দোহাজারী পৌরসভার প্রথম মেয়র আওয়ামী লীগের লোকমান হাকিম
পৌরসভা প্রতিষ্ঠার অর্ধযুগ পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার নির্বাচন। সোমবার (১৭ জুলাই) ১৪টি ভোট কেন্দ্রে ১০২ টি স্থায়ী ও ৮টি অস্থায়ী ভোট কক্ষে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
৫২ হাজার ৫৭৬ জন জনসংখ্যা অধ্যুষিত দোহাজারী পৌরসভার ৩৩ হাজার ৫৮৬ জন ভোটারের মধ্যে এদিন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ২৩ হাজার ৪২৪ জন। বাতিল ৭৯ ভোট ছাড়া বৈধ ভোটের সংখ্যা ছিলো ২৩ হাজার ৩৪৫টি।
নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৯ হাজার ১০৮ ভোট পেয়ে দোহাজারী পৌরসভার প্রথম পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা যুবলীগ সদস্য আলহাজ্ব মোহাম্মদ লোকমান হাকিম।
তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান বেগ নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ২৫৯ ভোট। তিনি সাবেক দোহাজারী ইউপি চেয়ারম্যান ও সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা। অপর প্রার্থী বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত জায়নুল আলম মোমবাতি প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৯৭৯ ভোট।
সোমবার (১৭ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টায় উপজেলা পরিষদ ভিডিও কনফারেন্স রুমে ১৪টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে আলহাজ্ব মোহাম্মদ লোকমান হাকিমকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার ও দোহাজারী পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোহাঃ জাহাঙ্গীর হোসেন।
পৌরসভার মেয়র পদে ৩ প্রার্থী ছাড়াও নারী কাউন্সিলর পদে ১৭ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রথম পৌর মেয়র আলহাজ্ব মোহাম্মদ লোকমান হাকিমের বহরে পৌরসভার সংরক্ষিত ১ নং ওয়ার্ডে মোছাম্মৎ আয়েশা আক্তার (প্রতীক-আনারস), সংরক্ষিত ২ নং ওয়ার্ডে মমতাজ বেগম (প্রতীক-চশমা) ও সংরক্ষিত ৩ নং ওয়ার্ডে রাজিয়া সুলতানা রাজু (প্রতীক-চশমা) বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়ে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন।
এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১ নং ওয়ার্ডে মো. আব্দুল আজিজ (প্রতীক-পাঞ্জাবি), ২ নং ওয়ার্ডে মো. শাহ্ আলম (প্রতীক-ব্লাকবোর্ড), ৩ নং ওয়ার্ডে মো. জাহাঙ্গীর আলম (প্রতীক-উটপাখি), ৪ নং ওয়ার্ডে পহর উদ্দিন (প্রতীক-পাঞ্জাবি), ৫ নং ওয়ার্ডে মো. ইদ্রিস (প্রতীক-টেবিল ল্যাম্প), ৬ নং ওয়ার্ডে মো. মহিউদ্দিন (প্রতীক-ডালিম), ৭ নং ওয়ার্ডে মো. আলমগীর (প্রতীক-গাজর), ৮ নং ওয়ার্ডে চিত্ত রঞ্জন বিশ্বাস (প্রতীক-উটপাখি) ও ৯ নং ওয়ার্ডে মো. নাজিম উদ্দিন (প্রতীক-টেবিল ল্যাম্প) নির্বাচিত হয়েছেন।
সোমবার সরেজমিনে ১৪টি কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, প্রখর রোদ ও তীব্র গরম উপেক্ষা করে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দমুখর পরিবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিয়েছেন। কয়েকটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের প্রখর রোদ থেকে বাঁচাতে কেন্দ্রের মাঠে প্যান্ডেল ও ত্রিপল টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুরু থেকেই ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার উপস্থিতি ছিলো বেশি।
ভোট চলাকালে সকাল সাড়ে দশটায় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব দোহাজারী আফজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে দুইজন কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে মোবাইল ফোর্স এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। একই কেন্দ্রে বিকাল আড়াইটার দিকে ওই দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে কেন্দ্রের বাইরে পুনরায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিমরান মোহাম্মদ সায়েকের নেতৃত্বে বিজিবি ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ে আনেন।
এসময় নাছির মোহাম্মদ পাড়া এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে আনিসুল ইসলাম (৩৩) আহত হয়। তাকে দোহাজারী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। এছাড়া ২ নম্বর ওয়ার্ডের বারুদখানা ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। দ্রুত স্ট্রাইকিং ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া ২ নম্বর ওয়ার্ডের দোহাজারী জামিজুরী আহমদুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাছনদন্ডী মোহাম্মদীয়া এম.রহমান সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রের বাইরে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এসময় মোবাইল ফোর্স গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
কোথাও কোন অনিয়ম কিংবা নির্বাচনী সংঘর্ষ না হলেও কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএমে ‘ফিঙ্গার ম্যাচিং’ সংক্রান্ত জটিলতায় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ভোটারদের। এজন্য নির্ধারিত সময়ের পরেও লাইনে ভোটার থেকে যাওয়ায় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আজীজিয়া ক্বাছেমুল ইসলাম দোহাজারী মাদ্রাসা কেন্দ্র এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব দোহাজারী আফজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিকাল ৪টার পরেও ভোট গ্রহণ করা হয়।