বাঁশখালীতে সুলভে মিলছে কোরবানির পশু

আর মাত্র কয়েকদিন পর পবিত্র ঈদুল আযহা পালিত হবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বাঁশখালী উপজেলার পশুর হাটগুলোতে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। এমনকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল কুমিল্লা, রংপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, ফেনী, বগুড়া, রাজশাহী থেকে গরু আসতে শুরু করেছে। গত কয়েকদিন আগেও স্থানীয় কয়েকটি বাজারে গরুর বাজার বসতে দেখা গেছে। ধীরে ধীরে উপজেলার প্রায় সবকটি স্থায়ী-অস্থায়ী বাজারে গরুর ভীড় জমেছে।

বাঁশখালী উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাসহ গত কয়েক বছর ধরে গড়ে উঠেছে অন্তত ৪ হাজারের অধিক গরুর খামার। তুলনামূলক লোকসানের সম্ভাবনা ও রোগব্যাধি কম থাকায় দিন দিন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠেছে এসব খামার।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহযোগিতায় এ ধরনের খামার তৈরির দিকে ঝুঁকছে শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত যুবকরা। স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে ওঠা এসব খামার থেকেই আগামী ঈদুল আজহাতে সিংহভাগ গরুর চাহিদা পূরণ হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
কোরবানে দেশীয় গরুর চাহিদা বেশি ও লোকসানের সম্ভাবনা কম থাকায় অনেকেই ব্যক্তিগত পর্যায়ে বাণিজ্যিক খামার গড়ে তুলেছেন। এসব খামারে বর্তমানে ২৬ হাজার ৮৭৯টি গরু বিক্রির জন্য তৈরি আছে। ২ হাজার ৮৪১ টি মহিষ সহ পাশাপাশি ভেড়া-আর ছাগলের সংখ্যা ১১ হাজার ৪ টি। গরু-মহিষ-ছাগল মিলে ৪১ হাজার ৭শত ৮৩ টি গবাদি পশু যা উপজেলায় কোরবানি পশুর চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।

বাঁশখালীতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পারিবারিকভাবে ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠা খামারগুলোতে বেশীরভাগ শাহিওয়াল, রেড চিটাগাং ও দেশি জাতের গরু সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। তবে বেশি মাংস উৎপাদনে সক্ষম ও লোকদের পছন্দের বিবেচনায় শাহিওয়াল আর স্বাদ বিবেচনায় দেশি জাতের গরুই বেশি পালন করা হচ্ছে।

উপজেলার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে গড়ে উঠেছে কোরবানীর পশুর বাজার। খামারী ও সৃজনাল গরু মোটাতাজাকারীদের ভীড়ে জমে উঠেছে বাঁশখালী উপজেলার স্থায়ী দু’টি গরুর হাঁট কালীপুর রামদাশহাট ও চাম্বল গজার হাট এবং ৯টি অস্থায়ী গরুর হাট জলদী পৌরসভার মিয়ার বাজার, ছনুয়া মনুমিয়াজি বাজার, পুইছড়ি সরলিয়া বাজার, পুইছড়ি বহদ্দার হাট বাজার, বাহারছড়া বশির উল্লাহ মিয়াজি বাজার, পুকুরিয়া চাঁনপুর বাজার, পুকুরিয়া চৌমুহনী বাজার, বৈলছড়ি কেবি বাজার, শিলকূপ টাইমবাজার।
তাছাড়াও কোরবানীকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিশেষ করে বড়ঘোনা সকাল বাজার, গন্ডামারা বাজার, জালিয়াখালী নতুন বাজার, সরল বাজার, মোশারফ আলী মিয়ার বাজার, রায়ছটা সেন্টার পুকুর পাড়, প্রেমাশিয়া চৌধুরীর হাট, বানীগ্রাম নোয়া বাজার, পৌরসভার মনছুরিয়া হাজ্বী বদিউর রহমান গরুর বাজার সহ ২৫-৩০ টির অধিক ছোট বড় কোরবানীর পশুর বাজার বসতে শুরু করেছে।

আর কয়েকদিন পর পুরোদমে বিকিকিনি শুরু হবে। লাভের আশায় বেপারিরা আগেভাগেই হাটে নিয়ে এসে গরু-মহিষের পরিচর্যা করছেন। কেউ খাওয়াচ্ছেন খড়, রং লাগাচ্ছেন শিংয়ে আর কেউবা পানিতে ধুয়ে দিচ্ছেন পশুর শরীর। বাঁশখালীর প্রসিদ্ধ গরুর বাজার হিসেবে পরিচিত রামদাশ মুন্সির হাট, চাম্বল বাজার (গজার হাট), ছনুয়া মনুমিয়াজী বাজার, জালিয়াখালী নতুন বাজারে সরেজমিনে দেখা যায় স্থানীয় ক্রেতার পাশাপাশি শহুরে ক্রেতারও সমাগম হয়েছে। গরু বিক্রেতারা আশা করছে গতবারের চেয়ে তারা চড়া দাম পাবে এ বছর। কোরবানীর পশুর হাটে গরু-ছাগলের পাশাপাশি মহিষের ভীড়ও দেখা যায় বেশ কয়েকটি বাজারে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ৪ হাজার ২ শত ৪৪ টি খামারে কোরবানিযোগ্য পশু পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে গরুর সংখ্যা ২৬ হাজার ৮৭৯ টি, মহিষের সংখ্যা ২ হাজার ৮ শত ৪১ টি, ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা ১১ হাজার ৪ টি। প্রাণিসম্পদ অফিসের হিসাবমতে উপজেলার বর্তমানে খামার ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে পালিত গরুর বেশিরভাগই কোরবানির বাজারে বিক্রির জন্য তোলা হতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

উপজেলার শিলকূপ ইউনিয়নের ক্ষুদ্র খামারি আব্দুর রশিদ বলেন, “শুধুমাত্র কাঁচা ও শুকনা খড়, ভুষি খাইয়ে তার খামারে গরু পালন করা হচ্ছে।”

তিনি জানান, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গরুগুলো দ্রুত মোটাতাজা করতে তিনি হরমোন বা ইউরিয়া সারমিশ্রিত প্রক্রিয়াজাত খাবার দিচ্ছেন না। কারণ ওইসব খাবার খেয়ে গরু রোগাক্রান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে। নড়াচড়া কম করে। ফলে ক্রেতারা ওই গরু কিনতে চান না।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. সমরঞ্জন বড়ুয়া জানিয়েছেন, আমরা ৩ মাস আগে থেকে গরু মোটাতাজাকরণ বিষয়ক খামারিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। গত বছর কোরবানি হয়েছে গরু-মহিষ-১৪ হাজার ৭ শত ১১ টি, ছাগল-ভেড়া-১০ হাজার ৪৪ টি। এ হিসেবে মোট ২৪ হাজার ৭৫৫ টি পশু কোরবানি হয়েছে। এবারের সম্ভাব্য চাহিদা গরু-মহিষ ১৬ হাজার ২৫৯টি, ছাগল-ভেড়া ১১ হাজার ১০৫টি যার মোট সংখ্যা ২৭ হাজার ৩৬৪টি।বাঁশখালীর কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণ করতে গরু খামারগুলো বড় ধরনের ভূমিরা রাখছে। খামারীরা যাতে কোরবানির পশুতে ক্ষতিকারক কোনো ওষুধ অথবা ইনজেকশান ব্যবহার না করতে পারে সে জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সতর্কতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন এবং খামারীদের প্রয়োজনীয় পরাশর্ম দিয়ে আসছেন।

এছাড়াও গো-খাদ্য ও ওষুধ বিক্রেতাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বাজার মনিটরিং সেল ও স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন সহ ভেজাল ঔষধ বিক্রি বিরোধী অভিযানও অব্যাহত রেখেছেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে উপজেলার বিভিন্ন গরুর বাজারগুলোতে পযার্প্ত কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা নিরাপদে পশু বেচা-কেনা করতে পারবেন। নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেক বাজারে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাসহ পুলিশের পাশাপাশি বিশেষ টিম কাজ করছে। নকল টাকা প্রতিরোধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন