রের শুটিংয়ের অন্যতম স্পটটি সংস্কারের দাবী সাধারণ দর্শনার্থীদের।

ঝুলন্ত সেতুটির প্রধান ফটকে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে লেখা আছে ১০জনের অধিক যাত্রী উঠা নিষেধ। এভাবে চলছিল কয়েক বছর। তবে সম্প্রতি সেতুর অবস্থা আংশকাজনক হলে দর্শনার্থীদের পারাপার বন্ধ করে দেয় পার্ক কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে গিয়ে সেতুর বেহাল দশাটি চোখে পড়ে। দুই তৃতীয়াংশ গাছের পাটাতন ভেঙ্গে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়েছে লোহার এ্যাংগেল থেকে। পাটাতন সংযুক্ত এ্যংগেলে ধরেছে মরিচা। পর্যটকের জীবন ঝুঁকির ও মরণ ফাঁদের আরেক নাম যেনো বাঁশখালী ইকোপার্কের ঝুলন্ত সেতুটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুজ্জমান শেখ জানান, ঝুলন্ত সেতুটি মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে আপাতত দর্শনার্থীদের পারাপার বন্ধ করে দিয়েছি। সংস্কারের কাজ চলছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি। কাজ শেষ হলেই দর্শনার্থীদের জন্য খোলে দেওয়া হবে ঝুলন্ত সেতুটি।

আরও পড়ুন