বিএনপির ৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেফতার
বেশির ভাগ নেতাকর্মী আত্মগোপনে, রাজধানীতে ৮৯ মামলায় ২ হাজার গ্রেফতার: পুলিশ
রাজধানী ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে সংঘর্ষ-সহিংসতা এবং হরতাল-অবরোধকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। গতকাল রবিবার পর্যন্ত ৯ দিনে সারা দেশে বিএনপির অন্তত পাঁচ সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতা রয়েছেন ১০ জনের বেশি। সাবেক সংসদ সদস্যসহ জেলা ও মহানগর পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা রয়েছেন অর্ধশতাধিক। এছাড়া বিএনপির অঙ্গসংগঠনের বহু নেতা ইতিমধ্যে আটক হয়েছেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সার দেশে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এখন ঘরবাড়ি ছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা। পুলিশের ব্যাপক অভিযান শুরুর পর বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বেশির ভাগ নেতাই আত্মগোপনে রয়েছেন। তার পরও বেছে বেছে সক্রিয় নেতাদের আটক করা হচ্ছে।
সর্বশেষ গতকাল রবিবার ভোরে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরসহ কয়েক জন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র্যাব বলছে, গাজীপুরের টঙ্গীর এক বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন আলতাফ হোসেন চৌধুরী। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় তাকে আটক করা হয়। আর শাহজাহজান ওমরের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, শনিবার রাতে গুলশানের একটি বাসা থেকে তাকে নিয়ে যান ডিবি পুলিশের সদস্যরা। আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীমের ধানমন্ডির বাসাসহ কয়েক জন নেতার বাসায় অভিযান চালিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী দাবি করেছেন, প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ২৬১ জনের বেশি নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। ৯ মামলায় মোট আসামি ১ হাজার ৬০ জন। এছাড়া ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর গতকাল পর্যন্ত মোট গ্রেফতার ৫ হাজার ২৮৪ জনের বেশি নেতাকর্মী। মামলা হয়েছে ১২২টিরও বেশি।
তবে গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতা, নাশকতা, পুলিশকে মারধর, পুলিশ সদস্য হত্যা ও চলমান অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে রাজধানীতে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ নানা ঘটনায় ৮৯টি মামলা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত আট দিনে দায়ের হওয়া এসব মামলায় বিএনপির ২ হাজার ১৭২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনসের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কে এন রায় নিয়তি জানান, পল্টন থানায় সবচেয়ে বেশি ১৪টি মামলা হয়েছে। এরপর রয়েছে রমনা মডেল থানা, সেখানে ছয়টি মামলা। গতকাল রাজধানীতে ৩৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ৯ দিনে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের যেসব নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন :দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, মজিবর রহমান সরোয়ার, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন স্বপন, ঢাকা উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক, যুগ্ম-আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার,কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবিরা সুলতানা মুন্নি প্রমুখ।
এদিকে গত কয়েক মাসের মধ্যে বিএনপির আরও বেশ কয়েক জন শীর্ষ নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর কারারুদ্ধ আছেন। তারা হলেন: ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম মজনু, ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন, যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থী শেখ রবিউল আলম রবি, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না প্রমুখ।
বাছবিচারহীনভাবে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে: এদিকে বাছবিচারহীনভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল রবিবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাতীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল ইউনিয়ন পর্যন্ত গ্রেফতারের যে হিড়িক চলছে, সেটি ভাষায় বলা যাবে না। বিএনপির আন্দোলনকে নস্যাৎ করে ভিন্ন দিকে নিতেই ক্ষমতাসীনরা বিভিন্ন স্থানে, গাড়িতে-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করছে। তা না হলে, ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে হঠাৎ দুটি ট্রাক এলো কোত্থেকে? এটা তো তাদেরই পরিকল্পিত। তাদের পুলিশ-প্রশাসন দিয়েই করা হয়েছে। তারা রাষ্ট্রশক্তি, পুলিশ-র্যাব দিয়ে যৌথভাবে বিএনপির মহাসমাবেশে আক্রমণ করেছে। এখন তারাই মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। আর ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা কোথায়? আসলে তারা টিক্কা খান ও নিয়াজি সাহেবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
রিজভী আরও বলেন, সরকারের পতনের লক্ষ্যে বিএনপির এক দফা দাবির প্রতি দেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিচ্ছেন। সারা দেশে বিএনপির অবরোধ শান্তিপূর্ণভাবে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ পালন করছে। দেশের জনগণ দাবি আদায়ে হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছে। আন্দোলন দমানোর জন্য সরকারের কোনো কৌশলই সফল হবে না। বিএনপির নেতৃত্বকেও দুর্বল করা যাবে না। কারাগারের বাইরে থাকা বিএনপির সর্বশেষ ব্যক্তিটি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবে। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
উৎস: দৈনিক ইত্তেফাক