সাড়ে পাঁচ মাসেও মামলা রেকর্ড করেনি ওসি, নিরাপত্তাহীণতায় পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী

কক্সবাজার শহরের উত্তর রুমালিয়ার ছড়ার বাসিন্দা এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী দিল নেওয়াজ বেগমের কাছ চাঁদাদাবী, হত্যার হুমকিসহ বিভিন্ন অভিযোগে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি এজাহার জমা দেন। গত প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস পুলিশের কাছে বহুবার ধর্না দিয়েছেন এই নারী। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। ঘটনার সাড়ে পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও সদর মডেল থানার ওসি মনির উল গীয়াস অজ্ঞাত কারণে মামলা নেয়নি। এমনকি ওই নারীকে আইনগত কোন সহায়তাও করেননি।

পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী দিল নেওয়াজ বেগম আইনী প্রতিকার না পাওয়ায় তার অসহায়ত্ব আর নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন।
দিল নেওয়াজ বেগম জানিয়েছেন, কক্সবাজার শহরের রুমানিয়ারছড়া এলাকার আব্দুস সবুর সওদাগর আমার পিতা। আমার স্বামী পুলিশ ইন্সপেক্টর আবুল মনছুর। আমরা ৪ বোন ৩ ভাই। আমার পিতা গত ২৭/১০/২১ইং সাইফুল কমিউনিটি সেন্টারের পাশে ৮ শতাংশ জমি আমাকে রেজিঃ দলিল করে দেন এবং আমি উহা খারিজ করাই। আমার নামে খতিয়ানভুক্ত হয় এবং খাজনা পরিশোধ করি। আমার পিতা এখনও জীবিত আছেন। পিতা তার জীবদ্দশায় সুস্থ্য থাকা অবস্থায়, যে কাউকে তার সমুদয় সম্পত্তি লিখে দিতে পারে। সেই হিসেবে যেকোন সন্তানকেও সমুদয় সম্পত্তি লিখে দিতে পারে। সুতরাং মেয়েকেও লিখে দিতে পারবে। আমার বাবাও তার জীবদ্দশায় সুস্থ্য থাকা অবস্থায় আমাকে জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। এতে আমি ছাড়া আর কেউ উক্ত সম্পদের হকদার হবে না, এটা দেশের প্রচলিত আইন এবং ইসলামী শরিয়া আইন।

তিনি বলেন, আমার টাকার প্রয়োজন হওয়ায় উক্ত জমি বিক্রি করতে গেলে বড় ভাই আবুল মনসুর লুদু বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে। এমনকি ওই জমি নিতে আগ্রহী ক্রেতাদের বিভিন্ন সময়ে হুমকী দেয়। জমিটি কেউ ক্রয় করলে তাদেরকে খুন করবে এবং জমি বিক্রি করতে হলে লুদুকে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে জানায়।

পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী দিল নেওয়াজ বেগম বলেন, বিষয়টি আমার পরিবারের মামা, চাচা, চাচাতো ভাইদেরসহ সকল নিকটাত্মীয়দের জানিয়েছি। কিন্তু লুদু কারও কথা না মেনে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কার্যক্রম অব্যাহত রাখে এবং আমার স্বামী মোহাম্মদ আবুল মনসুরকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। অথচ আমার পিতা আমাকে জমি রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার বিষয়ে আমার অন্য ভাই বোনরা কোন আপত্তি করেননি।

দিল নেওয়াজ বেগম বলেন, আবুল মনছুর লুদুর অত্যাচার, হুমকি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে গত ২৭ মার্চ আমার শ্বাশুড়ীসহ কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ওসি মনিরুল গিয়াসের নিকট এ ব্যাপারে একটি এজাহার দায়ের করি। তিনি বার বার বলেছেন, একটু ধৈর্য ধরুন, আমি অবশ্যই আপনাকে একটা ফলাফল দিব। এভাবেই তিনি কালক্ষেপন করেছেন সাড়ে পাঁচ মাস।
দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও কোন আইনানুগ সহায়তা পাইনি পুলিশের কাছে। আমার স্বামীও একজন পুলিশ অফিসার। পুলিশ পরিবারের সদস্য হয়েও দীর্ঘ ৫মাস ১৫দিন ওসি সাহেবের কাছে আইনানুগ সহায়তা না পাওয়ায় আমার জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। এখন আমি চরম নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছি। আমাকে যেকোন সময় হত্যাসহ যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা সংগঠিত করতে পারে আবুল মনছুর লুদু।

দিল নেওয়াজ বেগম বলেন, আমার স্বামী এবিষয়ে ওসি সাহেবের সাথে বেশ কয়েকবার কথা বলেন এবং মোবাইলে মেসেজ দেন। আমার স্বামী তখন ওসি সাহেবকে এটাও বলেন যে, যদি আমি মিথ্যা মামলা দিয়ে থাকি তবে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হউক।তথাপিও ওসি সাহেব দীর্ঘ ১৬৫ দিন অতিবাহিত হলেও কোন অজ্ঞাত কারনে উক্ত মামলাটি রুজু করেননি কিংবা কোন আইনগত সহায়তা করেননি।

তিনি আরও বলেন, লূদু একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী, জমি দখল, খুন, ডাকাতি সহ প্রায় ২০টির অধিক মামলা আছে। সে কক্সবাজার শহরের সাদ্দাম বাহিনীর গডফাদার। এতদিন সে অন্য মানুষের জমি দখল করাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। এখন নিজের সহোদর বোনের জমি বিক্রি করতে না দিয়া চাঁদা আদায়ের চেষ্টায় লিপ্ত। এব্যাপারে আমি পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সহায়তা কামনা করছি।

এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মুনীর উল গীয়াস বলেন, চাঁদাবাজি ধারায় মামলা নিতে হলে এসপি স্যারের বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন হয়। আমি ছুটিতে ছিলাম। ছুটিতে যাওয়ার আগে ইন্সপেক্টর তদন্তকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। আর ফিরে এসে নানা কাজের ভিড়ে বিষয়টা মনে পড়েনি।

এদিকে, একজন পুলিশ কর্মকর্তা স্ত্রীর দায়ের করা মামলা রেকর্ড না করা ও দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাস মনে না থাকার বিষয়টি রহস্যজনক এবং অপেশাদারিত্বের শামিল বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা কিংবা কোন অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ সেটি গ্রহণ করবে কি না তা নির্ভর করে পুলিশের ইচ্ছে কিংবা অনিচ্ছার ওপর। আরও অভিযোগ রয়েছে, ব্যক্তি বিশেষের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতার উপর নির্ভর করে পুলিশের আচরণ।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জেলার প্রায় প্রতিটি থানায় পুলিশের উপর রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্বারা বেশিরভাগ সময় প্রভাবিত হয় পুলিশ। ফলে মামলা গ্রহণ করা কিংবা না করার বিষয়টিও অপরাধের ধরন বিবেচনা করে করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন