কোনো প্রকার কৃত্রিম সৌন্দর্য্য ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে অপূর্ব সুন্দর বাঁশখালী ইকোপার্ক। পার্কের দু’টি স্বচ্ছ লেক, বামের ছড়া ও ডানের ছড়া লেক। ত্রি-সীমানায় সু-উচ্চ পাহাড়। দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতুটিও এ পার্কে। বামের ছড়া লেকের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সেতুটি পার্কের সৌন্দর্য্যকে বাড়িয়েছে বহুগুন। চারদিকে চির সবুজ। মনজুড়ানো দৃশ্য এখানে পর্যটকদের বার বার কাছে টানে। তবে সে চিরচেনা সৌন্দর্য্য এখন আর চোখে পড়ে না। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপূর্ব সমন্বয় বাঁশখালী ইকো-পার্কের স্বচ্ছ লেকের সৌন্দর্য্য ঢাকা পড়েছে সবুজ ঘাসে আর টোপাপানার রাজত্বে। ফলে এখানকার মাছ ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। টিকেট কেটে পর্যটক যেইমাত্র পার্কে প্রবেশ করে, চোখের সামনে লেকের দৃশ্যটি পড়ে। লেক যেন নয়, যেনো সবুজ ঘাসের বিস্তৃর্ণ মাঠ। লক্ষ লক্ষ টাকার ইজারা নিলেও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই পার্কে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সৌন্দর্য্যবর্ধনকারী নানা জাতের গাছপালা পড়ে আছে পার্কের ভিতরেই। বড় বড় গাছও ভেঙেছে। এখনো গাছ ও গাছের ডালপালা সরানো হয়নি। পর্যটক এসে এসব দৃশ্যে বিব্রত হয়ে পড়ে। গা ঢাকা দিয়েই কাজ করছে পার্ক কর্তৃকপক্ষ। পার্কে কর্মরত ৬/৭ জনের টিম থাকলেও নেই কাজের তদারকী। এভাবেই দায়সারা কর্মকান্ডে পার্কের সৌন্দর্য্য ম্লান হয়ে যাচ্ছে। দিনদিন পর্যটক শুণ্য হচ্ছে পার্কটি। ইকোপার্কের সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের গোড়া থেকে মাটি সরে গেছে। অল্পসংখ্যক দর্শনার্থী টাওয়ারে উঠলে টাওয়ারটি নড়াচড়া করে, এই বুঝি হেলে পড়বে। ঝুঁকির কবলে এ টাওয়ার যেকোন সময় দূর্ঘটনায় পতিত হতে পারে।
শীতের মৌসুম একেবারেই ঘনিয়ে আসছে। শীতে অতিথি পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে এসে এখানের সৌন্দর্য্য বাড়ায় বহুগুণ। শীতকাল আসলে তার পূর্ব থেকে উত্তর মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া ও সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চল থেকে পরিযায়ী পাখি চলে আসে বাংলাদেশে। এ সময়ে অতিথি পাখি ‘পরিযায়ী’ বাঁশখালী ইকোপার্কেও ভীড়ে। এরা পার্কের নান্দনিকতা বাড়ায়। এখানে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু পার্কের স্বচ্ছ লেকে সবুজ ঘাস ও টোপাপানায় ঢাকা পড়ায় পরিযায়ী পাখির অস্থায়ী আবাসে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। এতে ম্লান হবে পার্কের চিরায়িত সৌন্দর্য্য।
পার্কের ইজারাদার মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সরকার ইজারা নিয়েছে সর্বস্বাকুল্যে ১৫ লক্ষ টাকার অধিক। পার্কে আগের মতো পর্যটক আসেনা। প্রধান সড়ক হতে বাঁশখালী ইকোপার্ক পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কটিও খানাখন্দে বিলীনের পথে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে অবরোধ-হরতালে দূরের পর্যটক আসতে পারছে না। সবমিলিয়ে আমাদের গুণতে হবে বড় লস। সংশ্লিষ্ট কর্তৃকপক্ষ একটু সু-দৃষ্টি দিলেই পার্কটি তার সৌর্ন্দয্য ফিরে পাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী ইকোপার্কের কর্মকর্তা মোঃ ইসরাইল হক জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের ফলে বাতাসের তীব্রতায় ঘাসগুলো লেকের মূল পয়েন্টে এসে জড়ো হয়। এখন লেকে পানি কম। পানির সাথে ছেড়ে দিলে চলে যেতো। আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলে দেখব এগুলো সরানো যায় কিনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘এগুলো একদিনে হয়ে উঠেনি। এসব দেখার দায়িত্ব ইজারাদারদেরও। ইজারার শর্তে পার্কের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখার কথাও আছে। তাছাড়া সিএমসির লোক ও পার্কের কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে বলবো যাতে দ্রুত ঘাস ও টোপাপানাগুলো সরানো হয়। কারণ এখানে দূরদূরান্ত থেকে পর্যটক আসে। এটার সৌন্দর্য্যবর্ধন করা আমাদের সবার দায়িত্ব।