বাঁশখালীতে সাগর দাশের দখলে সরকারী অফিস
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসের একটি কক্ষ অবৈধভাবে দখলে রেখে দীর্ঘদিন ধরে সাগর দাশ নামে এক ব্যক্তি জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ‘২০১০ সালের দিকে তৎকালীন শিক্ষা অফিসার দেবাশীষ বিশ্বাস কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে এক বছরের জন্য তাকে নিয়োগ দেন। মেয়াদ শেষ হয়ে একযুগ অতিবাহিত হলেও তিনি সরকারি অফিসের কক্ষ ও সরকারি ডেস্কটপ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলে লিপ্ত রয়েছেন আজবধি। বেশ কয়েকবার অফিস ছেড়ে দিতে বললেও অফিস ছাড়েননি তিনি।’
সম্প্রতি শিক্ষা অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সাগরের কক্ষে প্রধান শিক্ষকদের জটলা। তাদের হাতে বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তির প্রিন্টেড কপি। এসব কপি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার বিনিময়ে করছেন তিনি। সরকার প্রতিটি বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও প্রিন্টার সরবরাহ করলেও কেন আপনারা বাইরে কাজ করছেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। উপবৃত্তি এন্ট্রি, ই-প্রাইমারি সিস্টেমে শিক্ষক তথ্য হালনাগাদসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাইরে না করার নির্দেশনা থাকলেও অনেক শিক্ষক তা মানছেনই না। শিক্ষকরা নিয়মিত এসব কাজ সাগরের মাধ্যমে করাচ্ছেন। এতে বিদ্যালয়ের পাসওয়ার্ড বেহাত ও শিক্ষকের কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।’
সাগর দাশের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘আমি ২০১০ সালে একবছরের জন্য কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে এখানে নিযুক্ত হই। মেয়াদ শেষ হলেও আমি অদ্যাবধি একযুগ ধরে অফিসে আছি। বাঁশখালীতে ১৬০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। মেয়াদ শেষ হলেও অনেক প্রধান শিক্ষক আমাকে যেতে দেয়নি। তাদের স্কুলের কাজ আমাকে দিয়ে করাতো। সরকার অনেক স্কুলে ল্যাপটপ-কম্পিউটার দিলেও তারা কাজ না পারায় আমার কাছে আসে। আমি তাদের কাজ করিয়ে দিই।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখানে আমার কোন বেতন-ভাতা নাই। তাদের (শিক্ষকদের) কাজ করে দিই।’ বেতন সহযোগীতা না পাওয়ার পরও কেন সরকারী অফিস ছাড়ছেন না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে সাবেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহীদুল ইসলাম অফিস ছাড়তে বলেছে। আমি এখানে কাজ করে নিজেকে পোষাতে পারছিনা। একটা চাকরি-বাকরি ঠিক হলেই চলে যাবো।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত বণিক বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখছি। সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দ আবু সুফিয়ান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাঁশখালী শিক্ষা অফিস পরিদর্শনে এলে সাবেক ডিপিইও স্যার শহীদুল ইসলামের নজরে বিষয়টি পড়ে। তিনি তাকে একসপ্তাহর মধ্যে অফিস কক্ষ ছেড়ে দিতে বললেও সে আজ নয় কাল এভাবে সময়ক্ষেপন করতে থাকে। আমি বিষয়টি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
উল্লেখ্য, তৎকালীন কয়েকজন শিক্ষা অফিসারের যোগসাজশে তিনি দীর্ঘ একযুগ ধরে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। তৎকালীন শিক্ষা অফিসাররা তার মাসিক বেতন ভাতা বাবদ সমুদয় অর্থ ১৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে প্রদান করতে বাধ্য করেন। এতে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বর্তমান শিক্ষা অফিসার তা বন্ধ করে দেন। অনেকে প্রশ্ন করেন, তার খুঁটির জোর কোথায়।