চট্টগ্রামে মহাসমাবেশকে ঘিরে উৎফুল্ল বিএনপি

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মী হত্যা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’র মুক্তি এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে ১২ অক্টোবর থেকে সারা দেশে বিভাগীয় গণ-সমাবেশ অনুষ্ঠানের সিন্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তারই আলোকে ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিভাগীয় সমাবেশের মধ্য দিয়ে আন্দোলনকে বেগবান ও গতিশীল করার নতুন মিশন শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি। সরকার পতনের চলমান আন্দোলনে একদফা দাবি আদায়ের লক্ষে পরবর্তী সমাবেশগুলো যথাক্রমে ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকার সমাবেশের মধ্য দিয়ে সারাদেশের মহাসমাবেশ কর্মসূচী শেষ করে নতুন কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামার কৌশলে রয়েছে বলে দলটির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহাসমাবেশ সফল করতে কেন্দ্র থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজানকে দলনেতা এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমকে সমন্বয়কারী করা হয়েছে। এতে জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং সাবেক এমপিদেরকেও সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। কর্মসূচী ঘোষণার পর থেকে সমাবেশ আয়োজক কমিটি এবং দলের মূল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড, থানা, মহানগর, উপজেলা, জেলার দায়িত্বশীলদের উদ্যোগে দিনরাত প্রস্তুতি সভা, আলোচনা সভা, লিফলেট বিতরণ এবং পোস্টারিংসহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে দলটি। চট্টগ্রামের মহাসমাবেশে কয়েক লাখ লোক সমাগমের প্রস্তুতি রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিভাগীয় সমাবেশ হলেও মূলত চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওপর নির্ভর করছে এর সফলতা ব্যর্থতা। চট্টগ্রাম নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ভেনু পলোগ্রাউন্ড ময়দানে সমাবেশ করার জন্য দলটিকে অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। এর আগে ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারী এ পলোগ্রাউন্ড ময়দানে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছিলেন। সে মহাসমাবেশ চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বহত্তম সমাবেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। তাই এবারের খালেদাবিহীন পলোগ্রাউন্ডের বিশাল ময়দান পরিপূর্ণ করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখছেন নেতারা। আর সে কারণেই কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতে দলটি নগরীর কাজির দেউড়ী মোড় কিংবা লালদীঘি জেলা পরিষদ চত্ত¡রে মহাসমাবেশটি করতে চেয়েছিলো দলটি। কিন্তু প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় শেষ পর্যন্ত পলোগ্রাউন্ড মাঠেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপি’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহাসমাবেশ।

বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগরের পাশাপাশি বিভাগের আওতাধীন সাংগঠনিক ১০ জেলায়ও একাধিক প্রস্তুতি সভা করেছে দলটি। সর্বোচ্চ শান্তিপূর্ণ ও দৃষ্টি নন্দনভাবে এ সমাবেশ করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি। সমাবেশের দলনেতা মোহাম্মদ শাহজাহান চট্টগ্রামে অবস্থান করে কার্যক্রম মনিটরিং করছেন। সেই সাথে প্রধান উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথমদিকের প্রস্তুতি সভায় অংশগ্রহণ করে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে করণীয় পরিষ্কার করে তুলে ধরেছেন। প্রধান উপদেষ্টা রবিবার (৯ অক্টোবর) চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেই দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেছেন। প্রতিটি সংসদীয় আসনে সাবেক এমপি’রা মনিটরিং কাজ তদারকি করছেন।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও সভাপতিত্ব কে করবেন তা জানা যায়নি। মহাসমাবেশের কেন্দ্রীয় টিমের প্রধান মোহাম্মদ শাহাজাহান বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন। তাছাড়া সমাবেশে কারা কারা বক্তব্য রাখার সুযোগ পাবেন সে বিষয়টিও চূড়ান্ত করা হবে। তবে সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহাসমাবেশ আয়োজক কমিটির প্রধান দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পন্ন। কোনো বাধা বিপত্তি আমাদের সমাবেশকে থামাতে পারবেনা। মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। বিএনপি’র সাংগঠনিক মজবুত ভিত্তি ও জনসম্পৃক্ততার কারণে সাধারণ মানুষ অধীর আগ্রহে এ সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। এটি দেশের বৃহত্তম সমাবেশগুলোর মধ্যে একটি হবে বলে তিনি দাবি করেন। চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের নতুন এ ঢেউ ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে, এমনটাই মনে করেন বিএনপির এ নেতা।

প্রস্তুতি সভা দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য কিন্তু সাধারণ জনগণকে সমাবেশমুখী করতে কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে বিএনপি’র প্রভাবশালী এ নেতা বলেন, বিভিন্নস্থানে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে, পোস্টারিংতো আছেই। যদিও ছিড়ে ফেলার ভয়ে একযোগে সব পোস্টার সাঁটানো হয়নি। তবে সমাবেশের একদিন আগে পুরো চট্টগ্রাম নগরী ব্যানার-পোস্টারের শহরে রূপ নিবে বলে তিনি দাবি করেন। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।

কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ইতোমধ্যে বিভাগের আওতাধীন সকল জেলায় প্রস্তুতি সভা, পোস্টারিং, লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। জনগণের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। শান্তিপূর্ণ এ সমাবেশ সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচীর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক ডাঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু করার প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। কিন্তু তার আগে সকাল থেকেই সমাবেশস্থল লোকে লোকারণ্য হবে। পথে পথে বাঁধা বিপত্তির কোনো শঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পেটুয়া বাহিনী নির্ভর এ সরকারের আমলে শঙ্কামুক্ত রাজনৈতিক কর্মসূচী আশা করা মানে বোকার স্বর্গে বাস করা। ফ্যাসিবাদি সরকার জনগণের কোনো দাবি দাওয়া তথা আন্দোলনকেই সহ্য করতে নারাজ। জিয়াউর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড ময়দানে একাধিক সমাবেশ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। সুতরাং এ ময়দান কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠবে ইনশাল্লাহ।

মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর বলেন, বাধা দিয়ে আন্দোলন দমানো যায় না, যাবেও না। আমরা কেন্দ্র ঘোষিত সকল কর্মসূচী পালন করেছি, মহাসমাবেশতো বিশাল আয়োজন। বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে মহাসমাবেশে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে আসা গাড়ী বহরকে কোনোরূপ বাধার মুখে পড়তে হলে এর পরিণাম শুভ হবে না বলে তিনি দাবি করেন। নিজেদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ কিংবা গোলযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি শান্তিপ্রিয় সুশৃঙ্খল একটি দল। এখানে চেইন অব কমান্ড আছে। সুতরাং সেরকম কিছু অতীতেও হয়নি, এবারও হবে না ইনশাল্লাহ।

এদিকে মহাসমাবেশকে সফল করতে বেশ কয়েকটি উপ-কমিটিও করা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো প্রচার উপ-কমিটি, দাপ্তরিক উপ-কমিটি, অভ্যর্থনা উপ-কমিটি, আপ্যায়ন উপ-কমিটি, শৃঙ্খলা উপ-কমিটি। কমিটিগুলো তাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করে মহাসমাবেশ সফল করতে কাজ করছেন। গতকাল সোমবার (১০ অক্টোবর) বিকালে নগরীর হালিশহর এলাকায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান প্রস্তুতি সভায় অংশ নিয়ে মহাসমাবেশকে সফল করার জন্য দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রেখেছেন। তাছাড়া এদিন নগরীর আরও কয়েকটি থানায় সর্বশেষ প্রস্তুতি সভা করে করণীয় ঠিক করেছে দলটি।

আরও পড়ুন