পটিয়া প্রতিনিধি :: চট্টগ্রামের পটিয়ার হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মনোনয়ন নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বর্তমান চেয়ারম্যান দুইমাস ধরে কারাগারে থাকায় ওই ইউনিয়নের ১২ জন সদস্যের মধ্যে তিনজনকে মনোনয়ন দিয়ে সোমবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এই প্রজ্ঞাপন জারির পর মঙ্গলবার সকালে পরিষদের চেয়ারম্যান, সচিব, কম্পিউটার রুমসহ বিভিন্ন রুমে তালা ঝুলিয়ে দেন পরিষদের ৯ জন ইউপি সদস্য। এ সময় তারা সংবাদ সম্মেলন করে ওই প্রজ্ঞাপনের অনাস্থা ও প্রত্যাখ্যান করেন। একই এলাকা থেকে তিনজনকে মনোনয়ন দেওয়ায় তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এর আগে সোমবার বিকেলে সি-ব্লক থেকে ইউপি সদস্য আবদুর রাজ্জাক চৌধুরী, তছলিমা নুর ও মো. নাসির উদ্দিনকে চেয়ারম্যানের প্যানেলের দায়িত্ব দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ওই প্রজ্ঞাপন জারি করে।
জানা গেছে, উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়নে গত ২৯ এপ্রিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ব্যানারে ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। ওই দিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিতেন কান্তি গুহকে মেরে রক্তাক্ত করে সড়কের পাশের একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় হাইদগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান বিএম জসিমকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন আওয়ামী লীগ নেতা জিতেন কান্তি গুহের ভাই তাপস কান্তি গুহ। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান বিএম জসিম ও তাঁর ছেলেসহ কয়েকজন কারাগারে আছেন। ফলে প্রায় দুইমাস ধরে সেবা বঞ্চিত অত্র ইউপির সাধারণ জনগণ।
ঘটনার প্রায় দুই মাস পর স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে তিনজনকে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অথচ এর আগে পরিষদের ৯ জন ইউপি সদস্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন করে। কিন্তু তাঁদেরকে দায়িত্ব না দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কাজ পরিচালনার জন্য একই এলাকার তিনজনকে প্যানেল চেয়ারম্যানের জন্য একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপর থেকে চলছে এই উত্তেজনা।
এদিকে বিরোধিতাকারী সদস্যদের পক্ষ থেকে পরিষদের হল রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মান্নান গণি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করতে মতামত ছাড়াই তিনজনের একটি প্যানেল চেয়ারম্যান করা হয়েছে। তাঁরা তিনজনেই একই ব্লকের। এর মধ্যে আবদুর রাজ্জাক (৭ নম্বর ওয়ার্ড), তছলিমা নুর (৭,৮, ৯ নম্বর) ও মো. নাসির (৮ নম্বর ওয়ার্ড) রয়েছেন। দ্রুত প্যানেল চেয়ারম্যান বাতিল করার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, ‘নিয়ম বহির্ভূতভাবে মনগড়া চেয়ারম্যানের প্যানেলটি অবিলম্ব বাতিল করে নতুন করে আদেশ জারি করার দাবি জানান। তা না হলে পরিষদের তালা খোলা হবে না। আমাদের সর্বাত্মক আন্দোলন প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়া হবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য মো. ফৌজুল আবেদীন সজীব, আবুল কাসেম, আবদুল মান্নান গণি, পারভীন আকতার, রাসুলে হাদ্দাম, রেখা দাশ ও মো. হেলাল উদ্দিন।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার জানান, হাইদগাও ইউনিয়ন পরিষদে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য পুলিশ সকাল থেকেই অবস্থান করছে।
এদিকে দুপুরে অন্য ৯জন ইউপি সদস্যদের উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতিকুল মামুন অফিসে ডেকে বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে তালা খুলে দিয়ে র্বতমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাককে সহযোগীতা করে পরিষদের কার্যক্রম চালাতে নির্দেশ প্রদান করেন।