রাউজানে গৃহবধূ তাইরিন হত্যার বিচারের দাবিতে রাঙ্গুনিয়ায় মানববন্ধন

চট্টগ্রামের রাউজান থেকে গৃহবধূ জাহেদা আফরিন তাইরিনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তাইরিনের বাপের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাইরিনকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ‘হত্যা’ করেছে দাবি করে ‘হত্যাকারীদের’ বিচার চেয়ে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। রোববার বিকেল ৪টায় রাঙ্গুনিয়ার পোমরা ইউনিয়নের শান্তিরহাট বাজারে শতাধিক লোকজন মানববন্ধনে অংশ নেয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘তাইরিন আত্মহত্যা করেনি। তাইরিনকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। একজন মাদ্রাসার কামিলের ছাত্রী কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না। বিয়ের মাত্র ১৯ দিনে আমাদের বোন হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হয়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, ‘তাইরিনের স্বামী মো. ইসমাঈল ও তার বড় বোন তাইরিনকে হত্যা করেছে। তাকে বাপের বাড়ির ভাই-বোনের সাথে যোগাযোগ করতে দেয়নি। তাকে বাপের বাড়িতে আসতে দেয়নি। আমরা কোনভাবে এই হত্যাকাণ্ড মেনে নিতে পারিনা। এর বিচার চাই।

বক্তারা রাউজানের সাংসদ রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও সাংসদের জ্যেষ্ঠ পুত্র ও তরুণ রাজনীতিবিদ ফারাজ করিম সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘মানবতার সেবায় নিয়োজিত ফারাজ করিম চৌধুরীর কাছে তাইরিন হত্যার বিচার চাই। তিনি চাইলে পারবেন তাইরিনের হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে।

মানববন্ধনে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত উত্তরজেলা ছাত্রলীগ নেতা এ কে মামুন, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মফিজুর রহমান খান, তাইরিনের ছোট ভাই মো. ইব্রাহিম, ফুফাতো ভাই মো. ফয়সাল, মো. দিদারুল আলমসহ আরও অনেকে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের কমলার দিঘী এলাকার গণীর বাড়ি থেকে গৃহবধূ জাহেদা আফরিন তাইরিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গৃহবধূ তাইরিন ওই এলাকার মো. ইসমাইলের স্ত্রী। বিয়ের মাত্র ১৯ দিনের মাথায় জাহেদা আফরিন তাইরিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গৃহবধূ তাইরিনের শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাইরিন ‘আত্মহত্যা’ করেছে বললেও তাইরিনের পরিবারের লোকজন বলছেন এটি ‘পরিকল্পিত হত্যা’।

তাইরিন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের সাপলেজা পাড়ার প্রবাসী মো. ইউসুফের মেয়ে। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সে তৃতীয়। পোমরা জামেউল উলুম মাদ্রাসা থেকে ফাযিল (ডিগ্রি) শেষে রাঙ্গুনিয়া আলমশাহ পাড়া কামিল মাদ্রাসায় কামিল (এম.এ) হাদিস বিভাগে ভর্তি হয়।

তাইরিনের ছোট ভাই মো. ইব্রাহিম বোনের স্বামী ইসমাঈলকে অভিযুক্ত করে বলেন, ‘সে আমার বোনকে মেরে ফেলেছে। বাসর রাতে আমার বোনকে অত্যাচার করা হয়েছে। জোরজবরদস্তি করা হয়েছে। ওই রাতেই সে শারিরীকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরদিন সকালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার শরীরে তিনটি সেলাই করতে হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় আমার বোন কতটা কষ্টে ছিলো’।

তাইরিনের বড় বোন রাশেদা আফরিন বলেন, ‘আমার বোনকে আমাদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে দেয়নি। এমনকি আমাদের বাড়িতেও আসতে দেয়নি। আসার কথা বললে নানা অযুহাত দেখাতো। আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের আইসিইউ’তে ভর্তি থাকলেও তাইরিনের স্বামী ইসমাইল একটিবারও যোগাযোগ করেনি। কেমন মানুষের সাথে বোনকে বিয়ে দিয়েছি।’

তাইরিনের স্বামী মো. ইসমাঈল বলেন,’আমার যা বলার রাউজান থানা পুলিশকে বলেছি। ঘটনার দিনও বলেছি, আর কয়বার বলবো।’

তাইরিনের ফুফাতো ভাই মো. ফয়সাল বলেন, তাইরিনের বাবা মো. ইউসুফ শনিবার সন্ধ্যায় দেশে আসার পর রাতেই তাইরিনকে দাফন করা হয়।

আরও পড়ুন