দোহাজারীতে ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল, বিপদ ঘটলেই খুঁজবে ভুল
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভাস্থ দোহাজারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকলেও কর্তৃপক্ষ যেনো একেবারেই নির্বিকার। তবে নিয়মানুযায়ী বাংলাদেশে অন্য দুর্ঘটনার মতো এখানেও কোন বিপদ ঘটে গেলে তবেই কর্তৃপক্ষ কার ভুল বা দোষ ছিলো এটা খুঁজতে নেমে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
সরেজমিন পরিদর্শনে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের থেকে জানা গেছে, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চার কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা টিনশেড ভবনটি নির্মিত হয়। বর্তমানে ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভবনটির কক্ষ কখন ভেঙে পড়ে এ ভয়ে যেকেউ দূরে চলে যাবে। তবু এর ভেতর দিনভর আতংকের মধ্য দিয়েই চলে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। যেকোন সময় এ ভবনটিতে শিশু শিক্ষার্থীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকায় বাধ্য হয়েই চার কক্ষ বিশিষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির দুইটি কক্ষে ঝুঁকি নিয়েই শিশুদের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
জরাজীর্ণ এই ভবনের দুইটি কক্ষে পঞ্চম শ্রেণির এ ও বি শাখার ৯০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম চলছে। বর্ষাকালে ভবনটির টিনের চালের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে। দেয়ালের বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাটল ধরেছে। খসে পড়েছে পলেস্তরা। দরজা-জানালাগুলোরও ভগ্ন দশা। যেকোন সময় ভবনটি ধসে পড়তে পারে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা সব সময় অতঙ্কে থাকে। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে অভিভাবকরা তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পায়। এ কারনে স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থী অনন্যা দেবী, রায়হান, হালিমা বিনতে আলমগীর, মনীষা দেবী জানায়, বিদ্যালয়ের ফাটল ধরা শ্রেণি কক্ষে ক্লাস করতে ভয় হয়। জানালাগুলো ভাঙা থাকায় বৃষ্টি হলে বাতাসের তোড়ে শ্রেণি কক্ষে পানি ঢুকে বই-খাতা ভিজে যায়। এ কারনে অনেক সময় স্কুলে আসিনা।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, বিদ্যালয়টির যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে যেকোন সময় এটি ভেঙ্গে পড়তে পারে। এ কারণে বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে মাঝে মাঝে বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে যেতে বারণ করি।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অলক সরকার বলেন, ভবনটি যেকোন মূহুর্তে ভেঙ্গে পড়তে পারে। যার কারণে শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছে। এখন অভিভাবকরা আর তাদের বাচ্চাদের এই বিদ্যালয়ে পাঠাতে চায়না। তাই দ্রুত সংস্কারসহ নতুন ভবনের দাবী জানাই কর্তৃপক্ষের কাছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোপাল কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর স্কুলের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। নতুন ভবন চেয়ে আবেদনও করেছেন। কিন্তু এখনও হয়নি। বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নিতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমার জানা মতে- এমন বিধ্বস্তপ্রায় বিদ্যালয় ভবন চন্দনাইশে আর কোথাও নেই। নতুন ভবন নির্মাণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে যেকোন সময় এই ভবনটি বিধ্বস্ত হতে পারে, ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনাও। যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে, তবে দায়ভার নেবে কে? বিদ্যালয়টি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিস ও প্রকৌশলী অফিসে বহুবার ধর্ণা দিয়েছি, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি দীপক সিংহ হাজারী বলেন, পুরাতন জরাজীর্ণ আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চলছে। মাননীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে এসে নতুন ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে একটি ডেমি অফিসিয়াল লেটার (ডিও) দিয়েছেন। সেই প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সয়েল টেস্ট করার পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অদ্যাবধি কোন অগ্রগতি হয়নি। আমাদের নতুন ভবন নির্মাণ খুবই জরুরি। কর্তৃপক্ষ দ্রæত ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা না নিলে পাঠদান কার্যক্রম চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। দ্রুততম সময়ে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
এব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার তপন কুমার পোদ্দার বলেন, দোহাজারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি আমাদের তদারকিতে আছে। জরুরি ভিত্তিতে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য আমরা জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে তালিকাসহ অধিদপ্তরে কপি পাঠিয়েছি। দোহাজারীর মধ্যে বেশি শিক্ষার্থী ওই বিদ্যালয়ে। শ্রেণিকক্ষ স্বল্পতার কারনে ঝুঁকি নিয়ে ওই ভবনে পাঠদান করতে হচ্ছে। নতুন ভবন না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ী ভিত্তিতে মেরামতের জন্য শীঘ্রই উদ্যোগ নেয়া হবে।
এব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চন্দনাইশ উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ জুনাইদ আবছার চৌধুরী বলেন, “দোহাজারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উত্তর বাইনজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সয়েল টেস্টের অনুমোদনের জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখনও অনুমোদন আসেনি।”