রাউজানে সবজির বাম্পার ফলনে খুশি চাষীরা

পাইকারি দামে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি বেচা-কেনার একটি স্থানের নাম চট্টগ্রামের রাউজানের শরীফপাড়া। ভোরের আলো ফুটতেই শরীফপাড়া গ্রামের কাঁশখালী খাল এলাকায় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের হাঁকডাক শুরু হয়। শনিবার ভোরে রাউজান পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ডের শরীফ পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কেউ উৎপাদিত সবজি ধুয়ার কাজে ব্যস্ত কেউ সবজি তুলে স্তুপ করে রেখেছেন সড়কের পাশে। বিভিন্ন প্রান্থ থেকে ছুটে আসা কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা দরদাম করছেন প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে, আবার কেউ ক্রয় করে পরিবহনে তুলছেন। কয়েকঘন্টায় বেচা-কেনা শেষ হয়।

একইভাবে রাউজান সদর ইউনিয়নের নাতোয়ান বাগিছা, খলিলাবাদ ও পূর্ব রাউজানে প্রচুর পরিমাণে সবজির চাষাবাদ হয়ে থাকে। শীতকালিন শাকসবজির সবকিছু চাষ করেন কৃষকেরা। বিশেষ নাতোয়ান বাগিছার এলাকার মুলার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এই জায়গার মুলা পুরো রাউজানে প্রসিদ্ধ তাছাড়া খেতেও সুস্বাদু। এখানকার কৃষকেরা জানান, ক্ষেতের সবজি স্থানীয় হাটে পাইকারি দরে বিক্রি করেন টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, এখান থেকে পাইকারী দামে কিনে নিয়ে রাউজানের বিভিন্ন প্রান্থের হাট-বাজারে বিক্রি করেন তারা। শীত মৌসুমে রাউজানের শস্যভান্ডারখ্যাত শরীফপাড়া এলাকাসহ কাঁশখালী খালের দুই পাড়ে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, বেগুন, লাউ, মরিচ, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, ফ্রান্স বিন, বিভিন্ন জাতের টমেটো, সিম, মুলা, আলু, সরিষা, লাল শাক, পালং শাক, মূলা শাকসহ নানা রকমের শীত কালীন শাকসবজি। পুষ্টি সমৃদ্ধ বিষমুক্ত নিরাপদ এসব সুস্বাদু সবজির চাহিদাও রয়েছে বেশ। কাঁশখালি খালের দুপারে শতাধিক কৃষক সবজির চাষাবাদ করে প্রতিবছর আয় করেন কয়েক কোটি টাকা। কৃষকদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আয়ের অর্থ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, রাউজান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় ১ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে নানা রকমের শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করা হয়েছে। ফলন উৎপাদন হবে ২৮ হাজার ৫৮৫ মেট্রিক টন।

স্থানীয় সমাজ সেবক মোঃ কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের শরীফপাড়া কৃষি নির্ভর জনপদ। এখানকার কৃষকদের অনুপ্রাণিত করতে সার-বীজ ও কৃষি উপকরণ নিয়ে শস্যভান্ডার পরিদর্শনে এসে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি।’ একদিকে ভালো ফলন অন্যদিকে চাহিদা দুটির জন্য লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।

কৃষক শহীদুল সুমনের মতে, ৫ কানি ফসলী জমিতে টমেটো, ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষাবাদে তার খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকা। উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে তার আয় হবে সাত লাখ টাকার বেশি, সে হিসেবে লাভ হতে পারে চার লাখ টাকা।
আবদুল শুক্কুর নামে নামে আরেক কৃষক বলেন, প্রতিবছর আমরা শীতকালীন সবজি উৎপাদন করি। এবারো চাষাবাদ করেছি, ফলনও ভালো হয়েছে। এবার অন্তত এক লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশাবাদি তিনি।

রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর নির্দেশনায় সার-বীজ ও কৃষি উপকরণ প্রদানসহ কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুম কবির। তিনি বলেন, রাউজানে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করছি। এতে একদিকে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে স্বাস্থ্যসম্মত সবজি উৎপাদিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন