পুকুরে বিলীনের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে জামিজুরী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার জামিজুরী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের বেহাল অবস্থা। অযত্ন-অবহেলায় বিবর্ণ হয়ে পড়া ও ঝোপজঙ্গলে ঘেরা শহীদ মিনারটি দেখার মতো যেনো কেউই নেই। শহীদ মিনার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হলেও ফান্ড না থাকায় শহীদ মিনারটি সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ভাষা শহীদের স্মরণে এবং শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোর জন্য এটি নির্মাণ করা হলেও শহীদ মিনারের যথাযথ মর্যাদা, পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্য রক্ষার বিষয়টি হানি হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, দোহাজারী পৌরসভার জামিজুরী গ্রামে ভারত সরকারের আর্থিক অনুদানে নির্মিত তিনতলা বিশিষ্ট বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী একাডেমিক ভবনের পশ্চিম পাশে অবস্থিত শহীদ মিনারের মূল স্তম্ভের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। নিচের মাটি ধসে গিয়ে অনেকটা পুকুরের দিকে হেলে পড়েছে মিনারটি। যেকোনো সময় শহীদ মিনারের মূল স্তম্ভ ভেঙে পুকুরে পড়তে পারে। তাই দ্রুত সংস্কার কিংবা নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এব্যাপারে চন্দনাইশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলী হিরু বলেন, “মাতৃভাষার জন্য শহীদ হওয়া একমাত্র জাতি আমরা। এ সব শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত শহীদ মিনারের এমন শোচনীয় অবস্থা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। শহীদ মিনার আমাদের গর্ব। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের গভীরতম আবেগ, অনুভূতি। স্বাভাবিকভাবেই এই শহীদ মিনার আমাদের কাছে বড়ই স্পর্শকাতর। এর সামান্যতম অবমাননা, অবহেলা আমাদের ক্ষুব্ধ করে, আমরা ব্যথিত হই। ভাষা শহীদদের স্মৃতি ও আত্মত্যাগের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ পাড়া-মহল্লায় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। শহীদ মিনার যে ভাবে অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে এতে তরুন প্রজন্মের কাছে এটির গুরুত্ব কমে যাবে। শহীদ মিনারের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এবিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “জরাজীর্ণ শহীদ মিনারটি সংস্কার করার জন্য বেশ কয়েকবার প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। ফান্ড না থাকায় সংস্কার করা সম্ভব হয়নি।”
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি বিষ্ণুযশা চক্রবর্তী বলেন, “ভারত সরকারের আর্থিক অনুদানে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী একাডেমিক ভবন নির্মিত হলেও বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারি কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। আর্থিক অস্বচ্ছলতার দরুণ ফান্ড না থাকায় বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।” এব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও দোহাজারী পৌরসভার প্রশাসকের শুভ দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এব্যাপারে দোহাজারী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. নাঈম উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এই সংক্রান্ত কোন আবেদন আমরা পাইনি। আবেদন পেলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিষয়টি পৌর প্রশাসক বরাবরে উপস্থাপন করে তাঁর নির্দেশনার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”